২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে না

সুপারিশ সচিব কমিটির
-

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা তুলে দেয়ার পক্ষে সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কোটা পর্যালোচনায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত সচিব কমিটি। অর্থাৎ সরকারি চাকরিতে প্রবেশে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটা রাখার বর্তমান যে নিয়ম রয়েছে- তা উঠিয়ে দিতেই এই সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটির এই সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দিলে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এর আগে মন্ত্রিসভা চলাকালে সচিব কমিটির প্রধান হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ প্রতিবেদন তুলে দেন বলেও জানান।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে বেতনের ক্ষেত্রে ২০টি গ্রেড রয়েছে। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তরা নবম গ্রেডে বেতন পান। এই গ্রেডে নিয়োগপ্রাপ্তরা পদোন্নতির মাধ্যমে সপ্তম থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত উন্নীত হন। কার্যপরিধিতে না থাকায় ১৪তম থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় ও চতুর্থ) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা নিয়ে কোনো সুপারিশ করেনি কমিটি।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, কোটা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে আজ (গতকাল) সাবমিট করে দিয়েছি। আমাদের ফাইন্ডিংস হলো- নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যে প্রাথমিক নিয়োগ হয়, সে নিয়োগে কোনো কোটা থাকবে না, কোনো কোটাই থাকবে না। এ প্রতিবেদনে মুক্তিযোদ্ধা কোটা তুলে দেয়ার সুপারিশ করা হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ রয়েছে বলে এতদিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকার আদালতের পরামর্শ চাইবে এমন কথাও বলা হয়েছিল। সচিব কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার আগে এ বিষয়ে আদালতের পরামর্শ নেয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে রাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকমিশন এরই মধ্যে ৪০তম বিসিএসের যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তার ওপর এই সুপারিশের কোনো প্রভাব পড়বে কি না- এই প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেখানে বলা আছে সরকার যদি ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত নেয়- সে অনুযায়ী কোটা নির্ধারিত হবে। নিয়োগ হবে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে বলেছেন, পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা উনি রাখবেন। প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বা পরামর্শ দেয়া হয়েছে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সচিব কমিটি ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এখন আর পিছিয়ে পড়া কোনো জনগোষ্ঠী নেই। সবাই এগিয়ে গেছে। তাই তাদের জন্য কোনো কোটা রাখার সুপারিশ করা হয়নি। সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যারা ব্যাকওয়ার্ড, সরকার যদি চায় তাদের কোটা দিতে পারে। কিভাবে ও কবে এ প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে আবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অনুমোদনের জন্য যাবে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমোদন পাওয়ার পর তা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর এ প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তবে এই কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ রাখা না রাখা বা পরিমার্জন, পরিবর্ধন করার এখতিয়ার সরকারের রয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবি বা সংস্কারের চাকরি প্রত্যাশীদের অসন্তোষ দীর্ঘ দিন থেকেই। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ অসন্তোষ আন্দোলনে রূপ নিলে তা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে। এ ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও আটকের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে গত ১১ এপ্রিল সংসদে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল বা সংস্কারের প্রয়োজন আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে সচিব কমিটি গঠন করে সরকার। অর্থাৎ কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২ জুলাই কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিতে সদস্য ছিলেন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ, অর্থ বিভাগের সচিব মুসলিম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব অপরূপ চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের সচিব আকতারী মমতাজ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান। এই কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। কমিটি ৮ জুলাই প্রথম সভা করে কমিটির মেয়াদ আরো ৯০ কার্যদিবস (তিন মাস) বাড়ানোর প্রস্তাব করলে তা গ্রহীত হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement