পুলিশ দিয়ে নির্বাচনে কারচুপির নীলনকশা তৈরি হচ্ছে : ফখরুল

বর্তমান নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে চট্টগ্রামের বিভাগের ৩৬ সংসদীয় আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আসলে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায় কিনা সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরও পুলিশ একইভাবে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে এবং হয়রানি করছে। একইভাবে জামিনের জন্য যারা যাচ্ছেন এবং যারা জামিন পেয়েছেন তাদের জামিনকে বিলম্বিত করা হচ্ছে এবং তাদের জামিনে বের করছে না। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন যদি একটা সমতল ভূমি তৈরি না করে, পুলিশের এই গ্রেফতার ও নির্যাতন বন্ধ না করে, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ না করে তাহলে এই নির্বাচন জনগণের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।
পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দেখেছি অতীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে পুলিশ যে ভূমিকা পালন করেছে তা ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা আবারো খবর পাচ্ছি পুলিশকে দিয়ে ফের নির্বাচনে কারচুপি করার নীলনকশা তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, যে কর্মকর্তা পুলিশের সদর দফতরে বসে পরিকল্পনা করেছিলেন সেই একই পুলিশ কর্মকর্তা আবারো তিনি হেডকোয়ার্টারে বসে নীল নকশা তৈরি করছেন যে কিভাবে নির্বাচনকে সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষে নিয়ে আসতে হবে এবং কারচুপি করা যাবে। আমরা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে অবিলম্বে পুলিশ সদর দফতর থেকে বদলি করে দেয়া অথবা ক্লোজড করে দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, নির্বাচন কমিশন যাদের ওপর দায়িত্ব বর্তিয়েছে এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ করবার জন্য, নির্বাচনের জন্য একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবার জন্য এর কোনোটাই তারা (ইসি) করছেন না। আমি আশা করব এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বোধোদয় হবে। সাংবিধানিকভাবে যে দায়িত্ব তাদের রয়েছে, ক্ষমতা তাদের রয়েছে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তারা তাদের কাজ করবে।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হওয়ার দাবি আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে না। এই বিষয়গুলো পুরোপুরিভাবে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন নিজেই একটা অবস্থান নিয়েছেন যে তারা এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু করবেন না।
বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা কবে চূড়ান্ত হবে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শিগগিরই চূড়ান্ত হবে।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী-১ ও ফেনী-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের একসাথে সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা আড়াইটায়। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে শুরু হয় সিলেট ও কুমিল্লা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার। বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড এই সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
স্কাইপে বন্ধ থাকায় অন্য ভিডিও কল অ্যাপের মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এই সাক্ষাৎকারে যুক্ত হন।
চট্টগ্রাম বিভাগে আট জেলার ৩৬টি সংসদীয় আসন, কুমিল্লা বিভাগে তিনটি জেলার ২২টি আসন এবং সিলেট বিভাগে চারটি জেলার ১৯টি আসনের জন্য ছয় শতাধিক প্রার্থী এই সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়েছেন।
পার্লামেন্টারি বোর্ডে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আজ বুধবার ময়মনসিংহ, ফরিদপুর এবং ঢাকা বিভাগের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে।