০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভৌগোলিক অবস্থান দায়ী

মওসুমি আবহাওয়ায়ও প্রচণ্ড গরম

-

মওসুমি আবহাওয়ায়ও দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বিরাজ করছে প্রচণ্ড গরম। কখনো এসব অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। কখনো বৃষ্টি হলে কিছুটা শীতল হাওয়া বইলেও তা ক্ষণস্থায়ী। এই অঞ্চলগুলোতে রোদের তাপে মাটি থেকে বাষ্প উঠে বাতাসকে ভারী করে ফেলায় শরীর থেকে প্রচণ্ড ঘাম বের হয়। এসব অঞ্চলে এত গরম যে ভরদুপুরে মানুষের মাথার ওপর আচ্ছাদন ছাড়া চলাফেরা করা যায় না। এমনকি ভরদুপুরে গবাদিপশু পর্যন্ত ঘাস খাওয়ার জন্য খোলা মাঠে যেতে আগ্রহী হচ্ছে না।
দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা বিভাগের বেশির ভাগ অঞ্চল, পশ্চিমের রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া এবং ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় অস্বাভাবিক আবহাওয়া বিরাজ করছে। এই এলাকায় গ্রীষ্মকালে চরম গরম আবার শীত মওসুমে চরম শীত। শীতকালে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, পাবনা, গোপালগঞ্জে শৈত্যপ্রবাহ কিছু দিন পরপর চলতেই থাকে। আবার গরমকালে বিশেষ করে এপ্রিল, মে অথবা জুন মাসে চলতে থাকে তাপপ্রবাহ। বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগে তাপমাত্রা খুব বেশি উপরে ওঠেনি। এসব এলাকায় তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, এই অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে গ্রীষ্মে একটু বেশি গরম থাকে আবার শীতে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, বাংলাদেশের খুলনা, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগ ২৩ ডিগ্রি (কম-বেশি) অক্ষাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে। এ অঞ্চলগুলোর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সূর্য জুন মাসে মাথার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে এ সময় সূর্যের তাপ বেশি পায় এ অঞ্চল। এ কারণে গরম বেশি। কোনো কোনো সময় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। অন্যদিকে একই অবস্থানের কারণে শীতকালে সূর্য অনেক দূর থেকে কিরণ দেয় এ অঞ্চলে। সে কারণে এ অঞ্চলটি অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা থাকে। এর বাইরে শীতে ঠাণ্ডা একটি বায়ুপ্রবাহ (উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয়ের বর্ধিতাংশ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে এ অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ফলে এ অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। শৈত্যপ্রবাহ অবশ্য খুলনা, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অঞ্চলগুলোর সাথে রংপুর বিভাগেও ছুঁয়ে যায়।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২১ জুন উত্তর গোলার্ধের দীর্ঘতম দিন বলে এ সময়ের আগে-পরে সব সময় একটু গরম পড়ে। আবার এ সময়ে মওসুমি বায়ুর কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। বৃষ্টি বেশি হলে পুরো অঞ্চলের তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে সহনীয়পর্যায়ে নেমে আসে। বৃষ্টির পরিমাণ কম হলে আবার তাপমাত্রা উপরে উঠে যায়।
রাজশাহী থেকে সংবাদদাতা মুহা: আব্দুল আউয়াল জানিয়েছেন, রাজশাহীতে গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত। গত কয়েক দিন থেকে রাজশাহীতে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ভারী বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। গত ১৫ জুন রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যা এখন পর্যন্ত চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিস আরো জানায়, গতকাল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে ২০০৫ সালের ১২ জুন রাজশাহীতে মওসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ২০১৪ সালের ২১ মে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এ ছাড়া ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত ওই রেকর্ড ভাঙেনি।
রাজশাহী নগরী ও জেলার উপজেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে গরমের কারণের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে এখন পানির স্তর স্থান ভেদে ১০০ থেকে ১২০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। আর নগরীতে নেমেছে ৫০ থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বহু হস্তচালিত পাম্প অকেজো হয়ে গেছে। তার ওপর খাবার পানির সঙ্কট তো রয়েছেই।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা বিপুল আশরাফ জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাতের উপযুক্ত সময় আষাঢ় মাস। ইতোমধ্যে এ মাসের ৯ দিন পেরিয়ে গেছে। তারপরেও চুয়াডাঙ্গায় কাক্সিক্ষত বৃষ্টি হয়নি। প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। এখানকার তাপমাত্রা ৩৬-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। গত ২১ জুন চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ওঠে ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কয়েক বছরের মধ্যে এমন প্রখর আবহাওয়া দেখা যায়নি। গত ১০ দিনের মধ্যে তিন দিনই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়। তাপদাহে কৃষি ও জনজীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে কৃষক মাঠে চাষ করতে পারছেন না। মাত্রাতিরিক্ত তাপের কারণে আউশ ক্ষেতে অতিরিক্ত সেচের প্রয়োজন হচ্ছে। এতে বাড়ছে কৃষকের উৎপাদন খরচ। পাশাপাশি ভালো ফলন পাওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তাপদাহের কারণে দিনমজুর, শ্রমিক, শিশু ও বৃদ্ধদের চরম দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা।
চুয়াডাঙ্গায় শীতের সময় তীব্র শীত ও গরমের সময় প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয়। স্বাভাবিকের তুলনায় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। গতকাল দুপুরে আকাশে মেঘ দেখা দিলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা মিলেনি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মওসুমে ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সবজি আবাদ হয়েছে সাড়ে সাত হাজার হেক্টর জমিতে। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকেরা মাঠে ধান রোপণ করতে পারছেন না। অতিরিক্ত খরার কারণে কৃষকের সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবায়ের মাশরুর বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় রোগ-বালাইয়ের সমস্যায় পড়তে পারেন কৃষকেরা।


আরো সংবাদ



premium cement