২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিবিসির চোখে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন

নির্বাচন
বুথ থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে এক বিএনপি কর্মীর অবস্থান ধর্মঘট, শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র - ছবি : বিবিসি

বুধবার সকালে গাজীপুরে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ফলাফল নেয়ার সময় শত শত সমর্থক বেষ্টিত জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন উচ্ছ্বসিত। বলেছেন, ভোটারদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী মি. আলম দুই লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন বিরোধীদল বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে।

কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে তাকে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, এবং প্রশ্নগুলো সহসা তার পিছু ছাড়বে না।

জাহাঙ্গীর আলমের সাথে আমি যখন কথা বলছিলাম, তার বক্তব্য ছিল, ‘আপনারা অনেক প্রশ্ন তুলছেন। একটা বড় নির্বাচন হলে কিছু অনিয়ম হয়। এই নির্বাচনেও কিছু অনিয়ম হয়েছে বলেই নির্বাচন কমিশন নয়টি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করেছে। কিন্তু সেটা পুরো নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে পারে না। এখানে নির্বাচন শতভাগই সুষ্ঠু হয়েছে।’

কিন্তু তার এই বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার মিল কতটা?

ভোটের দিনে অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায় আমি টঙ্গী বাজারের কাছে গাছা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখি ভোটারের দীর্ঘ সারি। অনেক নারী পুরুষ। কেন্দ্রের চত্বরে পরিবেশও ছিল বেশ ভাল।

কিন্তু কেন্দ্রের ভেতরে বুথগুলোতে গিয়ে দেখা যায় - বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কোনো এজেন্ট নেই।

প্রশ্ন তুললে অন্য এজেন্টরা আমাকে জবাব দিলেন, ‘তারা বাথরুমে গেছেন, এখনই চলে আসবেন।’

ঘন্টাখানেক ঐ কেন্দ্রে ছিলাম, সেই সময়েও বিএনপির এজেন্টরা বাথরুম থেকে ফিরে আসেননি।

অল্প দূরত্বেই আরেকটি ভোটকেন্দ্র কলেমেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে একই রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই।

তবে ঐ কেন্দ্রটিতে বাড়তি একটা দৃশ্য চোখে পড়ে, তাহলো কেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের ভিড়। তারা তাদের প্রতীকের ব্যাজ লাগিয়ে তাদের নির্বাচনী ক্যাম্পে এবং বাইরে সক্রিয় রয়েছেন। তাদের কেউ কেউ মাঝে মাঝে কেন্দ্রের ভিতরে গিয়েও ঘুরে আসছেন।

কেন্দ্রের চত্বর এবং ভেতর যে তাদেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল, তা বুঝতে কষ্ট হয়নি।

টঙ্গী এবং গাজীপুরের দশটি ভোটকেন্দ্র আমি ঘুরেছি। তার মাত্র একটি কেন্দ্রে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট পেয়েছিলাম। সেই এজেন্টকেও তার প্রার্থীর ব্যাজ বা পরিচয়পত্র লাগাতে দেখা যায়নি। তিনি জানান, ভয়ে কোনো ব্যাজ ব্যবহার করছেন না।

গাজীপুর মোড়ে জটলা করে থাকা কিছু লোকজনের সাথে আমি কথা বলি, তারা নিজেদের বিএনপি মেয়র প্রার্থীর সমর্থক বলে পরিচয় দিলেন।

তাদেরও বক্তব্য ছিল, ভয়ে তারা তাদের প্রার্থীর ব্যাজ লাগাননি।

আমি যে ক’টি কেন্দ্র দেখেছি, বেশিরভাগ কেন্দ্রেই বাইরে এবং ভিতরে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

ভোটারদের দীর্ঘ সারি
সকালের দিকে অধিকাংশ কেন্দ্রেই ছিল ভোটারদের দীর্ঘ সারি। তাদের অনেকে বলেছেন, অনেকদিন পর নিজের ভোট দিয়ে তারা আনন্দিত।

কিন্তু কেন্দ্রের বাইরে এবং ভিতরে ছিল আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ।

এরমধ্যেই কোনাবাড়ি এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজন যুবকের দেখা মেলে। তিনি নৌকার ব্যাজ পরে এসে ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন।

এই যুবক আমার সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে তার ভোট দেয়ার গল্পটি বলে দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়েন।

চারশ’ পঁচিশটি কেন্দ্রের মধ্যে আমি দশটি কেন্দ্র ঘুরেছি। একে নির্বাচনের সার্বিক চিত্র হয়তো বলা যাবে না, কিন্তু ঢাকার যেসব সাংবাদিক এই নির্বাচন দেখতে গিয়েছিলেন, তাদের অভিজ্ঞতাও ছিল কমবেশি আমার মতোই।

ভোট শেষে একজন সাংবাদিক মন্তব্য করেন, ‘ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি এবং দৃশ্যমান পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় ছিল না কোথাও কিছু সমস্যা ছিল।’

ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল
বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ একটি কেন্দ্র থেকে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট আমাকে ফোন করে বললেন, ‘আপনি কোথায়, এই কেন্দ্রে সিল মারছে দ্রুত আসেন।’

তিনি আমার মোবাইল ফোন নাম্বার কোথায় পেয়েছেন, তা আর জানা হয়নি।

দ্রুত সেই এম এ আরিফ কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখি, নৌকা মার্কার ব্যাজ লাগানো কয়েকজন যুবক বুথ থেকে বেরিয়ে গেলেন।

তবে তাদের সিল মারা দু’একটি ব্যালটের প্রমাণ সেখানে রয়ে যায়।

কেন্দ্রের একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট অভিযোগ করলেন, ঐ যুবকরা বুথের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে অন্য কক্ষে গিয়ে নৌকা মার্কায় এবং আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে সিল মেরেছে।

সেখানে বাইরে তখনও ভোটারের সারি। এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকার পর আবার ভোটাররা ভোট দিতে পারেন।

এই কেন্দ্রের সাথেই একটি প্রাইমারি স্কুলের বুথেও একই অভিযোগ পাওয়া যায়।

নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপার, মদিনাতুল উলুম আলিম মাদরাসা কেন্দ্র।

অবশ্য নির্বাচন কমিশন পরে এই দু’টি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে।

গাজীপুর শহরে মদিনাতুল উলুম আলিম মাদরাসা কেন্দ্রে গিয়ে ভোটার উপস্থিতি দেখে পরিবেশ দেখে ভালোই মনে হয়েছিল।

কিন্তু এই কেন্দ্রের তিনতলায় গিয়ে দেখা যায়, দুই তিনজন যুবক প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মেরে সেই ব্যালট বাক্সে ভরছেন।

বিবিসির সারোয়ার হোসেন ক্যামেরা তাক করার সাথে সাথে তারা দ্রুত কাজ সেরে সরে পড়েন। সবার সামনে এমন ঘটনা অবাক করার মতো।

ঐ কেন্দ্রে সবকটি বুথে একই ঘটনা ঘটে।

এমন পরিস্থিতিতে সেখানে ভোট বন্ধ থাকার অনেকটা সময় পর আবার ভোট নেয়া হয়। মাদরাসাটিতে চারটি কেন্দ্র ছিল। একটির ভোট পরে বাতিল করা হয়।

ভোটের পরে গাজীপুরের রাস্তায় কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বলি।

তাদের একজন বলছিলেন, ‘বড় মারামারি বা কাটাকাটি নাই। তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে আমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে... কৌশলে খেলা হয়েছে।’

তবে সেখানে কথায় কথায় বেসরকারি হাইস্কুলের একজন শিক্ষক আমাকে প্রশ্ন করলেন, নির্বাচন কী প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছে?

আপনার কী মনে হয়? আমার পাল্টা প্রশ্নে ঐ শিক্ষকই বললেন - ধরপাকড়ের ভয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিল না। ভোটের দিনও তারা সংগঠিত এবং সক্রিয় ছিল না। ফলে নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী দিয়ে অংশ নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো না বলে তিনি মনে করেন।

আরো পড়ুন :

গাজীপুরে অস্বাভাবিক ভোট
শামছুল ইসলাম
দেশে নির্বাচনের সংস্কৃতি প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। আগে ক্ষমতালোভীরা ভোটকেন্দ্র দখল করে নিজেদের প্রতীকে সিল দিত। এ ক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব থাকত। এখন চিত্র বিপরীত।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থকেরা জালভোট দিতে এলে তাদের নিবৃত্ত না করে দোসরের ভূমিকা পালন করেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে উর্দি পরাদের চেয়ে সাদা পোশাকের সদস্যরাই ছিল বেশি তৎপর।

তাদের কারসাজিতে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ধানের শীষ প্রার্থীর এজেন্টদের। কোনো কোনো কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট ঢুকতেই পারেনি। কেন্দ্রের গেট থেকে সাদা পোশাকধারীরা তাদের ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ মিলেছে। অনেক কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে।

গাজীপুরের ভোট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে দুইটি কেন্দ্রে। আবার একটি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২০ শতাংশের নিচে। ৪০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে ১৮টি কেন্দ্রে। ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে ২৪ কেন্দ্রে। ৩২ নং ওয়ার্ডের বসুরা মক্তব মাদরাসা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ১১৯ জন। এর মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২ হাজার ৯৩৪ জন। এই কেন্দ্রে শতকরা ৯৪.০৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। একইভাবে বিপ্রবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার দুই হাজার ৬৯৪ জন। এই কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২ হাজার ৪৩০ জন। এই কেন্দ্রে ভোটের হার ৯০.২০। সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে গাজীপুর হলিসন কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল কেন্দ্রে। সেখানে ভোটার ছিল ৬০৪৬ জন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে এবার গড়ে ৫৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে পড়েছিল ৬৮ শতাংশ। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় ১০ শতাংশ ভোট কম পড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজীপুর সিটিতে ভাসমান ভোটার বেশি। সেখানে ৯০ শতাংশের ওপর ভোট পড়া অস্বাভাবিক। আবার চল্লিশ শতাংশের নিচে ভোট পড়াও অস্বাভাবিক।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যেসব কেন্দ্রে ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে সেগুলো হচ্ছে- কোনাবাড়ী এম এ কুদ্দুস উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ-২ (দ্বিতীয়তলা) (৮৫%), গুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮২.৮১%), ধূমকেতু প্রিক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুল-১ (৮০.১৩%), শিলমুন আব্দুল হাকিম মাস্টার উচ্চবিদ্যালয়-১ (৮৩%), গোপালপুর কিশোর বিদ্যানিকেতন (৮১.২৭%), নন্দীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮০.৬৭%), বিন্দান উচ্চবিদ্যালয় (৮৯.৪৬%), বাড়ইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮২.৮১%), উধুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৩.৮১%), পুবাইল উচ্চবিদ্যালয় (৮৯.৫৩%), মেঘডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৬%), ইছালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৭.০৮%), শুকুন্দিবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৩.৮৫%), বসুরা মক্তব মাদরাসা (৯৪.০৭%), ইছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৬.৩৭%), খাইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ (৮১.৫৮%), খাইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ (৮১.৭৪%), ল্যাঙ্গুয়েজ উচ্চবিদ্যালয় (৮২.২৪%), হাতিমারা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ-২ (৮৩.২৮%),

মজলিসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৪.৯৯%), মীরেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৪.৪৬%), খালিসাবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৮.৫৮%), বিপ্রবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৯০.২০%), রোভার পল্লী উচ্চবিদ্যালয় (৮৫.৭৪%)। ৪০ শতাংশের কম ভোট যেসব কেন্দ্রে পড়েছে সেগুলো হলো- পাগাড় আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় (৩২.৭৫%), টঙ্গী সানরাইজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৩১.৯৬%), বিকাশ স্কুল (২৮.৩১%), সারদাগঞ্জ মেরিগোল্ড হাইস্কুল-১ (৩০.৩১%), সারদাগঞ্জ মেরিগোল্ড হাইস্কুল-২ (৩৯.৮৫%), আমানউল্লাহ একাডেমি (৩৬.৪৫%), কোনাবাড়ী এম এ কুদ্দুস উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ-৪ (৩৮.৭৪%), কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ-১ (৩৮.৮৫%), পানিশাইল উচ্চবিদ্যালয়-২ (৩৫.৫৯%), শহীদ বৃত্তি একাডেমি-২ (৩২.২৪%), ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ (২৫.৮৪%), পশ্চিম জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ (৩৬.৫১%), মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদরাসা-৪ (৩৪.০১%), গাজীপুর হলিসান কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল (১৪.১৪%), গাজীপুর হোসাইনিয়া মাদরাসা-২ (৩১.৯৫%), আব্দুর রহমান মেমোরিয়াল স্কুল (৩৩.৭৯%), অনন্ত মডেল কিন্ডারগার্টেন (৩৮.৬০%), হাজী আহমদ আলী পাবলিক স্কুল (৩৯.৮৯%)।

রিটার্নিং অফিসারের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ৪২৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৬টিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৪ লাখ ১০ ভোট পেয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনেছে বিএনপি। দলটির দাবি শতাধিক কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টকে বের করে দিয়ে গাজীপুরে জালভোটের ‘মহোৎসব’ হয়েছে।

নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন নয়। সংবিধান তাদের যে ক্ষমতা দিয়েছে তা ব্যবহার করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী ও প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকলেও কমিশন সে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। দলীয় কর্মীদের গ্রেফতার না করার নির্দেশনা দিলেও গাজীপুরে পুলিশ তাদের নির্দেশনা মানেনি। ভোটের আগের দিনেও বিএনপি কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পোলিং ও প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে দলীয় কর্মীদের। ফলে তারা নিজেরাই জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছে গণমাধ্যম কর্মীরাও। ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকায় মতাসীন দলের সমর্থকেরা গাড়ি ও মোটরসাইকেলে নৌকা প্রতীকের স্টিকার লাগিয়ে অবাধে চলাচল করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গাজীপুরে বাস্তবে ভোটের হার অনেক কম ছিল। জালভোটের কারণে ভোটের হার বাড়তে পারে। বিজয়ী প্রার্থীর ভোটের হার বেশি হয়েছে বলেই কিছু কিছু কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট দেখা যাচ্ছে।

নির্বাচন পর্যবেক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট স্বাভাবিক। এর ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়াটাও অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement