২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি আসনেই সুদৃঢ় অবস্থান বিএনপি প্রার্থীদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি আসনেই সুদৃঢ় বিএনপি প্রার্থীদের অবস্থান - নয়া দিগন্ত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬ টি আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার পর উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তবে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরি না হওয়ায় অনেকটা কৌশলে কাজ করতে হচ্ছে ধানের শীষ সমর্থকদের। পাশপাশি নির্বাচনে নিরপেক্ষতার ন্যূনতম মান বজায় থাকলেও সবকটি আসনেই বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ধানের শীষ সমর্থকরা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি আসনে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ একরামুজ্জামান সুখন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আখাউড়া উপজেলা বিএনপি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মুসলিম উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে জেলা বিএনপির সদস্য কাজী নাজমুল হোসেন তাপস ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ আব্দুল খালেক পিএসসি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সৈয়দ একরামুজ্জামান সুখন দীর্ঘদিন ধরে নাসিরনগর বিএনপির মূল কাণ্ডারীর ভূমিকা পলন করে আসছেন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মৎস্যমন্ত্রী মরহুম সায়দুল হকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটি নির্বাচনেই সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজয়বরণ করেছেন। রাজনীতির বাইরেও এলাকায় দানবীর ও কাজের মানুষ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে তার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে নিয়েই নিশ্চিত বিজয়ের স্বপ্ন দেখছে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া পরপর তিনবার এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও এ আসনে একবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন উকিল আব্দুস সাত্তার। ২০০১ ও ২০০৮ সালে জোটের মেরুকরণের আসনটিতে ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ফজলুল হক আমিনী নির্বাচন করায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তবে চারদলীয় জোট সরকারের সময় প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় এলাকার মানুষের সাথে বরাবরই তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল।

সরাইল ও আশুগঞ্জ দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন। এই নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার রয়েছে মোট ১৭টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে আশুগঞ্জ উপজেলায় ৮টি এবং বাকী ৯টি ইউনিয়ন সরাইল উপজেলায় অবস্থিত। তবে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আশুগঞ্জ উপজেলার মাত্র একটি ইউনিয়ন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ৫টি ও সরাইল উপজেলার ইউনিয়নগুলি নিয়ে গঠিত ছিল এই আসনটি।

১৯৭৩ সালের পর থেকে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি বিএনপির দখলে ছিল।

পরবর্তীতে ১/১১ এর সময় আসনটি পূণর্বিন্যাস করে সদর উপজেলার ৫টি আসন বাদ দিয়ে আশুগঞ্জ উপজেলার বাকী ৭টি ইউনিয়নও এর অর্ন্তভূক্ত করা হয়।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মোটামুটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই এখানে ধানের শীষের পক্ষে ভোট বিপ্লব হবে বলে মনে করছেন জোট ও দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বিগত ২০০৯ সাল থেকে রাজনৈতিক ময়দানে দলের দুঃসময়ে কেন্দ্রীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি জেলা বিএনপির কাণ্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বিগত ২০১১ সালে এ আসনের তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চুর মৃত্যুতে আসনটি শুন্য হলে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি উক্ত নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবার কথা থাকলেও ব্যাপক কারচুপি ও কেন্দ্র দখল করে সীল মারাসহ জালিয়াতির মাধ্যমে তার বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়। এক পর্যায়ে তিনি ভোট বর্জন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমন প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রাথী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।

এর আগে নব্বইয়ের স্বৈরশাসনের পতনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সবকটি নির্বাচনে আসনটিতে বিএনপির আধিপত্য ছিল। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন আল রশিদ এ আসনে পরপর এমপি নির্বাচিত হবার পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন।
পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চু এমপি নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে লুৎফুল হাই সাচ্চুর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে বৈরি পরিবেশে বীরত্বের সাথে লড়াই করেন শ্যামল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (আখাউড়া-কসবা) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মুসলিম উদ্দিন এলাকার অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। বিগত ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের দমন পীড়নের মধ্যেও দলের মনোনয়ন নিয়ে আখাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। সাংগঠনিক ও সামাজিক তৎপরতার কারণে কসবায়ও রয়েছে তার সমান জনপ্রিয়তা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী কাজী নাজমুল হোসেন তাপস তার পিতার কাজ ও জনপ্রিয়তার জন্য এলাকায় সমাদৃত। কাজী তাপসের পিতা মরহুম কাজী আনোয়ার হোসেন নবীনগরের জননন্দিত নেতা ছিলেন। এ আসন থেকে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কাজী আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর পিতার ভক্ত অনুসারীদের সুখে দুঃখে পাশে থেকেছেন তাপস। বিগত কয়েক বছরে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি ও গ্রহনযোগ্যতা তৈরি হয়েছে এ তরুণ নেতার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্চারামপুর) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মোঃ আব্দুল খালেক পিএসসি এ আসনের দুইবারের এমপি ছিলেন। পুলিশের ডিআইজি পদ থেকে অবসর নেয়ার পর বিএনপির রাজনীতিতে যোগদান করার পর থেকেই তৃণমূলের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন তিনি। তার মাধ্যমেই আবার হারানো দূর্গ ফিরে পেতে চায় ধানের শীষের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, এতদিন মনোনয়ন লাভের প্রতিযোগিতা হলেও আমাদের দলে কোনো অভ্যন্তরীণ বিরোধ নেই। যারা দলীয় মনোনয়ন পাননি তারাও যথাসময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামবেন।

তারা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি আসনেই বিএনপি প্রার্থীদের অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুদৃঢ়। মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও জেলার সবকটি আসনেই বিএনপি জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আহবান জানান।


আরো সংবাদ



premium cement