১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


১৫ জন জড়িত : ইসি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি
-

রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সাথে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ১৫ জন জড়িত রয়েছেন। তবে এদের পদমর্যাদা ও নাম এখনই বলতে নারাজ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) উইংয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় সম্পৃক্ত করার কাজে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত, এ কাজে কতজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি এ মুহূর্তে নাম বলতে চাই না। তবে আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের নাম প্রকাশ করব। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার স্বার্থে আমরা এখনই তাদের নাম প্রকাশ করছি না। এই সংখ্যা ১৫ জনের মতো। তাদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইসি ইতোমধ্যে শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় ইসির এনআইডি বিভাগের পরিচালক আবদুল বাতেন, উপপরিচালক ইকবাল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইসির সর্বোচ্চ কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অচিরেই আপনারা তাদের নাম-পরিচয় জানতে পারবেন। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের ৬১ জনের তালিকা পেয়েছি, যারা ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছেÑ তারা কিভাবে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করল এবং কারা তাদের সহযোগিতা করল। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইসির এনআইডি বিভাগ অনিয়ম-দুর্নীতি কমাতে শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে জানিয়ে ডিজি বলেন, আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের মূল ডেটাবেজ সুরক্ষিত আছে। যারা এখানে ঢোকার অপচেষ্টা করেছিল তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইটি বিভাগ এই অপচেষ্টাকারীদের চিহ্নিত করেছে। আমরা কাউকে ছাড় দেবো না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। তিনি বলেন, এটা বাস্তবায়ন করতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সিআইডি, দুদক, এসবির সহায়তা প্রয়োজন হলে আমরা তাদের সহায়তাও নেব। এনআইডিকে সুরক্ষিত করার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার আমরা তাই করব।
ল্যাপটপ চুরি সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১২ সালে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে চারটি এবং বিভিন্ন সময় আরো তিনটি ল্যাপটপ হারিয়েছিল। এসব ল্যাপটপ দিয়ে ইসির সার্ভারে প্রবেশ করা যাবে না। কারণ সার্ভারে প্রবেশের জন্য ইসি নির্ধারিত পাসওয়ার্ড দেয়া মডেম লাগবে।
এনআইডি ডিজি বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে বিভিন্নভাবে চাকরিচ্যুতরা যাতে কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজে সংশ্লিষ্ট হতে না পারে সে জন্য মাঠপর্যায়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধের কারণে ইসি থেকে যারা চাকরিচ্যুত হয়েছে তাদের তালিকা আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি। ইসির কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছি যাতে কোনোভাবেই অস্থায়ী ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেয়া না হয়। ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবেও যাতে তারা নিয়োগ না পায় তারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যেসব প্রজেক্ট থেকে ইসিতে জনবল সরবরাহ করা হয় তাদেরও এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এসব লোক নিয়োগ দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চাকরিচ্যুতদের আমরা কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখছি। ইতোমধ্যে আমরা বিষয়টি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা কোনোভাবেই ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ করতে না পারে।
এনআইডি ডিজি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে ইসির কর্মকর্তাদের বদলি করা হবে, যাতে তারা একই জায়গায় দীর্ঘ দিন কাজ করতে না পারে। একই সাথে আমাদের নিবন্ধন কর্মকর্তাদের পাসওয়ার্ড যেন অন্যরা ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য কড়া নজরদারি করা হবে। যদি কেউ হস্তান্তর করে তাহলে এই ব্যর্থতার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ব্যাপারে যাদেরই সম্পৃক্ততা পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। সে যেই হোক না কেন। এখানে যদি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে হয় আমরা তা-ও করব। ফৌজদারি মামলা করতে হলে আমরা তা করব। কারো বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে আমরা দুদকের সহযোগিতা নেব। দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য যা যা করতে হয় সবই করব।

 


আরো সংবাদ



premium cement