২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাঁচ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি বৈষম্য বিলোপ আইন

-

বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নে আইন কমিশন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠালেও তা পাঁচ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। এ সংক্রান্ত আইন না থাকায় দেশের প্রায় ৬০ লাখ অনগ্রসর নাগরিক তথা দলিত জনগোষ্ঠী আবাসন, ভূমি, শিক্ষাসহ নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেমার (সুইপার, পরিচ্ছন্নতাকর্মী), বাল্মিকী (পরিচ্ছন্নতাকর্মী), কলু (ঘানিতে তেলবীজ থেকে তেল তৈরি), ঋষি (মুচি, চামড়া সংশ্লিষ্ট কাজ), বীন, মালা (চা বাগান শ্রমিক), মাদিগা সুইপার, চাবাগান শ্রমিক, ধোপা, নাপিত, বেদে, তাঁতি, হাজাম, মাঝি, কসাই, কায়পুত্র (শুকর পালনকারী), চাকালী, মাইহাল, লালবেগি (পরিচ্ছন্নতাকর্মী), রবিদাস (চা শ্রমিক ও চামড়া সংশ্লিষ্ট কাজ), বাগদি, বাওয়ালী, বাঁশফোর, (পরিচ্ছন্নকর্মী), ডোম (মৃতদেহ সৎকারকারী) উল্লেখযোগ্য।
অনগ্রসর নাগরিকের অধিকার সুরক্ষার সমান সুযোগ ও পূর্ণ অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে আইন কমিশন ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নে সরকারের কাছে সুপারিশ প্রেরণ করে। কমিশনের পাঠানো খসড়া সুপারিশে বলা হয়, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, শারীরিক, মানসিক ও লিঙ্গ প্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বৈষম্যমূলক কাজ বেআইনি। এসব কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এতে বৈষম্যমূলক অপরাধের সংজ্ঞা, দণ্ড, অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত প্রক্রিয়া, বৈষম্য বিলোপ আদালত প্রতিষ্ঠা ও বিচার প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়।
সুপারিশে বলা হয়, সরকার প্রতিটি জেলায় ‘বৈষম্য বিলোপ বিশেষ আদালত’ স্থাপন করবে। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিয়ে সরকার এই আদালতে বিচারক নিয়োগ করতে পারবে। প্রতিটি জেলার জেলা ও দায়রা জজ তার সাধারণ মামলা ছাড়াও এই আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বৈষম্যের শিকার যেকোনো ব্যক্তি প্রতিকার চেয়ে এ আদালতে মামলা করতে পারবেন। মামলার তারিখ থেকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হবে। আবার রায়ের বিরুদ্ধে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল করা যাবে। সুপারিশে আরো বলা হয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বৈষম্যমূলক মামলার তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করতে পারবে। কমিশন অনগ্রসর নাগরিক গোষ্ঠীকে মূলধারায় আনতে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারবে।
দণ্ড ও বিচার প্রক্রিয়ার সুপারিশে বলা হয়েছে, ধর্ম পালনের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং শিক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ এবং কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য প্রথমবার অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অন্যূন ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রতিবার এ ধরনের অপরাধের জন্য অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা অন্যূন ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য হবে। জনসমাবেশস্থল, সর্বজনীন উৎসব, নিজ ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রবেশ ও অংশগ্রহণে বাধা দিলেও একই দণ্ড প্রযোজ্য হবে। অবহেলিত গোষ্ঠীর কারো জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নাগরিক সেবা পেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে প্রথমবার অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পরবর্তী প্রতিবারের জন্য অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। লিঙ্গপ্রতিবন্ধী শিশুকে পরিবারে না রেখে কোনো গোষ্ঠীর কাছে দিলে, লিঙ্গপ্রতিবন্ধী হওয়া ও বাবার পরিচয় দিতে না পারার অজুহাতে শিশুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা না হলে বা নির্যাতন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিলে কিংবা লিঙ্গপ্রতিবন্ধীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার হতে এবং সম্পত্তি লাভে বাধা দেয়া হলে অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা অন্যূন ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে আইন কমিশনের সুপারিশে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেছেন, বৈষম্য বিলোপ আইন করার জন্য আইন কমিশন যে খসড়া পাঠিয়েছিল তার ওপর কাজ চলছে। এর কাজ এখনো বাকি রয়েছে। আগামী অধিবেশনে উত্থাপন করতে না পারলেও পরবর্তী অধিবেশনে উত্থাপন করা হতে পারে।
সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনেই বৈষম্যবিরোধ আইন উত্থাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement