জন্ম : ২৪ মে ১৮৯৯, মৃত্যু : ২৭ আগস্ট ১৯৭৬
বিদ্রোহী কবি, বিশ্ব মানবতার কবি, জীবন ও যৌবনের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনিই তার তুলনা। তার সাহসিকতা, উদারতা, তার গ্রহণ বর্জনের ক্ষমতাÑ সাধারণের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে। আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। অনল প্রবাহের কবি সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন শিরাজীকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে গ্রহণ করেছিল নজরুল। আর ইসমাঈল হোসেন শিরাজীর জৈষ্ঠ সন্তান কবি আসাদ-উদ্দৌলা ছিলেন নজরুলের বন্ধু।
সিরাজগঞ্জের সিংহশাবক বাংলার শিরাজী গাজী ইসমাইল হোসেন শিরাজী, প্রথমে উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যশোরের সামান্য দর্জ্জি অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী বাগ্মী শ্রেষ্ঠ মুন্সি মেহেরুল্লাহর নিকট থেকে। তিনিই প্রথম শিরাজীর ব্রিটিশ কর্তৃক বাজেয়াপ্ত গ্রন্থ ‘অনল প্রবাহ’ নিজ অর্থে ছাপিয়ে দিয়ে শিরাজীকে বিখ্যাত করে তুলে ছিলেন। পরবর্তীতে শিরাজী আবার কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীমউদদীন, কায়কোবাদ, গোলাম মোস্তফাসহ সবাইকে অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত করেছিলেন। সে সূত্র ধরেই নজরুল ও আসাদ শিরাজী গড়ে উঠে। অবিভক্ত ভারতের রাজনীতির অন্যতম প্রাণ পুরুষ সুভাষচন্দ্র বসু, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং মুসলিম বাংলার কিংবদন্তী প্রতিম গায়ক আব্বাস উদ্দিন আহমদের মতো ব্যক্তিত্বের সাথে সৈয়দ আসাদ-উদ্দৌলা শিরাজীর ছিল ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব।
১৯৩২ সালে কবি নজরুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ সফরে এসে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন। তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে নিয়ে আসতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন এ প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি তূর্যনাদের ‘অমর কবি সৈয়দ আসাদ-উদ্দৌলা শিরাজী। সুদূর কলকাতা থেকে নজরুল ট্রেনে সিরাজগঞ্জ বাজার রেল স্টেশন নামবেন। এদিকে শহরের কিছু অল্প শিক্ষিত মৌলবি কবির প্রতি আক্রোশের কারণে নজরুল ইসলামকে শহরে ঢুকতে দেবে না কিংবা লালগালিচা সংবর্ধনা জায়েজ না বলে বেশ কিছু লোকবল নিয়ে গোপনে বাধা প্রদানের প্রস্তুতি নিয়ে আত্মগোপন করে আছে। নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন এসে থামল, সম্মেলন কমিটি তাদের সমর্থকদের নিয়ে কবিকে অভ্যর্থনার জন্য ভিড় জমিয়েছে। কিন্তু এক নজর কবিকে দেখার জন্য এসেছে হাজার হাজার মানুষ। বাজার রেল স্টেশনে মানুষের ঢল নেমেছে। সম্মেলন কমিটির লোকজনের মুহুর্মুহু সেøাগানে এলাকা প্রকম্পিত। ‘নারায়ে তাকবির- আল্লাহ আকবর’ কবি নজরুলের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম। বিদ্রোহী কবি জিন্দাবাদ ধ্বনিতে মুখারিত রেল স্টেশন। মৌলবিরা এবার গোপনীয়তা ভেঙে প্রকাশ্যে বাধার দেয়াল তুলে ধরে কবিকে নামতে দেবে না। এসব কম শিক্ষিত মৌলবিরা কোনো কথাই শুনছে না, কোনো কথা মানছেও না। একপর্যায়ে কবি আসাদ শিরাজী সবাইকে মুনাজাত ধরার আহ্বান জানালেন। ‘আল্লাহুমা আমিন’Ñ বলার সাথে সাথে সবাই দু’হাত তুলে মুনাজাতে শরিক হলো। সম্মেলনের সভাপতি মওলানা সৈয়দ আসাদ-উদ্দৌলা শিরাজী মুনাজাতে নজরুলের স্বপক্ষে তার ধর্মীয় দিক তুলে ধরলেন। প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মুনাজাতের কথায় পরোক্ষ বক্তৃতায় সবার মন গলে গেল। মৌলবিরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে সটকে পড়লেন। সৈয়দ আসাদ শিরাজীর জ্ঞানগর্ভ মুনাজাতের মধ্যে ইসলাম ধর্মের উদারতার কথা সুন্দরের কথা মুসলমানদের ঐক্যের কথা এবং নজরুলের অবদানের কথা বললেনÑ হৃদয়গ্রাহী ভাষায়।
শুরু হলো নজরুলের সিরাজগঞ্জ সফর উপলক্ষে লালগালিচা সংবর্ধনা। সবাই কবির দিকে ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছে। সারা শহর যেন পুষ্প বৃষ্টি হচ্ছে। শেষতক পূর্বেকার নাট্যভবন বর্তমানে ভাসানী মিলনায়তনে যুব সম্মেলন শুরু হয়। কবি নজরুলের একনিষ্ঠ ভক্ত কালজয়ী গায়ক আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গীত দিয়ে সভার কাজ শুরু। তারপর প্রস্তুতি কমিটি সভাপতি সৈয়দ আসাদ-উদ্দৌলা শিরাজী বক্তৃতা করেন।
কবি নজরুল তার সভাপতির বক্তৃতায় বলেনÑ “আজ সিরাজগঞ্জে আসিয়া সর্বপ্রথম অভাব অনুভব করিতেছি, আমাদের মহানুভব নেতা-বাংলা তরুণ মুসলিমের অগ্রদূত, তারুণ্যের নিশান- বর্দার মৌলানা সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী সাহেবের। সিরাজগঞ্জের শিরাজীর সাথে বাঙলার শিরাজ, বাঙলার প্রদীপ নিভিয়া গিয়াছে। যাঁহার ‘অনল-প্রবাহ’ সম বাণীর গৈরিকনিংস্রাব জ্বালাময়ী ধারা মেঘ-নিরন্ধ্র গগনে অপরিমাণ জ্যোতি সঞ্চার করিয়াছিল, নিদ্রাতুরা বঙ্গদেশ উন্মাদ আবেগ লাইয়া মাতিয়া উঠিয়াছিলÑ ‘অনল-প্রবাহে’র সেই অমর কবির কণ্ঠস্বর বাণীকুঞ্জে আর শুনিতে পাইব না। বেহেশতের বুলবুলি বেহেশতে উড়িয়া গিয়াছে। জাতির, কওমের, দেশের যে মহাক্ষতি হইয়াছে আমি শুধু তাহার কথাই বলিতেছি না, আমি বলিতেছি একার বেদনার ক্ষতির কাহিনী। আমি তখন প্রথম কাব্য-কাননে ভয়ে ভয়ে পা টিপিয়া টিপিয়া প্রবেশ করিয়াছি- ফিঙে বায়স বাজপাখির ভয়ে ভীরু পাখির মত কণ্ঠে ছাড়িয়া গাহিবারও দুঃসাহস সঞ্চয় করিতে পারি নাই, নখ- চঞ্চুর আঘাতও যে না খাইয়াছি এমন নয়- এমনি ভীতির দুর্দিনে মানিঅর্ডারে আমার নামে দশটি টাকা আসিয়া হাজির। কুপনে শিরাজী সাহেবের হাতে লেখা তোমার লেখা পড়িয়া সুখী হইয়া দশটি টাকা পাঠাইলাম। ফিরাইয়া দিও না, ব্যথা পাইব। আমার থাকিলে দশ হাজার টাকা পাঠাতাম।”
চোখের জলে স্নেহ-সুধাসিক্ত ওই কয় পঙ্ক্তি লেখা বারেবারে পড়িলাম, টাকা দশটি লইয়া মাথায় ঠেকাইলাম। তখনো আমি তাঁহাকে দেখি নাই। কাঙাল ভক্তের মত দূর হাতেই তাঁহার লেখা পড়িয়াছি, মুখস্থ করিয়াছি, শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়াছি। সেই দিন প্রথম মানস-নেত্রে কবির স্নেহ-উজ্জ্বল মূর্তি মনে মনে রচনা করিলাম, গলায় পায়ে ফুলের মালা পরাইলাম। তাহার পর ফরিদপুর ‘বঙ্গীয় প্রাদেশিক কনফারেন্সে, তাঁহার জ্যোতির্বিমণ্ডিত মূর্তি দেখিলাম। দুই হাতে তাঁহার পায়ের তলার ধুলি কুড়াইয়া মাথায় মুখে মাখিলাম। তিনি আমায় একেবারে বুকের ভিতর টানিয়া লইলেন, নিজ হাতে করিয়া মিষ্টি খাওয়াইয়া দিতে লাগিলেন। যেন বহুকাল পরে পিতা তাহার হারানো পুত্রকে ফিরাইয়া পাইয়াছেন। আজ সিরাজগঞ্জে আসিয়া বাঙলার সেই অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, মনস্বী দেশপ্রেমিকের কথাই বারে বারে মনে হইতেছে। এ যেন হজ করিতে আসিয়া কাবা শরীফ না দেখিয়া ফিরিয়া যাওয়া। তাঁহারই প্রেরণায় হয়ত আজ আমরা তরুণেরা এই যৌবনের আরাফাত ময়দানে আসিয়া মিলিত হইয়াছি। আজ তাঁহার উদ্দেশ্য আমার অন্তরের অন্তরতম প্রদেশ হইতে শ্রদ্ধা-তসলিম নিবেদন করিতেছি, তাঁহার দোয়া ভিক্ষা করিতেছি। এরপর তিনি শিরাজী জন্ম, কর্ম ও সমাধি ভূমি বাণিকুঞ্চ শিরাজী বাড়ি গাজী ইসমাইল হোসেন শিরাজী মাজার জিয়ারত করেন। শিরাজীর জ্যোষ্ঠ পুত্র সৈয়দ আসাদ শিরাজী নজরুলকে আতর দিয়ে বরণ করে নেন। এবং সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খাঁটি ছানা তৈরি বড় বড় সন্দেশ, ক্ষীর তক্তি, বেলের মোরব্বা, নারিকেলের চিড়া, ক্ষীর খাসা দই মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করেন। তিনি বলেন, আসাদ শিরাজী আমাকে সম্মান ও আদর আপ্যায়ন করেছেন সারা বাংলায় এমন আদর আমি কোথাও পাইনি।
এ প্রসঙ্গে ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’য় বাংলার শ্রেষ্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দিন উল্লেখ করেন সিরাজগঞ্জের যুব সম্মেলন ১৯৩২ সালে। কাজী দা (নজরুল ইসলাম) আর আমাকে সেই সভায় নিয়ে আসবার জন্য সৈয়দ আসাদ-উদ্দৌলা শিরাজী এলো কলকাতায়। কাজী দা বলেন, তোমার (আসাদ শিরাজী) এ আহ্বান কি উপেক্ষা করতে পারি? জানো আব্বাস আসাদ শিরাজী হবে বাংলার তরুণদের নকীব, তুমি, আমি শিরাজী এই তিনজন মিলে বাংলাদেশ জয় করতে পারি।’’ স্মৃতি চারণে আব্বাস উদ্দিন বলেন, পাবনা শাহজাদপুর। প্রাইমারি শিক্ষক সম্মেলনে আমাকে কলকাতা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। মন্ত্রী তমিজউদ্দীন খাঁ সভাপতি। বক্তা সৈয়দ আসাদ-উদ্দৌলা শিরাজী, গায়ক আমি। প্রায় বিশ-পঁচিশ হাজার লোকে সমস্ত মাঠটা ভরে গেছে। মন্ত্রীর জন্য বিশেষ জায়গায় থাকার বন্দোবস্ত। আসাদ শিরাজীও আমার জন্য স্কুল ঘরের একটা রুমে ভাঙ্গা চার খানা বেঞ্চ দিয়ে একখানা বিছানা করে দেয়া হয়েছে। মনটা বেশ বিক্ষুব্ধ। সভায় তমিজ উদ্দীন সাহেবের পর আসাদ শিরাজী আমাকে বলেন, এমন একটা গান ধর যাতে আমি খুব উত্তেজিত হতে পারি। গান ধরলাম নজরুলের ‘‘কারার ঐ লোহ কপাট ....।’’ এরপর আসাদ শিরাজী আগুনের মতো বক্তৃতা দিলো। তখনকার দিনে আসাদ শিরাজীর মতো বক্তা সত্যি দুর্লভ ছিল। অনেকের বক্তৃতা শুনেছি কোনোটাতে মৌলিকতা নেই, একই জিনিসের পুররাবৃত্তি করে যেত বিভিন্ন সভায় কিন্তু আসাদ শিরাজীর সাথে বাংলাদেশে প্রায় শ’ খানেকের বেশি সভায় জোগদান করে আমি কোনো সভাতেই এক বিষয় বন্তুর পুনরাবৃত্তি শুনিনি।
জাতীয় কবি নজরুল সম্পর্কে লিখতে গিয়ে প্রয়াত দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মাদ আজরফ লিখেছিলেন সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর সুযোগ্য জোষ্ঠ পুত্র বিশিষ্ট কবি সৈয়দ আসাদ শিরাজী আমাদের এক নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিলেন।.... ১৯৬১ খিষ্টাব্দের জুন মাসে সকল সাহিত্যিক ও সাহিত্য মোদী সম্মিলিতভাবে নজরুল জয়ন্তী পালন করার উদ্দেশ্যে এক সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করা হয়। তাতে ঢাকা থেকে আমন্ত্রিত হয়ে মুসলিম সংস্কৃতি বিশেষ কর্ণধার প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ প্রথিতযশা কথা শিল্পী আবুল ফজল, ছান্দসিক কবি আবদুল কাদির প্রমূখ অংশগ্রহণ করেন। এসব সাহিত্যিকগনের সঙ্গে আমন্ত্রিত হয়ে সৈয়দ আসাদ উদ্দৌলা শিরাজীও সে সম্মেলনে যোগদান করেন। তিনি যখন অনুষ্ঠানে প্রবেশ করলেন, তখন সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত সকলেই স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার সারা বদন মন্ডলে এক পবিত্র জ্যোতি বিচ্ছুরিত হচ্ছে। এরপর নজরুল ইসলাম সম্পর্কে সৈয়দ আসাদ শিরাজী যে বক্তৃতা দেন, তা ছিল বাস্তবিকই মর্মষ্পর্শী। এতদিন আমরা কবি নজরুল ইসলামকে সর্ব অমঙ্গল বিধ্বংসী বিদ্রোহের অগ্রদূত বলেই ধারণা করেছিলাম। নজরুল যে আধ্যাতিœক জীবনে এতো উচ্চস্তরে আরোহন করেছেন সে সন্বন্ধে আমাদের কোন ষ্পষ্ট ধারণা ছিল না। সৈয়দ আসাদ উদ্দৌলা শিরাজী তার সাবলীল ও হৃদয়গ্রাহী ভাষায় তা ব্যক্ত করে আমাদের এক নতুন সত্যের সন্ধান দিয়ে মুগ্ধ করেন। আধাতিœক জীবনে খুব উচ্চ পর্যায়ে আরোহন না করলে অন্য কোনো আধ্যাতœবাদী সাধক সমন্ধে এরূপ মন্তব্য করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
নজরুল ইসলামের একটি পত্র এম সেরাজুল হককে লেখা (৭ই ফাগুন ১৩৪৮) তিনি লিখছিলেন, ‘আধ্যাত্মিক জগতের যে অপূর্ব ব্যাপার আমি সত্য সত্যই প্রত্যক্ষ করিয়াছি তাহাতে বাংলা আসাদের তরুন মোজাহেদদের ইমামতি করিবার, নেতা হইবার, নিশান উড়াইবার একমাত্র অধিকারী শ্রীমান সৈয়দ আসাদ উদ্দৌলা শিরাজী, আমার ধ্যান জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্রই সে শুধু নয়Ñ সে আমার ইমাম নকীব। আপনারা জানেন না কিন্তু আমি জানি, আসাদ শিরাজী কত বড় শক্তির অধিকারী, সে হয়তো নিজেও জানে না যে তাহার অজ্ঞাতে তাহার শিরে সমস্ত অলি আল্লাহদের রহমতের দোয়া কেমন অজস্র ঝরে ঝরিয়া পড়িতেছে। গোটা জাতি যখন মন্ত্রী, মেম্বর ও এ্যাসেম্বলীর দিকে হা করিয়া তাকাইয়া রহিয়াছে সেই সময় কিসের আহবানে পাবলিসিটি ডিপাটমেন্টের মাসিক এক শ’ টাকা বেতনের চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিয়া এই নিঃস্ব যুবক আসাদ শিরাজী ছুটিয়া চলিয়াছে আজমীর শরীফের দিকে।
কাজী নজরুল ইসলাম শিরাজীকে চিনতে ভুল করেননি। সৈয়দ আসাদ শিরাজী কবি নজরুলের কাছ থেকে যেমন তার কর্ম জীবনের প্রশংসা পেয়েছেন। তেমনি শিরাজীও নজরুলের প্রশংসায় মঞ্চমুখ হয়েছেন। তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। যেমন কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসার জন্য সরকারি অর্থ মনজুর করার জন্য পুরানা পল্টনে জনসভায় প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আসাদ শিরাজী। নজরুল ইসলামের চিকিৎসার অর্থ মনজুরের সভাপতির ভাষণে মওলানা শিরাজী বলেন, বিদেশী শাসনের লৌহ পিঞ্জরে আবদ্ধ হইয়া ভারতের কোটি কোটি দিশাহারা মুসলমান যখন অন্ধকারে পথ হাতড়াইতে ছিল, কাজী নজরুলের কণ্ঠে তখন উচ্চারিত হয় পথ চলার গান, ভাঙ্গার গান- নতুনকে গড়ার গান। বিদেশী শোষকের পদভার বহনের ফলে জাতির শিড় দাঁড়া যখন ভাঙ্গিয়া পড়ে, কবির বিদ্রোহী কণ্ঠ হইতে তখনই আমরা শুনিতে পাইয়াছিলাম, ‘‘কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল করবে লোপাট’’ গান।
তিনি বলেন, কাজী নজরুল যুগের কবি, বেদনার কবি ও মানুষের কবি। তাই তিনি আজ আমাদের কাছে এত জীবন্ত। বিশ্বের শক্তিশালী এবং প্রগতিশলী জাতির সাথে বাংলা তথা গোটা ভারতের মুসলমানরাও সমান তালে আগাইয়া চলুক, ইহাই ছিল কবির জীবনের একমাত্র সাধনা। কবির এ সাধনা ব্যর্থ হয় নাই। স্বাধীনতা হাসেলের ভিতর দিয়া কবির বিদ্রোহী মনের সে আকাঙ্খা আজ বাস্তবতায় ফুটিয়া উঠিয়াছে। জনাব শিরাজী বলেন, কবি নজরুল ইসলাম ঘুমন্ত বাংলার কোটি কোটি সর্বস্বহারা মুসলমানের প্রেরণা লাভের জীবন্ত আগ্নেয়গিরি স্বরূপ। তাঁর কবিতা, গান ও সাহিত্যে হইতে জগৎ অফুরান্ত প্রেরনা লাভ করিয়া আসিতেছে। আজাদী হাসেল হইলেও কবির নিকট হইতে আমাদের চাওয়া ও পাওয়া এখনও শেষ হয় নাই। কবির গান, কতিবা ও সাহিত্যে যে বানী ঝংকৃত হইয়াছিল তা বিচার করিলে মনে হয় যে, ‘‘বিদ্রোহী রনক্লান্ত কবি’’ যেন আজও শান্ত হতে পারেন নাই। কবি আজ রোগগ্রস্ত। তাঁহার কণ্ঠ রোধ হইয়া লেখনি থামিয়া গিয়েছে। অথচ কবির সু চিকিৎসার জন্য যথাসময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয় নাই। জাতির পক্ষে ইহা মোটেও গৌরবের কথা নহে। তবে আনন্দের বিষয় যে, চিকিৎসার জন্য কবিকে শেষ পর্যন্ত লন্ডনে প্রেরন করা হইয়াছে। বক্তৃতা শেষে গায়ক আব্বাস উদ্দীন আহমদ, সোহরাব হোসেন, ফেরদৌসী বেগম প্রমুখ বিশিষ্ট শিল্পী কবির জীবনের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সভায় নি¤œলিখিত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারকে নজরুল ইসলামকে নিয়মিত মাসিক ভাতা দিতে হবে। তৎকালীন পাকিস্তান পার্ল্টামেন্টে ‘‘নজরুল একাডেমী’’ স্থাপনের জন্য যে বিল উত্থাপন করা হয় তাতে সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। এছাড়া তৎকালীন দেশের জন সাধারণকে ও মুক্ত হস্তে নজরুল নিবাস তহবিল অর্থদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। কবি, গুণগাহী, শিল্পী, সাংবাদিক, সাহিত্যিকও ঢাকা শহরের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা