২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই)

গ্রেফতার আতঙ্কে প্রকাশ্য প্রচারণায় নেই বিএনপি প্রার্থী

নির্বাচনী গণসংযোগে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের বিএনপি প্রার্থী নুরুল আমিন - নয়া দিগন্ত

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগ আর গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছে বিএনপি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মোট ৬জন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সাথে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিনের।

আস্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিরামহীন প্রচারণা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের নির্বাচন উপলক্ষে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।

এদিকে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে এখনো গণসংযোগে দেখা যায়নি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিনকে। উপজেলা জুড়ে নৌকা প্রতীকের সমর্থনে মাইকিং, পোস্টার, ব্যানার, তোরণ চোখে পড়লেও দেখা যায়নি ধানের শীষ প্রতীকের কোনো পোষ্টার বা প্রচারণা সামগ্রী।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিরামহীন নির্বাচনী প্রচারণা করছেন। তিনি প্রত্যেকদিন কেন্দ্র কমিটির মিটিং, গণসংযোগ, নির্বাচনী জনসভা, নির্বাচনী ইশতেহার সংবলিত লিফলেট বিতরণ কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন।

ইতোমধ্যে উপজেলার সব ইউনিয়নে গণসংযোগ, কেন্দ্র কমিটি গঠন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভা, জনসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ এবং দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সকল কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা গেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্ব স্ব ওয়ার্ডে নৌকা প্রতীকের সমর্থনে গণসংযোগ করছেন প্রতিদিন।

এদিকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ছাড়াও নৌকা প্রতীকের সমর্থনে তার স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূসহ পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রামে গনসংযোগ করছেন।

জানা গেছে, মিরসরাইয়ের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর আগেও ৫ বার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি সর্বপ্রথম তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮ সালে এবং গত ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্রার্থী প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরীকে সাড়ে ১০ হাজার ভোটে পরাজিত করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে মিরসরাই থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, আমি ৬বার মিরসরাই আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার চেয়ে কেউ বেশী মিরসরাইতে উন্নয়ন কর্মকান্ড করতে পারেনি। মিরসরাইয়ের ১৬টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভার কোনো গ্রাম বাকি নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ উজ্জীবিত থাকলেও একেবারে নীরব ভূমিকায় রয়েছেন বিএনপি প্রার্থী নুরুল আমিন ও তার সমর্থকরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে পূর্বের অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়াম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।

নুরুল আমিন ১৯৯৮ সালে উপজেলার ৫নং ওসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৩-২০১১ পর্যন্ত ওসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮-২০১২ পর্যন্ত ওসমানপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, ২০০৯ সালে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক ও একই বছর কাউন্সিলের মাধ্যমে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

২০১০ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে তার রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য থেকে শুরু করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৌড়ে বিএনপির এই নেতা। দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে অনেক প্রার্থী থাকলেও শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান তিনি।

নুরুল আমিন বলেন, উপজেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের মধ্যে থাকা সকল মতানৈক্য নিরসনে আমি সব পক্ষের সাথে বৈঠক করেছি। ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করতে জাতীয়তাবাদী আদর্শের সকল শক্তিকে সাথে নিয়ে শীঘ্রই আমরা মাঠে নামবো। ইতোমধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে গণসংযোগ করেছি। যেখানে গণসংযোগ করেছি সেখানে জনগণের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। নির্বাচনে প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করলে মিরসরাইতে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলা এবং পুলিশের গ্রেপ্তার আতঙ্কে গণসংযোগে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। যেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা গণসংযোগ করছে সেখানেই আওয়ামী লীগ হামলা করছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলার অনেকে সিনিয়র নেতাসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যারা আটক হয়েছে তারা সকলেই আমার নির্বাচনী কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন।

আসন্ন নির্বাচনে এই আসনে বিভিন্ন দলের আরো ৪জন প্রার্থী নির্বাচন করছেন। তারা হলেন গণফোরাম মনোনীত প্রার্থী নুর উদ্দিন (উদীয়মান সূর্য), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ প্রার্থী মোঃ আবদুল মান্নান (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মোঃ শাসছুদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী (হাত)।

নির্বাচনী মাঠে নুর উদ্দিন এবং শেখ জুলফিকার বুলবুলের উপস্থিতি ও প্রচারণা দেখা না গেলেও মোঃ আবদুল মান্নান, মোঃ শাসছুদ্দিনকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা গেছে।

আসন পরিচিতি :
জাতীয় সংসদের ২৭৮ নং আসনের চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আয়তন ৪৮২.৮৮ বর্গ কি.মি। মিরসরাই উপজেলা ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। প্রায় ৬ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৫ হাজার ৬ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫’শ ৪২ জন আর নারী ভোটার ১লাখ ৫৫ হাজার ৪’শ ৭৪ জন। মোট ১’শ ৪টি ভোট কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা।
মিরসরাইতে নির্মাণ করা হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম শিল্প পার্ক মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল। পূর্বে পাহাড় আর পশ্চিমে সমুদ্র। দেশের লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ২৮ কিলোমিটার অংশ পড়েছে মিরসরাইতে। তাছাড়া ভারতের আসাম, ত্রিপুরাসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের সামীনা পড়েছে মিরসরাইয়ের পাশে।


আরো সংবাদ



premium cement