০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শ্রুতি ও স্মৃতির সোনালি শিখা

যেমন দেখেছি তাঁকে
-

ঊনত্রিশ.
আল মাহমুদ নিজে সাহিত্য কিংবা কবিতার সংগঠন করেননি। ওই অর্থে তিনি সংগঠকও ছিলেন না। সংগঠক হওয়ার ব্যাপারে তার ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখা যায়নি। সংগঠন আয়োজনের কোনো চেষ্টা তিনি করেছেন এমন নজিরও নেই। ছিল না। বরং তিনি বলতেনÑ আমি সংগঠক নই। সংগঠক হতে চাই না। হতে পারিও না। এক ধাপ এগিয়ে বলতেনÑ প্রকৃত কবিদের সাহিত্য সংগঠক কিংবা কবিতার সংগঠক হওয়া উচিতও নয়। এটি তার বিশ্বাসের বিষয় ছিল। তার একান্ত ব্যক্তিগত ভাবনার বিষয়। বিষয়টির প্রতি তিনি অটল ছিলেন। ছিলেন বলেই তিনি কখনো ব্যক্তিগতভাবে কবিতা সংগঠন করার উদ্যোগ নেননি। কিন্তু কিছু সংগঠন তাকে সম্মানের জায়গায় রেখেছিল। কয়েকটি সংগঠনের উপদেষ্টার তালিকায় অনেকের সাথে তার নামটিও ব্যবহার করা হতো। এটি মূলত তার কবি খ্যাতির সুনাম ব্যবহার করার উদ্দেশ্যেই করা হতো। সমাজে এ রীতিটি সব সময় চলমান এক ধারা। সমাজে যাদের মাথা সাধারণের চেয়ে উঁচু হয়ে ওঠে, তাদের মানুষ সমীহ করে। সম্মান জানায়। ভক্তির জায়গায় নিয়ে যায়। ভালোবাসে এবং ভালোবাসার সাথে জড়িয়ে দেয় শ্রদ্ধার অলঙ্কার। এসবই পেয়েছেন আল মাহমুদ। ভালোবাসার জায়গা থেকে যেমন। ভালো কাজের জায়গা থেকেও তেমনি। কবিতা কিংবা সাহিত্য সংগঠনের উপদেষ্টার তেমন কাজ অথবা ভূমিকা থাকে না। সংগঠক যারা, এসব প্রতিষ্ঠিত শ্রদ্ধাভাজনদের মর্যাদাকে পুঁজি করেন। বিভিন্ন আয়োজন-অনুষ্ঠানে স্পন্সর অথবা পত্রিকা-ম্যাগাজিন প্রকাশে বিজ্ঞাপনে সহজীকরণের উপলক্ষ এসব মুখ। আল মাহমুদের খ্যাতিকেও ব্যবহার করেছে অনেক সংগঠক। কেউ কেউ সুপারিশ করিয়েছেন তাদের কর্মকাণ্ডে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিকে ফোন ধরিয়ে দিলে আন্তরিকতার সাথেই তিনি সুপারিশ করতেন। বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা, হাউজিং কোম্পানি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন কবির অনুরাগী। যারা অকপটে ভালোবাসতেন তাকে। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও অনেকে ছিলেন যারা ভক্ত ছিলেন তার। যারা তার কথা সম্মানের সাথে গ্রহণ করতেন। মর্যাদা রক্ষা করতেন অনুরোধের। এভাবে অনেক কবিতা সংগঠক তার সাহায্য নিয়েছেন। তিনিও করেছেন আনন্দের সাথে। আল মাহমুদ একটি কবিতা সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। সংগঠনটির নাম ‘কবিতা বাংলাদেশ’। এটি ছিল একটি সর্বজনীন সংগঠন। সর্বস্তরের কবিদের জন্য এটি ছিল উন্মুক্ত। নিয়মিত কোনো কার্যক্রম এ সংগঠনের ছিল না। ছিল না ধারাবাহিক কোনো কার্যসূচি। মাঝে মধ্যে কোনো উপলক্ষে আয়োজন হতো কবিতা উৎসব অথবা কবিতা সন্ধ্যা। একটি উৎসব হয়েছিল ২০০৩ সালে। বাংলাদেশের ভেজা ঋতু বর্ষণের ঋতু এবং সৃজনের ঋতু বর্ষাকে কেন্দ্র করে। মুখ-নাম ছিল বর্ষাকালীন জাতীয় কবিতা উৎসব। জুন মাসে ভরা বর্ষার বিপুল বর্ষণের ভেতর অনুষ্ঠিত হলো উৎসবটি। জুনের শেষাশেষিই ছিল তারিখটি। মতিঝিলের দিলকুশায় বিসিআইসি মিলনায়তন ছিল অনুষ্ঠানের স্থল।
অনুষ্ঠানের তিন দিন আগে থেকে বৃষ্টির উন্মাদনা ছিল অনবরত। বর্ষণে বর্ষণে ঢাকার রাস্তাগুলো প্রায় নদী হয়ে উঠেছিল। বেবিট্যাক্সি রিকশা, কার এসব যান সাঁতার তুলেই ছুটেছে। বড় গাড়িগুলোর ছোটার গতিকে মনে হতো নদীতে কোনোÑ একহারা জাহাজের এগিয়ে চলা। বাসের উজানে উত্থিত ঢেউ স্রোতস্বিনীর উপচানো ধারা নিয়ে প্লাবিত করেছে আশপাশ। এমন একটি পরিবেশে বর্ষাকালীন কবিতা উৎসব। ভাবতেই আনন্দ চাগিয়ে ওঠে। বর্ষায় বৃষ্টির ঐশ্বর্য যদি না থাকে বৃষ্টির অনল বর্ষণ যদি না হয়Ñ বর্ষায় কবিতা উৎসব কি আর জমে! তাই যেন বৃষ্টির ঘনঘোর বরিষনে ভরে উঠল ঢাকার রাজপথ। অলিগলি। নর্দমা ও নালার বুক।
উৎসবের দিনেও বর্ষণের ধারা ছিল অব্যাহত। সকাল ১০টা থেকে ছিল উৎসবের সূচনা। তুমুল বর্ষণের ভেতর কবিদের আগমন একটুও থামেনি, বরং ১০টার আগেই হল পুরে গেল বিলকুল। উৎসবটি উদ্বোধন করেছিলেন তখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এস এম এ ফায়েজ। তিনিই ছিলেন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। কবি আল মাহমুদ ছিলেন সভাপতি।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কবিরা অংশ নিয়েছিলেন এ উৎসবে। নবীন-প্রবীণ সব শ্রেণীর কবির অংশগ্রহণে উৎসব হয়ে উঠেছিল স্মৃতিময়। বর্ষা ও বৃষ্টি নিয়ে পাঠ হলো কবিতা। বাইরে প্রকৃতির বৃষ্টি। ভেতরে কবিতার। প্রকৃতি আর কবিতার বৃষ্টিতে ভরো ভরো হয়ে উঠল শ্রোতাদের অন্তর। কবিতার বর্ষণ ছিল আলো-আঁধারি খেলার রহস্যে। বৃষ্টিকে কতভাবে ছন্দে বেঁধেছেন কবিরা। কত নান্দনিক উপমায় সাজিয়েছেন কবিতার শরীর। আহা বৃষ্টি, জীবনের সর্বত্র স্পর্শ করার এক শীতল সুখ! বর্ষা মূলত সৃষ্টিশীল মানুষদের ঋতু। কবিতার আশ্চর্য ঋতু। আল মাহমুদ এ ঋতুকে সৃজনশীল ঋতু বলতেন।
উৎসবে কবিতা পাঠ করেছিলেন আল মাহমুদ, ড. আশরাফ সিদ্দিকী, জাহানারা আরজু, ওমর আলী, আফজাল চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী, আল মুজাহিদী, জহুরুল শহীদ, সৈয়দ শামসুশ হুদা, এরশাদ মজুমদার, শাশ্বত হাসান চেমন আরা, রুহুল আমিন খান, মশউদ-উশ-শহীদ, আবদুল মুকীত চৌধুরী, মাহবুবুল হক, শাহাদাত বুলবুল, সাজ্জাদ হোসাইন খান, মাহবুব হাসান, জাহাঙ্গীর ফিরোজ, সুজাউদ্দিন কায়সার, ফরিদা হোসেন, জয়নুল আবেদীন আজাদ, মতিউর রহমান মল্লিক, আবদুল হাই শিকদার, সোলায়মান আহসান, মুকুল চৌধুরী, হাসান আলীম, তমিজউদ্দিন লোদী, চৌধুরী গোলাম মাওলা, শরীফ আবদুল গোফরান, আহমদ মতিউর রহমান, নাসির হেলাল, আবদুল কুদ্দুস ফরিদী, ফাহিম ফিরোজ, মুহম্মদ আবদুল বাতেন, জামাল উদ্দিন বারী, লিলি হক, আতিক হেলাল, রফিক মুহাম্মদ, মানসুর মোজাম্মিল, সাজ্জাদ বিপ্লব, তৌফিজ জহুর, ফাতিমা তামান্না, নয়ন আহমেদ, বিপ্লব ফারুক, কাজী রহিম শাহরিয়ার, আবিদা শিকদার, সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব, সেলিম আওয়াল, আবু তাহের বেলাল, জামান সৈয়দী, মনসুর আজিজ, ফজলুল হক তুহিন, আমিন আল আসাদ, খাতুনে জান্নাত কণা, শাহিদ-উল-ইসলাম, আরিফ নজরুল, রফিক রইচ, বাসিত ইবনে হাবীব, খৈয়াম আজাদ, মঈন শেখ, নকীব হুদা, আহমদ বাসির, আফসার নিজাম, নাসিমুল বারী, নুসরাত জাহান এনি, কুতুব হেলালী, বেলি শামসুন্নাহার, রাবেয়া ইসলাম শিমু, গোলাম মোস্তফা খান, হাসনা হেনা প্রমুখ।
নজরুলের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন মাহবুব মুকুল। বিশিষ্ট নজরুল গবেষক, সাহিত্য বিশ্লেষক ও আবৃত্তিশিল্পের পুরোধা ব্যক্তিত্ব শাহাবুদ্দীন আহমদ বর্ষা বিষয়ক কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করেন। শাহাবুদ্দীন আহমদ নজরুলকে এতটাই ভালোবেসেছিলেন, যা সত্যিই বিরল। অবয়বে নজরুলের বার্ধক্যের ছবি ফুটে ছিল তার চেহারায়। চোখ দু’টি একেবারেই ছিল নজরুলের মতো। আমৃত্যু নজরুল নিয়েই গবেষণা করেছেন তিনি। নজরুলের ওপর এককভাবে তার রচিত গ্রন্থ সংখ্যায় যেমন বেশি, তেমনি গুণেমানেও ঊর্ধ্বেই বলা যায়। নজরুলের প্রসিদ্ধ কবিতা এবং গান প্রায় সবই মুখস্থ ছিল তার। যৌবনকালে তিনি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করেছেন, বাঘ আকৃতির পোশাক পরে। আল মাহমুদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন শাহাবুদ্দীন আহমদ। আল মাহমুদের কবিতা নিয়েও আছে তার বেশ কিছু রচনা। নজরুল ছাড়াও শাহবুদ্দীন আহমদ গবেষণা করেছেন ফররুখ আহমদ, গোলাম মোস্তফা, তালিম হোসেন এবং বেনজীর আহমদ। এ ছাড়া ‘বিংশ শতাব্দীর বাংলা কবিতা’ নামে তার যে গবেষণা এটি একটি অসাধারণ রচনা। বাংলা কবিতার আদি-অন্ত টেনেছেন তিনি। সব কবির কবিতার আধুনিক দিক তুলে আলোচনা এবং বিশ্লেষণ করেছেন। যেখানে ডান-বাম মধ্যপন্থার কোনো কবিই অনুপস্থিত নেই। দেখা হলেই খুব প্রশংসা করতেন আল মাহমুদ। বলতেনÑ শাহাবুদ্দীন ভাই, আপনি যা করেছেন করছেনÑ বাংলা কবিতা ও সহিত্যের জন্য; এটি এক কথায় তুলনাহীন।
কবিতা উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষ হলে বেশ খানিক্ষণের বিরতি ছিল। দুপুরে লাঞ্চের পর শুরু হলো কবিতা পাঠ। এ ফাঁকে বেশ একটি জমজমাট আড্ডা হয়ে গেল মঞ্চেই। আল মাহমুদ, শাহাবুদ্দীন আহমদ, আফজাল চৌধুরী, ওমর আলী, আল মুজাহিদী, ফরিদা হোসেন ও জাহানারা আরজু মিলে।
এ আড্ডায় বিষয় হয়ে উঠেছিল শাহাবুদ্দীন ভাইয়ের বিংশ শতাব্দীর বাংলা কবিতা গ্রন্থটি। এ গ্রন্থের যুগোপোযিতা এবং সময়োপোযিতা নিয়ে কথা বললেন আল মাহমুদ। সভাপতির বক্তব্যে আল মাহমুদ এক স্মরণযোগ্য বক্তব্য দিয়েছিলেন সেদিন। তিনি বলেছিলেনÑ আমাদের ঋতুবৈচিত্র্য আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে সৃজনশীল ঋতু হলো বর্ষা ঋতু। দীর্ঘস্থায়ী এ ঋতুতে অঙ্কুরোদগম হয়। এ ঋতুতেই ফলবতী হয় প্রকৃতিকুল। বলেছেনÑ কবিতা মানুষকে সুন্দর করে। কবিতা মানুষকে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করে। কবিতা মানুষকে স্বাধীনতা দান করে। মানুষের মধ্যে যে সার্বভৌমত্বের চেতনা, কবিরা এ চেতনাকে বর্ধিত করেন। সৃষ্টি করেন দেশপ্রেম, স্বপ্ন ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ। এ জন্য কবিদের একতার মন্ত্র থাকা চাই। ঐক্যের চেতনা থাকা চাই। কবিদের মধ্যে দলাদলি থাকা একেবারেই অনুচিত। আমাদের মত-পথ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু জাতীয় সাহিত্য হবে এক। কবিতা হবে এক। তবেই বিশ্বসাহিত্যে বিশ্বকবিতায় আমাদের উপস্থিতি হবে উজ্জ্বল। এভাবে আল মাহমুদ কবিদের সার্বজনীন হওয়ার আহ্বান জানান। হিংসাবিদ্বেষ পরিহার করে মানুষ যেন মানুষকে গ্রহণ করার ইচ্ছে রাখে এবং এ ইচ্ছে সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করবেন কবিরা। কবিতা লিখবেন জীবনের পক্ষে।
এ উৎসব ঘিরে সাড়ে চার শ’ পৃষ্ঠার বেশি কলেবরে একটি স্মারক বের হয়। স্মারকের প্রধান সম্পাদক আল মাহমুদ। সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন খান। নির্বাহী সম্পাদক জাকির আবু জাফর। বর্ষা বিষয়ক দু’টি প্রবন্ধ ছাপা হয় স্মারকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নববর্ষা’ এবং বাংলা কাব্যে বর্ষা ও বৃষ্টিÑ শাহাবুদ্দীন আহমদ। বর্ষাবিষয়ক কবিতা ছাপা হয়। বর্ষা বিদায়Ñ কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী বর্ষাÑ জসীমউদ্দীন, বর্ষায়Ñ ফররুখ আহমদ।
ছাপা হয় কবিতাবিষয়ক ক’টি কবিতা : কবিতাÑ সৈয়দ আলী আহসান, একটি কবিতার জন্যÑ শামসুর রাহমান, কবিতা এমনÑ আল মাহমুদ
