০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আবিষ্কার বেগমের দিন কাটে কষ্টে

- ছবি : নয়া দিগন্ত

‘আমি অপার হয়ে বসে আছি ওহে দয়াময়/ পাড়ে লয়ে যাও আমায়/ পাড়ে লয়ে যাও আমায়’- লালন সাঁই যথার্থই বলেছেন। আমাদের চারপাশে এমন অনেক প্রবীণ ‘অপার’ হয়ে বসে আছেন। পরিবারে এরা অনেকাংশেই নিপীড়িত, নির্যাতিত ও অবাঞ্ছিত মানুষ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন। তেমনই একজন মানিকগঞ্জের আবিষ্কার বেগম।

আবিষ্কার বেগম ৮০ বছরে পা রেখেছেন। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার আঙ্গারিয়া (আবাসন ২)-এর বাসিন্দা। স্বামীর কোনো জমি না থাকায় বর্তমানে আঙ্গারিয়া আবাসনে (২) বসবাস করছেন। স্বামী মৃত আফছার আলী ১৯৭১ সালে অসুস্থতার কারণে মারা যান। বাবার বাড়ি ঘিওর উপজেলার হাট ঘিওরে।

‘আবিষ্কার বেগম’ নামের বিষয়টি নিয়ে কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এটি আমার ছোটবেলার নাম। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই শুনে আসছি আমার নাম আবিষ্কার বেগম। এর পেছনে অন্য কোন কারণ বা রহস্য নেই।

তার দুই মেয়ে ছিল রেলিয়া ও রেজিয়া। ছোট মেয়ে রেজিয়া ১৬ বছর আগে মারা যায়। আর রেলিয়ার বিয়ে হয় মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকায়। রেলিয়ার এক ছেলে হওয়ার পর স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়। আবার একটা বিয়ে করে রেলিয়া বেগম। দ্বিতীয় স্বামীর আয় রোজগার ভালো না থাকায় ছেলেকে মায়ের কাছে রেখে বিদেশ চলে যায়। রেলিয়া বেগমের ছেলের বয়স এখন ১৭ বছর, একটা খাবার হোটেলে কাজ করে। যা রোজগার করে, বন্ধুবান্ধব নিয়েই খরচ করে।

বৃদ্ধা নানীর দিকে কোনো খেয়াল নেই তার। নানীর কোনো কাজে সাহায্যই করে না। রেলিয়া বেগম যা আয় করেন তা স্বামীকে দেন আর মাকে চিকিৎসা বাবদ মাঝে মধ্যে কিছু টাকা দেন।

এ বয়সে (আবিষ্কার বেগম ) রান্নাবান্না করে খাওয়া তার জন্য খুবই কষ্টকর। তাকে দেখার মতো এবং দু’বেলা রান্না করে দেয়ার মতো কেউ নেই। তাই এই বয়সে শরীরের ব্যথা নিয়ে, হাত পুড়ে রান্না করে খেতে হয় তাকে। আর দুঃখ-কষ্টে সারাক্ষণ বলতে থাকেন- ‘আল্লাহ আমায় নিয়ে যাও’।

পরিবার কিংবা সামাজিকভাবে তেমন কোনো সহযোগিতা ও স্বীকৃতি তার কপালে জোটেনি। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বারসিকের কাজের মধ্য দিয়ে তিনি বয়স্কভাতা পান। আর রাস্তার পাশের শাকসবজি তুলে বাজারে বিক্রি করে কিছু আয় করেন। এটি দিয়ে কোনো মতে ওষুধ আর খাওয়া চলে।

আবিষ্কার বেগমের পাশে কোনো সদয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে এসে সহযোগিতা করে, তাহলে এই বৃদ্ধার জীবনে বড় উপকার হতো। এখনো তিনি নিজেই সব কাজ করেন, কারো ওপর নির্ভরশীল না থেকে যা পান তা দিয়েই কোনো মতে দিনাতিপাত করেন। স্বনির্ভর এক জীবনই তিনি পরিচালনা করে আসছেন। তবে জীবনসায়াহ্নে এসে তিনিও কারো না কারো সহযোগিতার প্রয়োজন বোধ করেন। 


আরো সংবাদ



premium cement