২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মাদকবিরোধী অভিযান

সরষের ভেতরের ভূত তাড়াবে কে?

-

মাদকের বিরুদ্ধে দেশে ঘোরতর অভিযান চলছে। এ অভিযানে এতটাই কঠোরতা দেখানো হচ্ছে যে, অনেক অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন। এত তোড়জোড়ের পরেও মাদকবিরোধী অভিযান সফল হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে কথা উঠেছে। দেশের শীর্ষ মাদক কারবারি বলে যারা কুখ্যাত তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এ ছাড়া দলীয় ছাতার তলায় থেকে আরো অনেকে নিরাপদ থেকে যাচ্ছে। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে সরষের ভেতর ভূত থাকার খবর। মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত বাহিনীর মধ্যে মাদকের কারবারি থাকার খবর প্রকাশ হচ্ছে। সহযোগী একটি দৈনিক ‘সরকারি সংস্থার ভেতরেও দরকার শুদ্ধি অভিযান’ শিরোনামে খবর ছেপেছে। প্রতিবেদনে পত্রিকাটি লিখেছে খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের মধ্যে মাদকের কারবারি রয়েছে। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহযোগী হিসেবে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত এক বছরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৭২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অধিদফতরের ৯০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নোটিশ দেয়া হয়েছে। যারা মাদক চোরাকারবারিদের ধরবে তারা নিজেরাই যদি ঠিক এই কারবারের সহযোগী হয়ে যায় তখন অবস্থা কতটা গুরুতর হতে পারে অনুমান করা যায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে মাদক চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ রেখে নিজেদের লোকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হচ্ছে। যারা নিজেদের ভেতরের ভূত বাছবেন তারা কিভাবে মূল চোরাকারবারিদের ধরবেন। সারা দেশে মাদকের আশঙ্কাজনক সয়লাবের কারণ আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের ব্যাপারে ওই প্রতিবেদনে বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরা হয়। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চলছে ইয়াবা। এর রুট হচ্ছে মিয়ানমার, সেখান থেকে কক্সবাজার পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় এক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এর বড় ভাগের নিয়ন্ত্রণ করার তথ্য বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে। সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নৌ ও স্থলপথ নিশ্চয়ই ব্যবহার করা হয়। এসব পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালিত হলে ইয়াবা সারা দেশে দেদার ছড়িয়ে পড়তে পারে না। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেককে এই তালিকায় পাওয়া গেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। সরষের ভেতর ভূত রেখে কখনো অভিযানের সফলতা আশা করা যায় না।
অভিযানকে সফল করতে হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নিজেদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশজুড়ে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে শনিবার পর্যন্ত ৭৪ জন নিহত হয়েছে। আটক করা হয়েছে সাড়ে সাত হাজারের বেশি। বাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যদের শুধু নোটিশ করে ছেড়ে দেয়া এবং এর বিপরীতে অভিযুক্ত রাজনৈতিক শেল্টারবিহীন চোরাকারবারিদের ক্রসফয়ারে দেয়ার মাধ্যমে এ অভিযানের সফলতা আসতে পারে না। এ জন্য ক্রসফায়ার যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, একইভাবে বাহিনীর সদস্যদের সামান্য নোটিশও গ্রহণযোগ্য নয়। মাদক ছড়িয়ে দেয়ার সাথে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রত্যেক অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে মাদকের সয়লাব রোধ করা যেতে পারে। অন্যথায় এক চোরাকারবারির হত্যার পর নতুন চোরাকারবারির জন্ম নেয়া স্বাভাবিক। ফলে অভিযানের পর কিছু দিনের মধ্যে প্রাণ হারানো চোরাকারবারিদের জায়গা দখল করবে নতুন কিছু মুখ। তাই এই অভিযান লাভ দেবে না আখেরে দেশের মানুষের।


আরো সংবাদ



premium cement