০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ১৯ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত

-

বগুড়ার গাবতলী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। ১৯৯৯ সালের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসির) ১৮তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও তার কোনো পদোন্নতি হয়নি। যোগদানকৃত পদেই প্রায় দুই দশক দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্য দিকে ওই উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল ওয়াজেদ আনসারী। যিনি ২০১৩ সালের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসির) ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর পদোন্নতি পেয়েছেন সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে। নিজের চলাফেরার জন্য পেয়েছেন সরকারি গাড়ি। থাকছেন সরকারি বাসায়।
আর রফিকুল ইসলামের সাথে ১৮তম বিসিএস পরীক্ষায় যোগদান করা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা এরই মধ্যে দু’টি পদোন্নতি পেয়েছেন। সহকারী সচিব হিসেবে যোগদান করার পর হয়েছে সিনিয়র সহকারী সচিব। এরপর আবারো পদোন্নতি পেয়ে হয়েছে উপসচিব। ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ের জন্য পাচ্ছেন ৩০ লাখ টাকার সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা। গাড়ি ব্যবস্থাপনার জন্য পাচ্ছেন ৪৫ হাজার টাকা। এরপর এখন যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার প্রহর গুনছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনার একটি কমিটি আছে যেটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। সহসভাপতি থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আর সদস্য সচিব থাকেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। সভাপতির অনুপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভার সভাপতিত্ব করেন। এভাবে ১০ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ১৫ ব্যাচের জুনিয়র কর্মকর্তার অধীনে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।
উপজেলার ত্রাণ বিতরণে ট্যাগ অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এসব সিনিয়র কর্মকর্তাদের। যেখানে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র সহকারী কমিশনারকেও (ভূমি) রাখা হয় না। এ ছাড়াও থানার নন ক্যাডার কর্মকর্তা ওসি ও জুনিয়র কর্মকর্তা এসিল্যান্ড গাড়ি সুবিধা পেলেও বঞ্চিত রয়েছে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা।
এ ছাড়াও জাতীয় নির্বাচনে ১০ থেকে ১২ ব্যাচের জুনিয়র কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও সিনিয়র কর্মকর্তাদের প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৮তম বিসিএস থেকে ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদান করা হলেও তাদের কোনো পদোন্নতি প্রদান করা হয়নি। এর ফলে হতাশা নিয়েই এরই মধ্যে তিনজন কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৯৮৫ সালে বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার সৃষ্টি হয়। এই ক্যাডারে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদ রয়েছে ২৩০টি। সহকারী পরিচালক পদ রয়েছে ১৬টি, উপপরিচালক পদ রয়েছে ৭০টি, পরিচালক পদ রয়েছে ৫টি, মহাপরিচালক পদ রয়েছে ১টি। এর মধ্যে উপপরিচালক পদে কাজ করছেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের নন ক্যাডার কর্মকর্তারা। আর পরিচালক ও মহাপরিচালক পদে পদায়ন করা হয়েছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের। যদিও এই পদগুলোতে পদোন্নতির মাধ্যমে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের পদায়ন করার কথা। কিন্তু পদ থাকা সত্বেও ক্যাডার অফিসারদের সময়মত পদোন্নতি প্রদান না করায় ক্রমান্বয়ে জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জটিলতা নিরসনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ কখনই নেয়া হয়নি। পক্ষান্তরে, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়ন করে পরিস্থিতি আরো জটিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া কৌশলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। মূলত বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা) ক্যাডারে ‘উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা’ হিসেবে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ১৯৯৬ সালে কৌশলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত অফিস আদেশের বরাতে তৎকালীন মহাপরিচালক কর্তৃক উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়কে বিধিবহির্ভূতভাবে প্রশাসনিক ও আর্থিকভাবে দু’টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে মেডিক্যাল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) পদনামে ডাক্তার নিয়োগ প্রদান করে। যার নিয়োগে সুস্পষ্ট কোনো নিয়োগ বিধি নেই। একটি নন ক্লিনিক্যাল অধিক্ষেত্র এবং একটি ক্লিনিক্যাল অধিক্ষেত্র নামে অভিহিত হচ্ছে। নন ক্লিনিক্যাল অংশের ডিডিওশিপ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে এবং ক্লিনিক্যাল অংশের ডিডিওশিপ মেডিক্যাল অফিসারকে (এমসিএইচ-এফপি) প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে একই অফিসে দু’টি সমান্তরাল প্রশাসন এবং ডিডিওশিপ চলমান রয়েছে। ফলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সমন্বয় ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এখন ক্লিনিক্যাল অংশের স্টাফদের ওপর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ ছাড়া একাধিক ডিডিওশিপ থাকায় উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। একই অফিসে দু’জনের ডিডিওশিপ থাকায় একই কোডে দু’জনকে বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ নয়া দিগন্তকে বলেন, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। এ জন্য সেখানে যোগাযোগ করার জন্য প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন তিনি।
একাধিকবার স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
যেসব পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশকে ১.১৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিলো আইএমএফ পিরোজপুরের ৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীরা হলেন যারা গাজীপুরে কলেজছাত্র খুনের ঘটনায় মূল হোতাসহ গ্রেফতার ২ এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় ওয়ার্ল্ড হ্যান্ড হাইজিন ডে পালিত সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে টিকটকের মামলা ফোনে লাদেনের ছবি, আইএসআইএসের পতাকা থাকা মানেই উগ্রবাদী নয় : দিল্লির হাইকোর্ট কুমিল্লার ৩ উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টের মালিক সোহেল গ্রেফতার কাউখালীতে চেয়ারম্যান সামশু, ভাইস চেয়ারম্যান নিংবাইউ বান্দরবান সদরে বিএনপি ঘরানার আব্দুল কুদ্দুস চেয়ারম্যান নির্বাচিত বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে চায় তুরস্ক

সকল