২৬ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ জিলকদ ১৪৪৫
`

সিনেমার পরিচালক এখন বাসার দারোয়ান

সিনেমার পরিচালক এখন বাসার দারোয়ান - সংগৃহীত

জনজাতিদের জীবনযাত্রা নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘প্রবাহিণী’ নামে চলচ্চিত্র। ২০১৬ সালে সে ছবি মুক্তি পেয়েছিল নন্দনে। তার পরে শিশি-বোতল কুড়ানো মেয়েদের জীবন নিয়ে তার ছবি ‘কলি’ এখনও মুক্তি পায়নি। তা সত্ত্বেও ছবির পরিচালক বাস্তবে যেন ছবিরই চরিত্র হয়ে উঠেছেন। বাঁচার লড়াই আর সংসার প্রতিপালন করতে গিয়ে চিত্র পরিচালক হয়ে গিয়েছেন আবাসনের দারোয়ান।

৬২ বছরের সুব্রতরঞ্জন দত্ত-কে টলিউডে অনেকেই চেনেন। ঋত্বিক ঘটকের কাছে ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ ছবিতে শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ শুরু করা সুব্রতবাবু আটের দশকে বহু ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এমনকি মুম্বইয়ে শশধর মুখোপাধ্যায়ের প্রোডাকশন হাউসেও কাজ করেছেন তিনি। তা সত্ত্বেও হাতে কাজ না থাকায় গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য মাত্র সাড়ে ছ’হাজার টাকায় নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি করছেন ওই চিত্র পরিচালক।

সুব্রতবাবুর কথায়, ‘সময় পেলেই নতুন চিত্রনাট্যের খসড়া তৈরি করার চেষ্টা করি এখনও। তবে সময় বার করাটাই কঠিন।’কলকাতার ভিআইপি রোডের একটি আবাসনে ১২ ঘণ্টার নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেই সময় চলে যায়। তা সত্ত্বেও নতুন কাজের আশায় সারা রাত ডিউটির পরেও সকালে ছোটেন টলিপাড়ায়। ফিরে এসে আবারও আবাসনের গেটের সামনে রাত পাহারার কাজে যোগ দেন পলতার বাসিন্দা সুব্রতবাবু।

তার কথায়, ‘স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে সংসার। চলতে তো হবেই। বেশ কয়েক বছর বসে রয়েছি। শেষ এই কাজেই ঢুকে গেলাম। কোনও কাজই ছোট নয়।’

ঋত্বিকের প্রসঙ্গে সুব্রতবাবুর স্মৃতিচারণ, ‘তখন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। ঋত্বিকবাবুর ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ সিনেমার সেটে দাঁড়িয়ে ওঁর কাজ দেখতাম আর শিখতাম।’ সুব্রতবাবু জানান, তার পরে চিত্র পরিচালক শঙ্কর ভট্টাচার্যের সাথে সহকারী পরিচালকের কাজের সুযোগ পান। নয়ের দশকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় ফেরার পরে সহকারী পরিচালক থেকে পরিচালক হতেই কেটে যায় দেড় দশক। প্রথম ছবি ‘প্রবাহিণী’ ছবি মুক্তি পায় ২০১৬ সালে।

এক জন চিত্র পরিচালকের দিন কাটবে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে—মানতে পারেন না অনেকেই। পরিচালক রাজা সেন বলেন, ‘সুব্রত নতুন ভাবনা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেন। ওঁর নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করাটা একেবারেই মানা যায় না।’

সুব্রতবাবুর নতুন পেশার খবর ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই জানেন। তবুও তেমন ভাবে তার পাশে দাঁড়ানোর মানুষের সংখ্যা কম। ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স ডিরেক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিমল দে বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যের। সুব্রতবাবু টালিগঞ্জের পরিচিত মুখ। এখন যাঁদের হাতে ক্ষমতা, তাদের দলের লোকজনই শুধু কাজ পায়। সুব্রতবাবুর মতো অভিজ্ঞ মানুষেরা কাজ পান না। এতে পশ্চিমবঙ্গের ইন্ডাস্ট্রির দৈন্য দশাই ফুটে উঠছে।’

সুব্রতবাবুর পরিচয় জানতে পেরে তাকে দারোয়ান হিসেবে ভাবতে এখন কুণ্ঠা বোধ করছেন ওই আবাসনের বাসিন্দারাই। আবাসিক তারক দাসের কথায়, ‘সুব্রতবাবু যে চিত্র পরিচালক আমাদের আবাসনের অনেকেই তা জানেন না। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যে ওঁকে দারোয়ানের কাজ করতে হচ্ছে।’

তবে হাল ছাড়েননি সুব্রতবাবু। তার কথায়, ‘জীবন সিনেমার চিত্রনাট্যের মতোই গতিশীল। ভাল কাজের সুযোগ নিশ্চয়ই পাব। চেষ্টা তো চালাতেই হবে।’

সিনেমারই তো কথা, ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’।


আরো সংবাদ



premium cement