৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সাহিত্য কবিতাবলী

-

রেজাউদ্দিন স্টালিন
প্রতিবিদ্যা

আমি কোনো প্রশিক্ষক নই
যে শিক্ষা দেবো কিভাবে লিখতে হয় কবিতা
পৃথিবীর কোনো কবি
কবিতা লিখতে শেখাননি কাউকে

নদীর কল্লোল কিভাবে শুনতে হয়
পর্বতের উচ্চতায় কিভাবে বিস্মিত হতে হয়
তা বুঝতে কাউকে বিদ্যালয়ে যেতে হয় না

প্রতিটি মাছ চ্যানেল বিজয়ী ব্রজেন দাস
প্রতিটি পাখি বিখ্যাত বৈমানিক
তাদের কোনো গুরুগৃহ নেই

ভূমিষ্ঠ শিশুকে কেউ বলে দেয় না কিভাবে কাঁদতে হবে
ভালোবাসার কৃৎকৌশল শিখতে যেতে হয় না
কুস্তিগীরের কাছে
আর পৃথিবীর সব মহত্তম মানুষেরা ছিলেন নিরক্ষর

সোলায়মান আহসান
লতা মঙ্গেস্কর

জানি না তোমার প্রেমে মজেছিল কোন সে পুরুষ
সংসার হাটে তুমি একাকী পেরোলে তাকে ছাড়া
তোমার হৃদয়খানা তোলা র’লো বাজিয়ে নাকাড়া
কোন্ সে মানস লোক, বুকে জ্বেলে আগুনের তুষ?

তোমাকে যে শিল্পী বলে শিল্পের আরেক অবমান
তোমার তুলনা তুমিÑ উপমারহিত চিত্রলেখা
সুরের আকাশে জ্বলা আলোকিত নক্ষত্র অদেখা
গানের ভুবনে তুমি অরুন্ধতী নতুন খান্দান

সুরের জাদুতে বেঁধে মন্ত্রপূত করেছ ভূলোকে
কালের ভেলায় চড়ে শতাব্দীর চক্রযানে যথাÑ
ফুরাবে কি কোনো দিন তোমার সৃষ্টির অমরতা;
তুমি বিস্ময়ের, তুমি অপূর্ব মানবী স্বপ্নালোকে!

আমি এক ঋদ্ধমান অধমন লতা মঙ্গেস্কর!
আবদ্ধ রয়েছি ঋণে চাষাবাদে হৃদয় নিষ্কর।

গাউসুর রহমান
মুশাররাফ করিমের জন্যে

পৃথিবীর বুকের ভেতর শান্তি খুঁজে পেলে না বলে
স্মৃতির বইয়ে শেষ স্বাক্ষর করে দিলে উড়াল
এ কেমন যাওয়া, কবি।
স্বভাবত-পৃথিবীকে পর ভাবতে হবে,
সূর্যের আলোতে জলের কম্পন না দেখে
পৃথিবীর মানুষের অশ্রু নিয়ে দূর পৃথিবীতে
অগ্নিপরিধির অগ্নিশিল্প হয়ে গেলে।
এ পৃথিবীর মাঠ-ঘাট-জনপদ-নগর-বন্দরকে
বললে তুমি শেষ হুইসেল বাজাতে
অর্জুন ঝাউয়ে আর ঘরে ফিরে আসবে না তুমি
করলে তুমি কঠিন পণ
কবিতার ভোর হলো না আর
মেঘে ভাসলো রাতের আঁধার।

আইউব সৈয়দ
প্রজ্ঞাবতী পৌষ

কুয়াশা-চশমা চোখে
পৌষ হাসে...

ডানাঅলা হিমবেলা দোলে
ঋতু আসে
জীবনবোধে ;

প্রজ্ঞাবতীর কিচিরমিচির ঐ...

শীত ডাকে
সত্যায়িত মাঠে
শূন্যে দ্বন্দ্বে
স্বপ্ন আভা পাঠে;

আমগ্ন ঝলক জেগে উঠে রে ...

কালোত্তীর্ণ ভোরে
ফেরে
আনন্দ-অন্বে^ষী
হাত নেড়ে ;

আন্দোলিত করে ইশারা বটে!

প্রজ্ঞাবতী পৌষ আসে
ঘাসে... ঘাসে চোখ রেখে
পাশে... পাশে হাসে।


শম্পা মনিমা
মৃত্যু সত্যি, বিভ্রান্তি নয়

গত বছর থেকে মরেছি বারকয়েক
মাঠ ফসলের বিভ্রান্তে এবার বিশ্বাস ফলেছে
খোঁজখবর নিয়ে গেল প্রতিক্ষা নেই শরীরে
ভোররাতে কেঁদে কেঁদে শনাক্ত হলো
সত্যি, মৃত্যু হয়েছে।

বাঁধা পড়া সৌভাগ্যে আরো কিছু দিন ছিল বাকি
শুনলাম ভালোলাগার প্রবল ঘনিষ্ঠ সুবাস চার পাশে,
খোরাকি আর নেই, এই সম্ভাবনা পার হয়ে গেছে
আসন্ন প্রসবা ব্যার্থতা, জন্ম দিল প্রতিক্ষার,
যাতনা দিয়ে,আমাদের সঞ্চয়ের নিবিড় বাসনায়।

আর বিভ্রান্তি ঘটবে না, আইন আদালত হবে না
এ বছর মৃত্যু গর্ভ সময়ের অক্ষম বাহক
ধসে পড়া আমি আড়ষ্টতা নিয়ে লজ্জায় মুখ লাল
অনভ্যাসের দূরত্বে আরো সাজি ফিরে না থাকার।

নাসরিন সিমি
কফিনে বন্দী পাপ ও প্রেম

ইশারায় ডেকে ক্রমাগত বিষাদের ছায়া
খুঁজে পেতে কারো জন্য অপেক্ষা করি
অপেক্ষা করি বেদনার নীল রং ধারণ
করে নীলকণ্ঠ মণির বিষ গ্রাস করতে ।

আমি হবো এক পাথর, এক পাহাড়,
নয়তো ধ্রুপদী কোন সঙ্গীত তোমার
কণ্ঠে তোমার সুরে তোমার তানপুরায়
নিশিদিন বাজিয়ে ক্লান্ত সুর লয় তাল।

মুছে যাবে পেন্সিলে আঁকা ছবির মতো
বিষাদের সব ছবি,গান, কবিতার বই
শুধুই আমার পৃথিবীতে পরাজিত হয়
আনন্দ ও সুন্দরের অনুপম উদাহরণ

ভেঙেচুরে যাচ্ছি এভাবে নিজের ভেতরে
ক্রমাগত বন্দী ঘূর্ণাবর্তের সময়ের কাছে
পৃথিবীজুড়ে শূন্যতা শূন্যতা অনুভবের
মাঝে দেখি কফিনে বন্দী পাপ ও প্রেম।


আরো সংবাদ



premium cement