ছাপা হয়েছে কবিতাবিষয়ক একঝাঁক প্রবন্ধ, আধুনিক কবিতাÑ গোলাম মোস্তফা, কবিতাÑ শ্রীশচন্দ্র দাশ, কবিতার কথাÑ জীবনানন্দ দাশ, বাংলার কাব্যÑ হুমায়ুন কবির, কবি ও কবিতাÑ আবুল ফজল, কবিতা শব্দের অঙ্গীকার এবং প্রত্যয়Ñ সৈয়দ আলী আহসান, আমিও আমার কবিতাÑ আল মাহমুদ, আধুনিক কবিতা : আধুনিকতার দর্পণÑ সমিতা চক্রবর্তী, কবির কথা কবিতার কথাÑ অশ্রুকুমার সিকদার, ফলÑ অতুলচক্র গুপ্ত, কবিতা ও অন্তমিলÑ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কবিতা ও প্রসঙ্গ কথাÑ মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ, কবিতার আলোÑ মহাদেব সাহা, কবিতাÑ আবদুল মান্নান সৈয়দ, কবিতার ভবিষৎÑ মোহাম্মদ রফিক, ইসলামের দৃষ্টিতে কবি ও কবিতাÑ ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, কবিতা অনুষঙ্গÑ হাসান আলীম, কবিতার কারুকাজ মোশাররফ হোসেন খান, নতুন কবিতার প্রেক্ষাপট : একটি ভূমিকাÑ গাজী রফিক, ছড়া ও ছড়াকারÑ শরীফ আবদুল গোফরান, কবিতার আকাশ : ভাব ও বিশ্ববীক্ষাÑ মুহম্মদ আবদুল বাতেন, কবি ও কবিতাÑ জাকির আবু জাফর, কবির ভাষা কবিতার ভাষাÑ তৌফিক জহুর।
এ ছাড়াও কবিতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো লিখেছেন আবদুস সাত্তার, সাজ্জাদ, হোসাইন খান, তমিজউদ্দিন লোদী ও আসাদ হাফিজ।
ঘটে যাওয়া সব কিছু হেঁটে যায় স্মৃতির দিকে। জমে থাকে স্মৃতির উপত্যকায়। মুছে যায় কিছু স্মৃতি। কিছু জ্বলজ্বল জেগে থাকে জীবনের পাশে। কালে কালে পলে পলে ফিরে আসে সেসব স্মৃতির মুখ। আহা, জীবন স্মৃতিকে সাথী করে ফেরে কেবল। আজ গতকাল হয়ে যায়। গতকাল মানেই তো স্মৃতির গোনা। জীবন একটি স্মৃতির সমষ্টি। ফেলে আসা পথ ও পথের বাঁকে সেঁধে আছে দিনগুলো। কবিতা উৎসব কিংবা সাংস্কৃতিক উৎসব যা-ই বলি না কেন, কত মুখই তো ছিল। আজ হারিয়েছে অনেক মুখ। চলে গেছে চিরদিনের দিকে। যেখানে চলে যায় সবাই। গেলে ফেরে না আর। আল মাহমুদও চলে গেছেন। তার সভাপতিত্বে ঘটে যাওয়া কবিতা সভা-আসর এবং কবিতা উৎসব এসবই স্মৃতিময় এক দ্যুতি; যা মনের খেয়ায় সময়ে অসময়ে পাল তোলে। ধেয়ে চলে আগামীর কাছে। সময় এগিয়ে যায়। বয়স বেড়ে ওঠে স্মৃতির। জীবন নিতে থাকে অভিজ্ঞতার হিরক পুঁজি।
আল মাহমুদ সংগঠক নন। কিন্তু তাঁর অভিভাবকসুলভ আচরণ ছিল মুগ্ধ হওয়ার মতো। বেশ আন্তরিক স্পর্শে কাছে আসা কবিদের কুশল জানতেন। অনুষ্ঠানে আয়োজকসুলভ মানসতা ছিল না। কিন্তু তিনি আহ্বান করেছেনÑ এ অনুভূতি জাগ্রত থাকত বরাবর। তিনি এ ধরনের উৎসবকে কবির জীবনে কাব্যিক পুঁজি হিসেবেই দেখতেন। উৎসব নতুন দৃষ্টির উদ্বোধনে সহায়তা করে এ সত্যের উচ্চারক ছিলেন তিনি। চলবে

 


আরো সংবাদ



premium cement