০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অনলাইনের ভুল তথ্য শিশুদের জন্য বড় হুমকি : ইউনিসেফ

-

শিশুদের জন্য ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক হুমকির অন্যতম হচ্ছে অনলাইনে ভুল তথ্য প্রাপ্তি। এ ছাড়া অন্যগুলো হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী সঙ্ঘাত, ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সঙ্কট, তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক অসুস্থতা বৃদ্ধির ক্রমবর্ধমান ধারা ইত্যাদি।
গতকাল ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোরের এক খোলা চিঠিতে এ কথা বলা হয়েছে। শিশু অধিকার সনদ গৃহীত হওয়ার ৩০ বছর উপলক্ষে এক খোলা চিঠিতে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক শিশুদের জন্য ক্রমবর্ধমান ও ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে সতর্কও করেছেন। এর পাশাপাশি এসব হুমকি নিরসনে প্রচেষ্টা জোরদার করার উপায়ের রূপরেখা দেয়া হয়েছে। ইউনিসেফের পক্ষ থেকে বিশ্বের সর্বাধিক প্রশংসিত মানবাধিকার চুক্তি শিশু অধিকার সনদের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে এই চিঠি প্রকাশ করা হয়।
এতে ফোর লিখেছেন, ‘আপনাদের প্রজন্ম, আজকের শিশুরা নতুন এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ও বৈশ্বিক পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে, যা আপনাদের বাবা-মায়ের কাছে অকল্পনীয় ছিল। জলবায়ু আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি বদলে যাচ্ছে। বৈষম্য আরো বাড়ছে। বিশ্ব নিয়ে আমাদের উপলব্ধি বদলে দিচ্ছে প্রযুক্তি। আর আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সংখ্যক পরিবার অভিবাসন করছে। শৈশব বদলে গেছে এবং এর সাথে সাথে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে হবে।’ তার চিঠিতে বিশ্বব্যাপী শিশুদের জন্য আটটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলোÑ দীর্ঘস্থায়ী সঙ্ঘাত; দূষণ ও জলবায়ু সঙ্কট; মানসিক অসুস্থতা বৃদ্ধি; গণ-অভিবাসন এবং জনসংখ্যার স্থানান্তর; রাষ্ট্রহীনতা; ভবিষ্যতের কাজের জন্য দক্ষতা; তথ্য অধিকার ও অনলাইনে গোপনীয়তা এবং অনলাইনে ভুল তথ্য।
চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, অনলাইনে ভুল তথ্য ইতোমধ্যে শিশুদের অনলাইনে যৌন হয়রানি, অমর্যাদা এবং অন্যান্য ধরনের নিগ্রহের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলছে; গণতান্ত্রিক আলোচনাকে বিতর্কিত করে তুলছে; এবং অনলাইনে ভুল তথ্য দ্বারা চালিত হয়ে ভ্যাক্সিনের প্রতি অবিশ্বাসের কারণে কিছু জনগোষ্ঠীতে এমনকি প্রাণঘাতী রোগগুলোর পুনরুত্থানের পথ তৈরি করছেÑ যার ফলস্বরূপ এমন একটি পুরো প্রজন্ম তৈরি হতে পারে যারা কোনো কিছুই বিশ্বাস করবে না। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইউনিসেফ পরীক্ষামূলকভাবে মিডিয়া সাক্ষরতা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যেমন মন্টিনিগ্রোতে রয়েছে ইয়াং রিপোর্টার্স প্রকল্প; যার লক্ষ্য হচ্ছে তরুণ জনগোষ্ঠীকে অনলাইনে ভুল তথ্য চিহ্নিতকরণ, বিশেষ করে কিভাবে অনলাইনে বিষয়বস্তু পরীক্ষা করা যায় তা শেখানো এবং পাশাপাশি দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার ভূমিকা ও কৌশলগুলো শেখানো।
ফোর লিখেছেন, ‘ডিজিটাল যুগে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্য সহজাতভাবেই এগিয়ে থাকবেÑ আমরা আর এই সরল আশ্বাসের ওপর ভর করে থাকতে পারি না এবং এ কারণে সমাজ হিসেবে আমাদের অবশ্যই অনলাইনে যে মিথ্যাচারের ধারা তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
সঙ্ঘাত বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ গৃহীত হওয়ার পর থেকে বর্তমান সময়েই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দেশে সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বর্তমানে প্রতি চারজন শিশুর মধ্যে একজন সহিংস লড়াই বা দুর্যোগে আক্রান্ত দেশগুলোতে বসবাস করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্ক করে চিঠিতে বলা হয়েছে, শিশুদের ইতোমধ্যে এই গ্রহে যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে তার পাশাপাশি একটি বৈশ্বিক জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে, যা গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিশুদের বেঁচে থাকার ও বিকাশের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ অর্জনকেই ক্ষুণœ করে দিতে পারে। চরম আবহাওয়াগত পরিস্থিতি ও বাতাসে বিষাক্ততা বৃদ্ধি, দীর্ঘস্থায়ী খরা ও আকস্মিক বন্যাÑ সব কিছুই এই সঙ্কটের অংশ এবং অসামঞ্জস্যহীনভাবে দরিদ্রতম, সবচেয়ে অরক্ষিত শিশুরাই এসবে আক্রান্ত হচ্ছে।
সবশেষে চিঠিতে জানানো হয়, শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠী এবং তাদের সঙ্গীরা যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে সেগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য সমাধান খুঁজে বের করতে তারা ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে আন্দোলন তৈরি করেছেন এবং এ ক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্ব অনুসরণ করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement