নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল
অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনে ইসির সক্ষমতা দেখবে ইইউ- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
নির্বাচন কমিশন ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা হতে পারে। অন্য দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপে ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনের নেয়া পদপেগুলো পর্যালোচনা করবে বলে জানিয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরপরই ইইউ প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে ভোটের মাঠের চিত্র অবলোকন করবে। ইসির আয়োজন সন্তোষজনক মনে হলে নির্বাচনে পর্যবেক পাঠানোসহ অন্য সব সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ ইইউ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করে। ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ঢাকাস্থ ইইউ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক ছাড়াও ব্রিটেন, জার্মানি, স্পেন, সুইডেন, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো: রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব হেলালুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বের হয়ে ইইউ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাথে বেশ তাৎপর্যপূর্র্ণ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কমিশনের ঘোষণা এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী পরিকল্পনা করছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সাথে নভেম্বরে ইইউর একটি নির্বাচনবিষয়ক ছোট পর্যবেক দল বাংলাদেশে আসবে। তারা বাংলাদেশে বেশ কয়েক সপ্তাহ অবস্থান করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেণ করবে। বাংলাদেশে অবস্থানকালে এখানকার রাজনৈতিক পরিবেশ ও নির্বাচনের প্রস্তুতির সার্বিক বিষয় মূল্যায়ন করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১০ কোটি ভোটার রয়েছে, যা বিশ্বের খুব কম দেশেই রয়েছে। তারা একই দিনে ভোট দেবেন। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। যদিও এত বড়সংখ্যক ভোটারদের নিয়ে ভোট এই প্রথম হচ্ছে না। ফলে এবারের বাংলাদেশে নির্বাচন ইইউর আগ্রহের বিষয়।
ইইউ দূত বলেন, বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচন দেখতে চায় ইইউ। সব কিছু যাতে সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য আমরা আশা করছি ভোটের দিন পরিস্থিতি পর্যবেণ করে কূটনীতিকরা তাদের অবদান রাখতে পারবে। নির্বাচন কমিশনের সাথে আমাদের বৈঠকে এগুলোই মূলত আলোচনা হয়েছে। আমি বাংলাদেশে সফল নির্বাচন কামনা করছি।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করি সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে আর নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও খুবই প্রতিযোগিতামূলক হবে। আর আমি মনে করি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার জন্য জরুরি। এটি নিয়েও আমরা নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, সেই সাথে আমরা আশা করি সব ভোটার ভোট দিতে আসবেন। আমরা নির্বাচন কমিশনের সাথে নারী ভোটারদের নিয়েও আলোচনা করেছি। নারী ভোটারদের ভোট দিতে আসা নিয়ে আমাদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এখানে আমরা লিঙ্গ সমতায় জোর দিচ্ছি। আমাদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে আলোচনার বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। তবে আমরা বিষয়গুলোতে ক্রমাগত দৃষ্টি রাখব শেষ পর্যন্ত কী হয়।
নির্বাচনে পর্যবেক পাঠানো হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা একটি নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ পর্যবেক দল পাঠাব। যদিও দলটি বেশি বড় হবে না। পর্যবেক দলে আমরা মূলত সংখ্যার চেয়েও মানের দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছি। তারা মূলত তাদের মূল্যায়ন দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন।
বৈঠক সংশ্লিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ থাকলেও তা ছিল সহিংসতাপূর্ণ ও অনিয়মে ভরা। সেখানে বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হয়েছে। একটি বড় রাজনৈতিক দল এখন সংসদের বাইরে রয়েছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাদের প্রভাব এখন অনেকটাই সীমিত। এ জন্য আগামী সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়া খুবই জরুরি বলে তারা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান কূটনীতিকরা। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচনের জন্য শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কূটনীতিকরা। বিশেষ করে সিটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের কারণে ইসির প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার সঙ্কট রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ইসির পরিকল্পনা জানতে চান তারা। এ সময় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনের মধ্যে থেকে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করছে বলে কূটনীতিকদের জানানো হয়।
অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির সক্ষমতার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। ইসি জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শতভাগ সক্ষম ইসি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলীয় কোন্দল সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কূটনীতিকরা। সহিংসতা রোধে ইসির প্রস্তুতির কথা জানতে চান তারা। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সহিসংতা রোধে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ইসি। এ জন্য কয়েক ধাপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বৈঠক হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয় কূটনীতিকদের।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণের বিষয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। কূটনীতিকরা জানতে চান, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণে ইসির কী পরিকল্পনা রয়েছে। ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে আইন সংশোধন হলে ইভিএম ব্যবহার হবে। সে ক্ষেত্রে খুবই সীমিত আকারে তা ব্যবহার করা হবে।
ভোটগ্রহণ পদ্ধতি ও ফলাফল ঘোষণা সম্পর্কেও বৈঠকে আলোচনা হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইসির সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা জানতে চান কূটনীতিকরা। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এক দিনে প্রায় ১০ কোটির ওপর ভোটারের ভোটগ্রহণ করা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ অতীতেও ছিল এবং ইসি তা সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে।
ইসির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। ইসির সাথে আলোচনায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর সূক্ষ্মভাবে নজর রাখা হচ্ছে বলে ইইউ রাষ্ট্রদূত জানান। নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাতীয় নির্বাচনের আগে দু’জন বিশেষজ্ঞ পাঠানোর কথা বলেন তিনি।
বিদেশী নির্বাচন পর্যবেকদের মধ্যে ইইউ অন্যতম। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চেয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেণে না আসার ঘোষণা এ সংস্থাই দিয়েছিল। এরপর কমনওয়েলথ ও যুক্তরাষ্ট্র পরে অন্যান্য দেশ ও সংস্থা তাদের পথই অনুসরণ করে। সে সময় সহিংসতার কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি নিয়েও উদ্বিগ্নতার কথা জানিয়েছিল সংস্থাগুলো। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সেই নির্বাচনের কিছু দিন আগে অর্থাৎ ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকেই বিদেশী পর্যবেকেরা নির্বাচন পর্যবেণে আসছে না বলে জানাতে থাকে। ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
এ দিকে ইইউ প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা হতে পারে। এটি তিনি ইউ প্রতিনিধিদলকেও জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ইইউ প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও মুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হয়; সে ব্যাপারে প্রতিনিধিদল ইসির কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন তাদের আশ্বস্ত করেছে যে, আইনের মধ্যে থেকে নির্বাচন কমিশনের যতটুকু মতা রয়েছে, সব মতা প্রয়োগ করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেবেন।
তিনি বলেন, প্রতিনিধিদল ইভিএম মেশিন কিভাবে ব্যবহার করা হবে, তা জানতে চেয়েছেন। কমিশন জানিয়েছে, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে স্বল্প পরিসরে এটি ব্যবহার করেছি। যদি আইন অনুমতি দেয় তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে তা কমিশনের সিদ্ধান্তসাপে।ে
ইসি সচিব বলেন, প্রতিনিধিদল নির্বাচনী পর্যবেক সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা জানিয়েছি, বর্তমানে ১১৯টি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় পর্যবেক রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে যারা পর্যবেক হিসেবে আসতে চাইবেন তাদের জন্য একটি নীতিমালা রয়েছে। সে নীতিমালা অনুসরণ করে আসন্ন নির্বাচনে তারা নির্বাচন পর্যবেণ করতে পারেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা