২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যেও সরকারি নীতিমালায় বৈষম্য

শিক্ষায় বৈষম্য-২
-

 

বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের সাথে সরকারি কলেজের শিক্ষকদের বেতনভাতায় যেমন তীব্র বৈষম্য রয়েছে তেমনি বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যেও। ২০১৮ সালের বেসরকারি স্কুল-কলেজ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় এ বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত একজন প্রভাষক আট বছরের মাথায় সহকারী অধ্যাপক বা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে পদোন্নতি পাবেন। প্রভাষকের বেতন নবম গ্রেডে ২২ হাজার টাকা। আর সহকারী অধ্যাপকের বেতন ষষ্ঠ গ্রেডে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা। এ হিসেবে একজন প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক হওয়ার সাথে সাথে তার বেতন এক লাফে তিন গ্রেড বাড়ে। কিন্তু বেসরকারি কলেজের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান না। কারণ নিয়ম করা হয়েছে প্রতি সাতজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকের মধ্যে দুইজন সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। আনুপাতিক এ কোটার কারণে যেসব এমপিওভুক্ত শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন না তাদের প্রতি নীতিমালায় চরম বৈষম্য করা হয়েছে। যেমন নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব এমপিওভুক্ত শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পাবেন না তারা ১০ বছরের মাথায় অষ্টম গ্রেডে বেতন পাবেন। অষ্টম গ্রেডে উন্নীত হলে তাদের বেতন বাড়বে মাত্র এক হাজার টাকা। এরপর আরো ছয় বছর চাকরি করার পরও যদি তারা সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি না পান তাহলে তখন তারা সপ্তম গ্রেডে বেতন পাবেন। অর্থাৎ ১৬ বছর চাকরি শেষে তারা সপ্তম গ্রেডে বেতন পাবেন। এরপর তাদের বেতন গ্রেড আর বাড়বে না। সপ্তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ হাজার টাকা।
ব্রাহ্মহ্মহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় অবস্থিত গোপীনাথপুর আলহাজ শাহ আলম কলেজের সহকারী অধ্যাপক কাজী আশরাফুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, একদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হলো আনুপাতিক নিয়মের মাধ্যমে। আরেক দিকে তাদের বঞ্চিত করা হলো বেতন না বাড়িয়ে। জ্যেষ্ঠতার কারণে আট বছরের মাথায় একজন সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে তার বেতন এক সাথে তিন ধাপ বাড়িয়ে ষষ্ঠ ধাপে নিয়ে আসা হলো। আর যিনি পদোন্নতি পেলেন না তাকে ১০ বছর পর মাত্র এক ধাপ বেতন বাড়ানো হলো। তাও মাত্র এক হাজার টাকা। আর ১৬ বছরের মাথায় আরেক ধাপ বেতন বাড়ানোর নিয়ম করা হয়েছে এবং এটাই শেষ। অথচ উচিত ছিল যারা নীতিমালার কারণে পদোন্নতি পাবেন না তাদের বেতন ধাপও একই সাথে অর্থাৎ আট বছরের মাথায়ই সহকারী অধ্যাপকের সমান করা। পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ার কারণে তাদের যেখানে আরো সুবিধা বৃদ্ধি করার দরকার ছিল সেখানে তাদের ১০ বছরের মাথায় মাত্র এক ধাপ বেতন বৃদ্ধি করার নিয়ম করা হয়েছে। সেখানেও আবার নীতিমালায় বলা হয়েছে, চাকরি সন্তোষজনক বিবেচিত হলে তাদের এ বেতন ধাপ বাড়বে।
কাজী আশরাফুজ্জামান বলেন, ২০১৮-এর আগের নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্ত হওয়ার দুই বছরের মাথায় একজন প্রভাষক পরের ধাপে বেতন পেতেন। কিন্তু নতুন নীতিমালায় সেটাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারি এ নীতিমালায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে এ ধরনের বেতন বৈষম্যের কারণে চরম হতাশ আর ক্ষুব্ধ অনেক শিক্ষক।
শিক্ষকরা জানান, দেখা যায় হয়তো জ্যেষ্ঠতার কারণে একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। কিন্তু তার চেয়ে অনেক যোগ্য উচ্চশিক্ষিত একজন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক হতে পারলেন না নীতিমালার সীমাবদ্ধতার কারণে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের অনেক যোগ্য উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক বেতনও অনেক কম পান সহকারী অধ্যাপকের তুলনায়।
কাজী আশরাফুজ্জামান বলেন, এ ধরনের বৈষম্য খুবই দুঃখজনক। এটা মানা যায় না। উচিত তাদের পদোন্নতি দিতে না পারলেও অন্তত বেতনের সমতা বিধান করা। এ ধরনের বৈষম্যের কারণে বঞ্চিত শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement