২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু

ছাত্রসংগঠনগুলোর কেউই মনোনয়ন নেয়নি

-

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগঠন (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। অনেক উৎসাহের মধ্য দিয়ে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত ছাত্রসংগঠনগুলোর কেউই মনোনয়ন সংগ্রহ করেনি। তবে প্রথম দিনে স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মাত্র ২৮ জন শিক্ষার্থী। তবে বিশ^বিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর কেউ এখনো পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রথমদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল থাকলেও মোট ৩০ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে হলের হিসেবে মাত্র ১২ হলের শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। এদের মধ্যে ছেলেদের ৯টি এবং মেয়েদের তিনটি হলে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা। আর ছয়টি হলের শিক্ষার্থীরা এখনো কোনো মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে পাঁচটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে দু’টি, মাস্টার দা’ সূর্য সেন হলে পাঁচটি, শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হলে পাঁচটি, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে চারটি, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে দু’টি, বিজয় একাত্তর হলে একটি, শামসুন্নাহার হলে দু’টি, সুফিয়া কামাল হলে একটি, অমর একুশে হলে একটি, জগন্নাথ হলে একটি এবং রোকেয়া হল একটি। অন্য দিকে ফজলুল হক মুসলিম হল, স্যার এ এফ রহমান হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, কবি জসীম উদ্দীন হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, কুয়েত মৈত্রী হল থেকে কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেনি।
আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিনামূল্যে মনোনয়ন সংগ্রহ করা যাবে। মাত্র একটি পদের বেশি কেউ মনোনয়নপত্র নিতে পারবে না। বিশ^বিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষের অফিস থেকে এই মনোনয়নপত্র নেয়া যাবে।
তফসিল অনুযায়ী, ১১ মার্চ সকাল ৮টা হতে অপরাহ্ন ২টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট হলের ভোটার (আবাসিক ও অনাবাসিক) তার নিজ হলের ভোটকেন্দ্রে বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট প্রদান করবে। ভোট গ্রহণের পর ভোট গণনা শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, ছাত্রদলের দেয়া দাবি না মানলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে আসতে পারেন তারা। সেজন্য ছাত্রদলের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর ছাত্রলীগের প্যানেল চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে এখনো তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। বাম সংগঠনগুলোও এখনো মনোনয়ন সংগ্রহ করেনি।
এদিকে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ‘হলে ভোটকেন্দ্র’ নিয়ে যখন ছাত্রলীগ এবং বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল আলোচনা চলছে তখন বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন রুটের বাস কমিটির নেতারা ছাত্রলীগের সাথে কণ্ঠ মিলিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে বাস কমিটির নেতাদের সংগঠন ‘সম্মিলিত বাস রুট, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়’ তারা ‘হলে ভোটকেন্দ্র’ করার পক্ষে মত দেন। কমিটির নেতারা মনে করছেন, হলগুলোতে নির্ভয়ে-নিঃশঙ্কচিত্তে ও আনন্দময়ভাবে ভোটদানের সার্বিক পরিবেশ রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফাল্গুনী বাস কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ বাপ্পী। তিনি বলেন, অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা হলের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত। সেখানে আমাদের যাতায়াত অবাধ। ডাকসু নির্বাচনের জন্য বর্তমানে হলে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় আছে। কিন্তু নির্বাচনকে ঘিরে এখানে আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃত্রিম বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে আর কোনো পানি ঘোলা হোক, তা আমরা চাই না। এর আগে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রভিত্তিক (টিএসসি) সংগঠনগুলোর নেতারাও ছাত্রলীগের সাথে একমত হয়ে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ‘হলে’ করার দাবি জানান। এ সময় বাস কমিটির নেতারা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রত্যেক রুটে বাস বৃদ্ধি, নতুন ডাবল ডেকার (দোতলা) বাস, বাসের রুট বৃদ্ধি, বিআরটিসির পক্ষ থেকে দক্ষ চালক ও হেলপার নিয়োগ ইত্যাদি। নির্বাচনে বিভিন্ন সংগঠন ও জোটের ইশতেহারে এসব দাবির অন্তর্ভুক্তি চান তারা।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে বাস কমিটির শীর্ষ নেতারা তাদের সাথে কোনো আলোচনা করেননি বলে জানান একাধিক শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে সম্মিলিত বাস রুটের অন্যতম নেতা ও ক্ষণিকা বাসের সভাপতি মো: রায়হান বলেন, বাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সাধারণ জরিপের ভিত্তিতে পাওয়া বক্তব্যই তারা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে সম্মিলিত বাস রুটের সমন্বয়ক রাকিব হাওলাদার বলেন, ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠন বা জোটের পক্ষ থেকে তাদের এখনো ডাকা হয়নি। ছাত্রলীগের নেতারা তাদের সাথে কয়েক দফা আলোচনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের যেকোনো সংগঠন বা জোটের সাথে ডাকসু নির্বাচনে যেতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন।
মধুতে ছাত্রদল নেতাদের আড্ডা- এদিকে গতকালও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিনে জমায়েত হন। তারা সেখানে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে গতকাল মধুর ক্যান্টিনে আসেন কেন্দ্রীয় নেতা আকরামুল হাসান, আলমগীর হাসান সোহান, এজমল হোসেন পাইলট, ইখতিয়ার রহমান কবির, আবদুল ওহাব, নাজমুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, আসাদুজ্জামান আসাদ, মিঞা মোহাম্মদ রাসেল, আবদুর রহিম হাওলাদার সেতু, বায়েজিদ আরেফিন, রাজিব আহসান পাপ্পু, মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, পার্থ দেব মণ্ডল, ঢাবি শাখার আল মেহেদী তালুকদার, আবুল বাসার সিদ্দিক, হাফিজুর রহমান, নাসির উদ্দিন, মমিনুল ইসলাম জিসান প্রমুখ। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আলমগীর হাসান সোহান বলেন, ডাকসু নির্বাচন নির্বিঘœ ও সুষ্ঠু করতে আমরা ছাত্রদলের পক্ষে ঢাবি কর্তৃপক্ষকে সাত দফা দাবি জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো দাবিই গ্রাহ্য করেনি। দাবি মানলে আমরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনা করব।

 


আরো সংবাদ



premium cement