মানবজীবনে সততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এটি অর্জন করতে একনিষ্ঠ সাধনা করা প্রয়োজন। এই গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান তারা আত্মমর্যাদা সচেতন এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। কিন্তু বাংলাদেশে এখন সততার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ মানুষ খুব বেশি দেখা যায় না। দুর্নীতিগ্রস্ত এই সমাজে এখনো যাদের মধ্যে এই গুণ বিদ্যমান, অনেকসময় তাদের বলা হয় ‘বোকা’। ফলে দেশে অসততা তথা দুর্নীতির মাত্রা ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ অনেকেই লোপাটে ব্যস্ত। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে ‘বালিশ কাণ্ড’ থেকে ‘পর্দা কেলেঙ্কারি’র মতো দুর্নীতিবিষয়ক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন। এই অপরাধে যারা জড়িত তাদের সবাই শিক্ষিত এবং রাষ্ট্রের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তা। ‘ঘুষ হুমকির ঝুঁকি সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ’Ñ এমন সংবাদ গত শুক্রবার প্রকাশ হয়েছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ২০০ দেশের মধ্যে এ ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান তলানিতে, ১৭৮ নম্বরে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ট্র্যাস-এর ঘুষ ঝুঁকি সূচকে এ লজ্জাজনক চিত্র উঠে এসেছে। তবে আশার কথা, দেশ থেকে এখনো সততা পুরোপুরি নির্বাসিত হয়নি। এর প্রমাণ মেলে গত পাঁচ দিনের মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত দু’টি প্রতিবেদনে, যা সত্যিই আশাজাগানিয়া। ঘটনা দু’টি ঘোর অমানিশার মধ্যেও আলোর বাতিঘর।
জানা যায়, বগুড়ায় গত শুক্রবার ব্যবসায়ী রাজীব প্রসাদ রিকশাচালক লাল মিয়ার সততায় ফিরে পেলেন হারিয়ে যাওয়া ২০ লাখ টাকা। জেলার নন্দীগ্রামের রণবাঘা বাজারে সারের ব্যবসা করেন রাজীব। ব্যবসায়িক কাজে তিনি রাজশাহীর উদ্দেশে বগুড়া শহরের বাসা থেকে রিকশায় সাতমাথায় আসেন। সাথে ছিল তিনটি হাতব্যাগ; একটিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা। ভুলবশত রিকশায় ফেলে যান টাকাভর্তি ব্যাগটি। গাড়িতে উঠে বিষয়টি টের পেয়ে সাতমাথায় গিয়ে রিকশাচালককে খোঁজেন। না পেয়ে থানায় অবহিত করেছিলেন। রিকশাচালকও টাকার মালিককে খুঁজে না পেয়ে নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজের বাসায় ব্যাগটি রেখে ফের রাজীবকে খুঁজতে থাকেন। পুলিশ অন্য রিকশাচালকদের সহায়তায় সিসি টিভি ফুটেজ দেখে, খান্দার এলাকায় গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাথে সাথে লাল মিয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়ে টাকা ফেরত দেন। খুশি হয়ে রিকশাচালককে রাজীব ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা কিনে দিতে চাইলে তা তিনি নিতে অসম্মতি জানান। অথচ নিজের রিকশা নেই বলে তিনি ভাড়ায় রিকশা চালান। এতে প্রমাণ হয়, লাল মিয়ার সততা কতটা খাঁটি।
অন্য ঘটনাটি গাজীপুরের শ্রীপুরের। কুড়িয়ে পাওয়া লাখ টাকা মালিকের কাছে ফেরত দিয়েছেন হজরত আলী নামের এক সিএনজি-চালিত অটোরিকশাচালক। গত ১১ নভেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমীতে এ ঘটনা ঘটেছে। হজরত আলী শ্রীপুরে অটোরিকশা চালান। টাকার মালিক শ্রীপুর পৌর এলাকার সুপারি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান। তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হজরত আলীর অটোরিকশায় আরো কয়েক যাত্রীর সাথে বরমী যাচ্ছিলেন। গন্তব্যে পৌঁছলে সব যাত্রী নেমে যান। পরে অটোরিকশার সিটের পাশে কাগজের পোঁটলা দেখতে পান হজরত আলী। সেটি ছিল টাকার প্যাকেট। ওই টাকা নিয়ে মালিকের অপেক্ষায় অটোরিকশার স্ট্যান্ডে ঘণ্টাখানেক বসে ছিলেন তিনি। এর মধ্যে আতিকুর হন্তদন্ত হয়ে টাকা খুঁজতে আসেন। চালক টাকা ফেরত দেন তাকে।
এই ঘটনা দু’টি সততার অনন্য নজির। এতে প্রমাণ হয়, আজো আমাদের সমাজে এমন অনেকে আছেন, যারা সততার মতো গুণসহ আত্মমর্যাদা নিয়ে বসবাস করছেন, যদিও তারা বিত্তহীন। ঘটনা দু’টি আমাদের জাতির জন্য নৈতিক শিক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা এসব মহৎ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিই না। সাময়িক মুগ্ধতার পর আবার দুর্বৃত্তায়নের দুষ্টচক্রে ঢুকে পড়ি। বাংলাদেশে বিত্তশালীদের অর্থলোলুপতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে দেশ পতিত হয়েছে দুর্বৃত্তায়নের রাহুগ্রাসে।
যে জাতির নাগরিককরা আত্মমর্যাদাশীল, তারা বিশ্বে একসময় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই। কিন্তু তিক্ত হলেও বাস্তবÑ আমাদের জাতীয় জীবনে সততার মতো মহৎ গুণাবলির চরম অভাব ক্রমবর্ধমান। এ কারণে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দায়িত্বশীল অনেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। উঁচু পর্যায়ের এসব দুরাচারীর কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ দুর্বৃত্তায়নের অতলগহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে কবে মুক্তি মিলবে, এর উত্তর কারো জানা আছে কি?
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা