২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নিউ ইয়র্কে ঐক্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

অর্থপাচারকারী সুদখোর খুনি একজোট হয়েছে

নিউ ইয়র্কে নাগরিক সংবর্ধনায় হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : এনআরবি নিউজ -

সরকারের পতন ঘটাতে সব দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, খুনের আসামিরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন রোববার রাতে নিউ ইয়র্কের মিডটাউনের হোটেল হিলটনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দেয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। অপপ্রচার রোধ ও শিশুদের সুরক্ষা করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। এতে সাংবাদিকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে গণসংবর্ধনায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। কি নোট স্পিকার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি উপস্থিত ছিলেন না। রাত সাড়ে ৮টায় প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনাস্থলে এলে মুহুর্মুহু স্লোগান আর করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই সভাস্থল থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের অপসারণের দাবিতে স্লোগান ভেসে আসতে থাকে ‘নো মোর সিদ্দিক’ ‘ভুয়া ভুয়া’। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মুখে আঙুুল দিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলেন। সাথে সাথেই প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উপবিষ্ট সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনির কাছে জানতে চান সভাস্থলের পরিস্থিতি সম্পর্কে। ততক্ষণে বেশ কয়েক দফা সভাস্থলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একই ধরনের স্লোগান আসতে থাকে। পরে শেখ সেলিম এমপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ধমকের সুরে বক্তব্য রাখা শুরু করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। উল্লেখ্য দীর্ঘ সাত বছর ধরে আওয়ামী লীগের কমিটি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলটির কর্মীরা। সন্ধ্যা ৯টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। এ সময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ- তিতিক্ষা সম্পর্কে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুর অসামাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজ নামচা পড়তে হবে। তিনি আরো বলেন, বাসের ধাক্কায় দু’টি শিশুর মৃত্যুর বিচার চাইতে তারা রাস্তায় নামে। কিন্তু আমরা দুই বোন দেশে ফিরে আমাদের বাবার হত্যার বিচার চাইতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, শিশুরা আন্দোলন করেছে, তাদের গায়ে কেউ হাত দেয়নি। কিন্তু তিন দিন না যেতেই শিশুদের ঘাড়ে পাড়া দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে নেমেছিল একটি মহল। আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার উসকানি দেয়া হয়েছিল। ধষণ ও হত্যার অপপ্রচার চালানো হয়েছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
এ সময় আলোকচিত্রি শহিদুল আলম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যে কয়েকটি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রত্যেকটি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের কোনো ভালো কাজ তিনি দেখেননি। তাকে নিয়ে এখন দুনিয়াজুড়ে কান্নাকাটি শুরু হয়েছে। শহিদুল আলমের মামা পাকিস্তানি রাজাকার ছিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, তাকে পুলিশের পক্ষ থেকে ফেসবুকে অপপ্রচার বন্ধের অনুরোধ জানালে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর হুমকি দেন। তাই পুলিশ তাকে চালান করেছে।
সদ্য গঠিত জাতীয় ঐক্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মানুষ হত্যাকারীদের সাথে জোট করতে পারে তাদের মুখে দেশের স্বার্থের কথা মানায় না। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন সরকারের পতন ঘটাতে দুর্নীতিবাজ, ঘুষ খোর, খুনি, দখলদার আসামিরা সব একজোট হয়েছে। সরকার উৎখাত করতে হবে; কিন্তু কেন? এমন কি কাজটা আমরা দেশের জন্য করিনি। এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে আমরা উন্নয়ন করেনি। তিনি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় পেছনে ড. ইউনূস রয়েছেন বলে জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কড়া সমালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুনজরে ছিলেন বলে দুই দফা নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তারা রাজনীতি করুক তাতে কোনো আপত্তি নেই। আওয়ামী লীগের বিপরীতে যারা ভোট দেবে তাদের জন্যও একটি দল লাগবে। জনগণ তাদের ভোট দিলে দেবে। আওয়ামী লীগ সততায় বিশ্বাস করে। আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেটে অপপ্রচার রোধ ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। সাংবাদিকেরা নিজেদের স্বার্থে এই আইনের বিরোধিতা করছেন। সামাজিক যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেদিকে তাদের কোনো লক্ষ্য নেই। প্রধানমন্ত্রী এ সময় শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো প্রবাসীদের সামনে তুলে ধরেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ঢাকা-নিউ ইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালু করার চেষ্টা চলছে। সোমবার সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘের বেশ কয়েকটি সাইড ইভেন্টে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
সাংবাদিকেরা নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু বুঝে না
নিউ ইয়র্ক থেকে এনা জানায়, বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নৌকায় মার্কায় ভোট দিতে হবে এবং আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়লাভ করাতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ শান্তিতে আছে, শুধু শান্তিতে নেই বিএনপি। আর নতুন করে যোগ হয়েছে যুক্তফ্রন্ট। আমার চাচা কামাল হোসেন, তারেকের বধূ কাকা (বি. চৌধুরী), এরশাদ-জিয়ার সুনজরে থেকে ঢাকসুর নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, সুদখোর ড. ইউনূস, কাকরাইলে বাড়ি দখলকারী ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, গুলশানে বাড়ি দখলকারী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদরা যুক্তফ্রন্ট করেছেন। খুনি, দুর্নীতিবাজ, সুদখোর, বাড়ি দখলকারী-সুবিধাভোগীরা যুক্তফ্রন্ট করেছে। সাংবাদিকেরা নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু বুঝে না- যে কারণে ডিজিটাল আইনের বিরোধিতা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে আর আমেরিকায় আসার সুযোগ হবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। আপনাদের আত্মীয়স্বজনদের বলবেন নৌকায় ভোট দিতে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন দেশের উন্নয়ন হয়, আর অন্যরা থাকলে শুধু দুর্নীতি হয়।
প্রধানমন্ত্রী যখন নিউজার্সি এয়ারপোর্টে অবতরণ করেন এবং হোটেলে ভাষণ দেন সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ স¤্রাট, জিল্লুর রহমান জিল্লু, গিয়াস আহমেদ, মোস্তফা কামাল পাশা বাবু, আলহাজ সোলায়মান ভূঁইয়া এবং জসীম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement