১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না ঐক্যফ্রন্ট : ফখরুল

ভোট ডাকাতির সেরা পুরস্কার পাবেন হাসিনা : আ স ম রব ; নির্বাচনে না গেলে ভোট ডাকাত প্রমাণ করা যেত না : বঙ্গবীর
নির্বাচনের দিন নিহত বিএনপি নেতা তোজাম্মেল হোসেনের স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল : নয়া দিগন্ত -

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র লুট হওয়ায় মানুষ আর আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করে না তারা দেশের মানুষের গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না ঐক্যফ্রন্ট। তিনি উল্লেখ করেন, অবিলম্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ফলাফল বাতিল করে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। মানুষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে ভোট চুরি ও দিনে ডাকাতির ক্ষোভ এবং খুন, গুম, ধর্ষণের শোককে শক্তিতে পরিণত করে আন্দোলনমুখর হয়ে উঠেছে। এ আন্দোলন দুর্বার তরঙ্গে রূপ নেবে। আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নামধারী এই গণশত্রুকে সরিয়ে দিতে হবে। অন্য দিকে জেএসডির সভাপতি ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা আ স ম আবদুর রব বলেছেন, সারা বিশ্বে যদি ভোট ডাকাতির সেরা পুরস্কার দেয়া হয়, তবে সেটি পাবেন শেখ হাসিনা। আর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, শেখ হাসিনার ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন সারা বিশ্বে সেরা ডাকাতির নির্বাচন হয়ে কলঙ্কের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যদি আমরা নির্বাচনে না যেতাম তাহলে হাসিনা যে বিশ্বের সেরা ভোট ডাকাত তা প্রমাণ করা যেত না।
গতকাল সোমবার দুপুরে লালমনিরহাটের রাজপুর ইউনিয়নের খলাইঘাটে ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের হাতে নিহত ইউনিয়ন বিএনপির পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক তোজাম্মেল হোসেন স্মরণে প্রতিবাদ সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র লুট হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যে দলটি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। যে দলটির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তারাই এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে লুট করেছে। ডাকাতি করেছে। আর খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তাকে সাজানো মামলায় কারাগারে নেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ইউএনও, ডিসি, সেনাবাহিনী নিয়োগ করে তাদেরকে দিয়ে ভোটের রাতে সিল মেরে রাখে এবং ভোটের দিন আওয়ামী লীগের গুণ্ডাবাহিনী প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতি করেছে। এর মাধ্যমে তারা গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। জনগণের সেই মনের ভাষা আর মুখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা আর আওয়ামী লীগের নেই। কখনো হবেও না।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, যতই জুলুম হোক না কেন ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। জনগণের ঐক্য ও জাতীয় ঐক্য একত্রিত হয়ে এই আওয়ামী লীগ নামের এই দানব সরকারকে উৎখাত করা হবে। আমাদের আন্দোলন গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার আন্দোলন। আমাদের আন্দোলন খালেদা জিয়াকে মুক্তির আন্দোলন। আমাদের আন্দোলন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। আমাদের আন্দোলন খুন, গুম, ধর্ষণের শিকার হওয়া, মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী ও নির্যাতিত মানুষকে মুক্তির আন্দোলন। আমাদের আন্দোলন দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনে একটি সমৃদ্ধশালী সবার জন্য বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন। তাই অবিলম্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ফলাফল বাতিল করে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে।
খুন হওয়া বিএনপি নেতা তোজাম্মেল হোসেনকে গণতন্ত্রের জন্য শহীদ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক গুণ্ডারা রাজপুরের তোজাম্মেল হককে হত্যা করেছে। তোজাম্মেল গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছেন। এমন আরো ২২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য নোয়াখালীতে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছে। আমাদের যুবদলের এক নেতার স্ত্রীকে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য ধর্ষণ করেছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পুলিশ ও প্রশাসনকে মানুষের প্রতিপক্ষ বানিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ভোটের আগে জাতীয় ঐক্য তৈরি করেছিলাম। সে সময় মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাসের তরঙ্গ তৈরি হয়েছিল। মানুষ ভেবেছিল ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগের ভয়াবহ শাসন থেকে মুক্তি পাবেন। কিন্তু মানুষ সেটা পারেননি। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। তারা নিজেরাই নিজেদের জিতিয়ে নিয়ে এখন উৎসব করছে। গত ১০ বছরে দেশকে একটি বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের লোকজন বিভিন্ন লোকের কাছে টাকা দাবি করছেন, টাকা না দিলে তাদের গায়েবি মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। খুন, গুম, ধর্ষণের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা দুর্নীতি দূর করতে পারবেন না দাবি করে স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী আ স ম আবদুর রব বলেন, শেখ হাসিনা ভোট ডাকাতির জন্য প্রশাসন এবং তার দলীয় গুণ্ডাদের ঘুষ দিয়েছেন। সে কারণ্ডেই সরকারি কর্মকর্তাদের বলছেন আপনাদের অনেক দিয়েছি। আর দুর্নীতি করা যাবে না। যে ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় যায়, তিনি কখনো দুর্নীতি দূর করতে পারেন না। সে কারণে শেখ হাসিনাও দুর্নীতি দূর করতে পারবেন না।
শেখ হাসিনা বিশ্বে ভোট ডাকাতির সেরা পুরস্কার পাবেন উল্লেখ করে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ভোট হয়নি। ২৯ তারিখ রাতে ভোট চুরি হয়েছে। ৩০ তারিখ দিনেদুপুরে ভোট ডাকাতি হয়েছে। সারা বিশ্বে যদি ভোট ডাকাতির সেরা পুরস্কার দেয়া হয়, তবে সেটি পাবেন শেখ হাসিনা। ধানের শীষে ভোট দিতে যাওয়ার অপরাধেই তোজাম্মেলকে খুন করা হয়েছে। তোজাম্মেল হত্যার বিচার করতে হবে। দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। বাংলার মটিতে এসব হত্যার বিচার হবেই।
সম্মিলিতভাবে ভোট ডাকাতদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে রব বলেন, বাংলাদেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিত না হলে কেউ শান্তিতে থাকতে পারবেন না। যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা কখনো শেষ হবে না। রব বলেন, এককভাবে এই ভোট ডাকাতদের মোকাবেলা করা যাবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্রের স্বার্থে মানব সভ্যতার স্বার্থে, আমাদের আগামী প্রজন্মের স্বার্থে এদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা লড়ব। মাঠ থেকে কখনো সরব না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নির্বাচনে না গেলে শেষ হাসিনা যে বিশ্বের সেরা ভোট ডাকাত তা প্রমাণ করা যেত না উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছি। এখনো আমি শেখ হাসিনার বাবা বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে পারি। কিন্তু তার মেয়ে ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন করেছেন, তা সারা বিশ্বে সেরা ডাকাতির নির্বাচন হয়ে কলঙ্কের ইতিহাস তৈরি করেছে। যদি আমরা নির্বাচনে না যেতাম তাহলে হাসিনা যে বিশ্বের সেরা ভোট ডাকাত তা প্রমাণ করা যেত না। এখন সারা বিশ্বে এটি প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশ ভোজ সভা করার মাধ্যমে সেটার দলিল দিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের মহা জয় নয় মহা পরাজয় হয়েছে।
আন্দোলনে জনগণ বিজয়ী হবে উল্লেখ করে বঙ্গবীর বলেন, ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনে তোজাম্মেল হোসেন খুন হয়েছেন। এ সরকার ভোটের রাতে চুরি করেছে। আর দিনে করেছে ডাকাতি। শেখ হাসিনার সরকার রাতে চোর, দিনে ডাকাত। আমরা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছি। শেখ হাসিনার পুলিশ র্যাব বিজিবি তাদের থেকে বড় নয়। এখন আওয়ামী লীগ উৎসব করছে। আন্দোলন ছাড়া কোনো উপায় নেই। এ সময় রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন, সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম মিজু, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রেজেকা সুলতানা ফেন্সি, জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সেক্রেটারি রইচ আহমেদ, জেলা যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রোকন উদ্দিন বাবলু, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন লেমন, জেলা যুবদল সভাপতি জাহিদুল ইসলাম খোকন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, জেএসডির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলা সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি, সেক্রেটারি ডা: সাদেক আলী, হারাগাছ পৌরসভা সভাপতি শরিফুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় এবং রংপুর ও লালমনিরহাটের নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবাদ সমাবেশের আগে মির্জা ফখলরুল ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে নিহত তোজাম্মেলন হোসেনের কবরে ফাতেহা পাঠ শেষে মুনাজাতে অংশ নেন। পরে তারা নিহত তোজাম্মেল হোসেন ও আহতদের পরিবারের সাথে দেখা করে তাদের সমবেদনা জানান এবং আর্থিক অনুদান দেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন লালমনিরহাট সদরের রাজপুর ইউনিয়নের পাগলাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ভোট দিতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন মোফার নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপির পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক তোজাম্মেল হোসেনকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় আরো ৯ জন আহত হন। এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান মোফাসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করেন নিহতের ছেলে মোস্তফা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
দেশে আরেকটি ডামি নির্বাচন হচ্ছে : রিজভী ‘আমার আর থাহার কোন জাগা নাইরে বাজান!’ তামিমের দ্বিতীয় ফিফটি, বড় সংগ্রহের ভিত গড়ছে বাংলাদেশ বাংলাদেশের জন্য মনোনীত মার্কিন বিশেষ রাষ্ট্রদূত মিল আগে যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন বান্দরবানে কেএনএফের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন বম উজিরপুরে বিশ্বনবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল তামিমের ব্যাটে বাংলাদেশের উড়ন্ত শুরু নাটোরে এক প্রার্থীর সমর্থককে মারপিট করায় অপর প্রার্থী গ্রেফতার বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পেয়ে অবসরে নিউজিল্যান্ডের ওপেনার কক্সবাজারে ৩ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ সরকারের জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

সকল