২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির দুই প্রার্থীসহ ৪০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল - সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি সংসদীয় আসনে নানা কারণে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীসহ ৪০জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণগুলোর মধ্যে অনেক ছোটখাট ও তুচ্ছ বিষয়ও রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্রের ছোটখাট ভুল না ধরার জন্য বলা হলেও এসব প্রার্থীদের কোনো কথা বলারই সুযোগ দেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।

কিন্তু প্রার্থী বিশেষকে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে বলেও অভিযাগ রয়েছে। তবে মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষিত হওয়া প্রার্থীদের অনেকে নির্বাচন কমিশনে আপিল করছেন বলে জানা গেছে।

রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের কার্যালয়ে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রম চলে।

হলফনামায় প্রার্থীর বিরুদ্ধে থাকা মামলার বিবরণী সঠিকভাবে উল্লেখ না করার অজুহাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের বিএনপির প্রার্থী দুইবারের নির্বাচিত সাবেক এমপি আব্দুল খালেকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ঢাকার তুরাগ থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তিনি তা হলফনামায় উল্লেখ করেননি।

এ ব্যাপারে আব্দুল খালেক বলেন, ঢাকার তুরাগ থানায় কে কখন উদ্দেশ্যমূলকভাবে গায়েবি মামলা করে রেখেছে- তা আমি নিজেই অবহিত নই। এই মামলার ব্যাপারে আমাকে থানা বা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কোন নোটিশও করেনি। এমনকি উল্লেখিত মামলায় কোনোদিন পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসাও করেনি। তাহলে আমি কীভাবে জানব? রিটার্নিং অফিসার তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনে কথা বলার সুযোগ দেননি উল্লেখ করে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে তিনি আপিল করেছেন বলে জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে বিএনপির আরেক প্রার্থী সাবেক সচিব ও সংসদ সদস্য, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল হওয়া নিয়ে জেলাজুড়ে নানা আলোচনা চলছে। মনোনয়নপত্রের ফরম নম্বর-২১ পূরণ না করার অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের পরিপত্র-৪-এর ৬ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়েছে- প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে তার সম্পদ ও দায়ের বিবরণী এবং বার্ষিক আয়-ব্যয়ের রিটার্ন নির্ধারিত ফরম ২১-এ মনোনয়ন সংযুক্ত করে দাখিল করতে হবে। তিনি আয়করদাতা হলে সর্বশেষ দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নের অনুলিপিও বিবরণীর সাথে সংযুক্ত করতে হবে। তবে তিনি সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিয়েই উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় আইনজীবীরা জানান, এটি সংযুক্ত না করলে মনোনয়নপত্র বাতিল হবে পরিপত্রে সে কথা বলা হয়নি।

মুশফিকুর রহমানের রাজনৈতিক সহকর্মী আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর মিশন বলেন, মুশফিকুর রহমানের সম্পদের বিবরণী হলফনামায় দেয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্রে নির্ধারিত ফরমে জায়গা না হওয়ায় সেটি তারা হলফনামায় দিয়েছেন। ওই ফরমে মুশফিকুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু সেখানে সংযুক্ত কথাটি উল্লেখ না করায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এ ব্যাপারে রিটার্নিং অফিসার কোন কথাই শুনতে চাননি। মুশফিকুর রহমান নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন।

ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নাজমুল হোসেন তাপসের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সামনে থাকা মাইকক্রোফোন চালু করে কাজল কয়েক দফা কথা বলার চেষ্টা করলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা হায়াত-উদ-দৌলা খান তাকে থামিয়ে দিয়ে মাইক্রোফোন অফ করতে বলেন। এ সময় তারা দুইজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

নাজমুল হোসেন তাপস জানান, ইলেকশনের ‘কোড অব কনডাক্ট’ এবং নিয়ম হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে আমাকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। কোনো ডকুমেন্ট পেশ করার থাকলে তা করতে দিতে হবে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা যদি শুরুতেই থামিয়ে দেন সেটি দুর্ভাগ্যজনক।

তিনি আরও বলেন, আমার সোনালী ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ ক্লিয়ার। ব্যাংকের সেই চিঠি ছিল, স্টেটমেন্ট ছিল। আমার আইনজীবী সে ব্যাপারে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে তিনি আপিল করেছেন বলে জানান।

একই আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কাজী মোঃ মামুনুর রশিদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় তার দেয়া হলফনামায় মামলার তথ্য উল্লেখ না করায়। এ নিয়ে মামুনুর রশিদের প্রতিনিধি ও নবীনগর উপজেলা জাপার যুগ্ম আহবায়ক রজব আলী মোল্লাহ কথা বলতে চাইলে তাকেও কোনো কথা বলার সুযোগ দেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।

মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রম শুরুর পর বাতিল হওয়া প্রার্থীরা নিজেদের সমর্থনে কথা বলতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখানে হেয়ারিংয়ের জন্য বসিনি। আপনারা নির্বাচন কমিশনে তিনদিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।

অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবাদুল করিম বুলবুলের বিরুদ্ধে হলফনামায় অসত্য তথ্য দেয়ার অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন একই আসনের সাবেক এমপি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) মনোনীত প্রার্থী শাহ জিকরুল আহমেদ খোকন।

বুলবুলের মনোনয়নপত্রের বাছাই শুরু হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা কারও অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে জিকরুল দাঁড়িয়ে তার আপত্তি আছে বলে জানান। কিন্তু কথা বলতে চাইলে জিকরুলকে থামিয়ে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এছাড়া এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকায় ত্রুটির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

কিন্তু এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিনের দাখিল করা এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকায় দুইজন ভোটারের বিষয়ে ত্রুটি থাকলেও অদৃশ্য কোন খবরের ভিত্তিতে এই প্রার্থী আপত্তি করা দুইজন ভোটারকে বাছাই কার্যক্রমে হাজির রাখেন। পরে এ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।

এ সময় মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ তানভীর হোসেন কাউছার, আনিছুর রহমান ও আশরাফ উদ্দিন দাঁড়িয়ে বলেন, তারা এক শতাংশের বেশি ভোটারের তালিকা দিয়েছেন। এতে ২-৩টি ভোট এদিক-সেদিক হতে পারে। ওই প্রার্থীর মতো তাদেরকে আগে জানিয়ে দিলে তারাও সেটি নিরসন করতে পারতেন। জোট মহাজোটের মারপ্যাচে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঝে বিশেষ কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যাপারে গ্রিন সিগনাল থাকতে পারে বলেও অভিযোগ করেন সংক্ষুব্ধদের কেউ কেউ।

এভাবে তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেয়া ও কোনো কোনো প্রার্থীকে বিশেষ সুযোগ দেয়ায় নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংক্ষুব্ধরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, আমি কারো কথা শুনেছি, কারো কথা শুনিনি এ অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা শুধু মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজটি করেছি। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের আপিলের সুযোগ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement