২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুবর্ণচরে ফের গণধর্ষণ

নির্বাচন
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুবর্ণচরে ফের গণধর্ষর্ণের ঘটনা ঘটেছে - নয়া দিগন্ত

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন ছয় সন্তানের এক জননীকে গণধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রোববার রাতে উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের উত্তর বাগ্গা গ্রামের রুহুল আমিনের মৎস্য খামারে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে আহত অবস্থায় নির্যাতিতাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

নির্যাতিতা নারী অভিযোগ করে বলেন, ৩১ মার্চ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট চলছিল। তিনি ও তার স্বামী চশমা প্রতীকের প্রার্থী তাজ উদ্দিন বাবরের সমর্থনে ভোট করেন। রাতে তিনি ও তার স্বামী মোটরসাইকেলযোগে বাগ্গা গ্রামে নিজেদের বাড়িতে যাওয়ার পথে তালা প্রতীকের প্রার্থী এবং নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বাহার সমর্থক ইউসুফ মাঝির নেতৃত্বে ১০-১২ জন পথিমধ্যে তাদের মারধর করে। এ সময় বেচু মাঝি, বজলু ও আবুল বাসার ওই নারীকে পার্শ্ববর্তী রুহুল আমিনের মৎস্য প্রজেক্টের কলাবাগানে নিয়ে গণধর্ষণ করে। পরে তার স্বামীর চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করে এবং রাতেই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: সাহেদ উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খিষা হাসপাতালে নির্যাতিতাকে দেখতে যান এবং ভিকটিমের কথা শুনেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্যাতিতার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বাহার জানান, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এরা কেউ আমার সমর্থিত ছিলো না। আমি চাই অপরাধীর শাস্তি হোক।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সৈয়দ মহিউদ্দিন আজিম জানান, এক মহিলা ও তার স্বামীকে রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে তাকে জানিয়েছেন। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে ডাক্তারী পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এর আগে গতবছরের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের দিবাগত রাতে ধানের শীষের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার আওয়ামী লীগের এক নেতা ও তার সাঙ্গাপাঙ্গদের দ্বারা গণধর্ষিত হয়েছিলেন সুবর্ণচরের আরেক নারী। সুবর্ণচর উপজেলার মধ্যম বাগ্যা গ্রামের খোরশিদ আলমের পুত্র রুহুল আমিনের কলাবাগানে এ ঘটনা ঘটেছিল। 

আরো পড়ুন :
সুবর্ণচরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের মূল হোতা আ’লীগ নেতা রুহুল গ্রেফতার
নোয়াখালী সংবাদদাতা, ০৪ জানুয়ারি ২০১৯
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মধ্য চরবাগ্যা গ্রামে গৃহবধূকে গণধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। গতকাল নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা: খলিল উল্লাহ বলেন, গৃহবধূ ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

এ দিকে ধর্ষণ ঘটনার মূল হোতা আমিন বাহিনীর প্রধান আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ২টায় গ্রেফতার করেছে চর জব্বার থানা পুলিশ।

এ দিকে এ ঘটনার বিচারের দাবিতে নোয়াখালী সচেতন ছাত্রসমাজের ব্যানারে দুপুরে জেলা শহর মাইজদী টাউনহল মোড়ে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

আমিন বাহিনীর প্রধান রুহুল আমিন গ্রেফতার হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। পক্ষান্তরে ধর্ষণ ঘটনার মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে বনদস্যু সোহাগ বাহিনী, তাজুল ইসলাম বাহিনী, নুর ইসলাম ও সেলিম। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সিরাজ মিয়ার পরিবার।

তার আগে এ ঘটনায় প্রধান আসামি মো: সোহেলকে গত বুধবার দুপুরে কুমিল্লার বরুড়ার মহেশপুরের একটি ইটভাটা থেকে গ্রেফতার করেছে নোয়াখালী ডিবি পুলিশ। তার আগে গত মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলা থেকে মামলার তিন নম্বর আসামি স্বপনকে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। সে চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্য চরবাগ্যা গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। গত সোমবার মামলার ছয় নম্বর আসামি বাসুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ নিয়ে এজাহারভুক্ত তিনজনকে এবং নির্দেশ প্রদানকারীসহ মোট চার আসামিকে গ্রেফতার করা হলো।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার ৫নং জুবলি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বাসিন্দা সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রী পারুল আক্তার গত ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিতে যান। এ সময় ১০-১৫ জন তাকে ঘিরে ধরে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য বলে। কিন্তু পারুল ধানের শীষে ভোট দেন। এ নিয়ে তাদের সাথে কথাকাটাকাটি হয়। একই দিন রাত ১২টায় রুহুল আমিনের নির্দেশে সিরাজের বাড়িতে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বললে সিরাজ মিয়া দরজা খুলে দেন। এ সময় সন্ত্রাসী মোশারেফ বাবা তোফায়েল ওরফে তোফা, সালাউদ্দিন বাবা আলমগীর, সোহেল বাবা ইসমাইল, হেঞ্জু মাঝি বাবা চান মিয়া, বেচু বাবা আবুল কাশেম, জসীম শ্বশুর আনচলক মাঝি, সোহেল (২) বাবা আবুল কালাম, আবু বাবা অজ্ঞাত, স্বপন বাবা আবদুল মান্নান, আনোয়ার বাবা ইউসুফ মাঝি, বাদশা আলম বাবা আহম্মদ উল্ল্যাহ, হানিফ বাবা ইসমাইল ওরফে বাগন আলী, সর্ব সাং মধ্যম বাগ্যা, ৪ নং ওয়ার্ড চরজুবলি ইউনিয়ন, আমির হোসেন বাবা নুর হক সাং পশ্চিম চর জব্বরসহ ১৫-১৬ জন সন্ত্রাসী তাকে বেঁধে ফেলে এবং তার ছেলেমেয়েকে বেঁধে স্ত্রীকে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে জোরপূর্বক ঘরের বাইরে নিয়ে যায় এবং সবাই মিলে ধর্ষণ ও বেদম মারধর করে। তার শরীর মারধর ও ধর্ষণের কারণে ক্ষতবিক্ষত করে সন্ত্রাসীরা। সিরাজকে বেধম মারধর করে আহত করে এবং তার ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে মারধর করে।

একপর্যায়ে পারুল বেগম বলে উঠেন তোমাদের চিনেছি। এ সময় সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গলাকেটে হত্যার উদ্যোগ নেয়। সিরাজ সন্ত্রাসীদের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করেন। তিনি জীবন ভিক্ষা চান। ফলে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা না করে ভোর ৫টায় পুকুর ঘাটে ফেলে যায়।

সকালে সিরাজ তার স্ত্রীকে প্রতিবেশীদের সহায়তায় উদ্বার করে হাসপাতালে নিতে গেলে রুহুল আমিন মেম্বার, সিরাজ ও তার পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেয় এবং ধর্ষণের ঘটনা কাউকে বা সাংবাদিকদের জানালে বিপদ হবে বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে স্থানীয় গ্রামবাসী তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ দিকে গত বুধবার দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ৩ সদস্যের একটি টিম এবং বিকেলে চট্টগ্রাম পুলিশের ডিআইজি ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে আরএমও ডা: সৈয়দ মহি উদ্দিন আ: আজিম বলেন, রোগীটির চিকিৎসা চলছে শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।

রুহুল আমিন : সুবর্ণচর উপজেলার মধ্যম বাগ্যা গ্রামের খোরশিদ আলমের পুত্র রুহুল আমিন এলাকায় চা দোকানি ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে বাহিনী গঠন করে। তার পর থেকে রুহুল আমিন মানুষের জমিন দখল, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন খারাবি চালিয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দ করার কারো সাহস নেই।

রুহুল আমিন স্থানীয় একরাম নগরে ১০ একর ভূমি দখল করে ব্রিক ফিল্ড তৈরি করছে। আকবার নগরে সরকারি জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছে। চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন ছাড়াও সে এলাকায় সালিসি বৈঠক বসায়। গত ঈদুল আজহার আগে স্থানীয় ইমান আলীর ছেলে জহির, মুন্সির ছেলে নুর নবী, দুলালের মেয়ে জামাইকে ১০টি গরু চুরির অভিযোগে চোর সাব্যস্ত করে ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে। পরে এ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।

এলাকায় তার নেতৃত্বে অনেক বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। বিচ্ছেদের টাকা জমা নেয় রুহুল আমিন। পরে কিছু টাকা দেয় এবং অবশিষ্ট টাকা সে আত্মসাৎ করে। আবার বিয়ের যৌতুকের টাকার অংশ রেখে দিতে হয় তার জন্য। শুধু তাই নয় সে প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় ছিদ্দিক উল্লা মেম্বার মসজিদের সভাপতি হয়। পরে মসজিদের জমি বিক্রি করে ৬ লাখ টাকা নিয়ে যায়।

চা দোকানি রুহুল আমিন আজ কোটিপতি। সে সম্প্রতি প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় করে বাড়ি নির্মাণ, বাড়ির ভেতর থেকে পুকুর ঘাটসহ পুরো বাড়ির দরজা পাকা। শুধু তাই নয় তার বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে খাল ভরাট করে কালভার্ট নির্মাণ করে সে।


আরো সংবাদ



premium cement