০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বাংলাদেশ নিয়ে আইএমএফের উদ্বেগ

ব্যাংকিং খাতই মাথাব্যথার কারণ

-

বাংলাদেশ সরকার যখন জাতীয় অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে তার কথিত সাফল্য নিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত এবং যখন দেশে উন্নয়ন জোয়ারের চলছে তোড়জোড়, তখন আমাদের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক সাহায্যদাতা আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতির বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বার্ষিক সভা উপলক্ষে অর্থমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফের পক্ষ থেকে এই উদ্বেগ ব্যক্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে নয়া দিগন্তের নিজস্ব প্রতিবেদকের পাঠানো খবরে জানানো হয়, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত বলেছেন, এ বৈঠকটি ভালো হয়েছে। আইএমএফের সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। তাদের প্রতিনিধিদল ঢাকায় গিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের আর্থিক খাত ‘একটু দুর্বল’ হয়েছে। এর প্রধান কারণ ব্যাংকিং খাত। তারা এই বিষয়ে মনোযোগ দিতে বলেছেন। মন্ত্রী এ বিষয়ে আরো বলেন, আমি এ ব্যাপারে একমত এবং আমার কোনো দ্বিমত নেই। ব্যাংকিং খাত নিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেদন তৈরি করতে যাচ্ছে বলেও মন্ত্রী জানিয়েছেন।
আমাদের প্রবীণতম মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অকপটে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে এবং তারা প্রভিশনিং ঠিকভাবে রাখতে পারছে না। আইএমএফ এ দিকে ‘মনোযোগ দিতে’ বলেছে।
যা হোক, মন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ‘একটু দুর্বল’ হয়ে পড়েছে, এই ‘একটু’ যে আসলে কত ব্যাপক, গভীর ও ক্রমাবনতিশীল; তা জাতি অনেক দিন ধরে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। সরকার নিজের ব্যর্থতা ও বিচ্যুতিকে যতই হালকা করে দেখাক না কেন, দেশের অর্থনীতির, বিশেষত ব্যাংকিং খাতের কী বেহাল দশা, তা সবার কাছে স্পষ্ট। এরই সাক্ষ্য দেয় নয়া দিগন্তের আলোচ্য প্রতিবেদনের সূচনায় উল্লিখিত তিনটি প্রশ্ন। আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্নগুলো করেছেন এবং বিষয়টির গুরুত্ব তা থেকে সহজেই অনুমেয়। প্রশ্ন তিনটি হলোÑ ক. বাংলাদেশের আমদানি এত বাড়ল কেন? খ. খেলাপি ঋণ কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? গ. ব্যাংকগুলো এ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে পারছে না কেন?
উল্লেখ্য, আমদানি দৃশ্যত অস্বাভাবিক রকম বাড়তে দেখা গেলে সাধারণত মনে করা যায়, এর মাধ্যমে কারসাজি করে অর্থ পাচার করা হচ্ছে বিদেশে। তবে অর্থমন্ত্রী মনে করেন না যে, বাংলাদেশ থেকে মুদ্রা পাচার ‘খুব বেশি’ হচ্ছে। তার কথা, ‘পরিস্থিতি অনিশ্চিত থাকলে অর্থ পাচার হয়। আমার মনে হয় না যে, দেশে কোনো অনিশ্চয়তা আছে।’ দেশের বাস্তবতা কিন্তু মন্ত্রীর বক্তব্যকে তেমন সমর্থন দিতে পারছে না। জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা কাটেনি এত দিনেও। আর নির্বাচনী সুষ্ঠুতা নিয়ে তো আগে থেকেই গুরুতর সন্দেহ বিরাজ করছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো মন্ত্রীর কথা থেকেও প্রতীয়মান যে, তিনি মুদ্রা পাচার হওয়াকে অস্বীকার করতে পারেননি। তবে জনগণের জানা প্রয়োজন, কী পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হলে তিনি মনে করবেন, ‘খুব বেশি’ পাচার হচ্ছে।
যা হোক, দেশের ব্যাংকিং খাত বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দুর্দশা চলছে দীর্ঘ দিন। কিন্তু এ পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটায় ধরে নিতে হয়, সরকার ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা দূর করতে মনোযোগী নয়; কিংবা এ ক্ষেত্রে সরকারি পদক্ষেপগুলো ব্যর্থ হয়েছে। একই সাথে, এটাও মনে করা যায়, ক্ষমতাসীন মহলের রাজনৈতিক প্রভাবও ব্যাংকিং খাতের দুর্গতির জন্য অনেকটা দায়ী। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো নিয়ে আইএমএফের উদ্বেগ প্রমাণ করে, আমাদের ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি নিয়ে দাতা সংস্থাগুলো তথা আন্তর্জাতিক মহলও চিন্তিত না হয়ে পারছে না।
আমাদের প্রত্যাশা, সরকার বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে আর বিলম্ব করবে না। ব্যাংকিং খাতের ‘কালব্যাধি’ সারাতে প্রয়োজনে ‘শল্যচিকিৎসা’র মতো কঠোর ও সাহসী উদ্যোগ নিতেও যেন দ্বিধা করা না হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement