২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জেনারেল মাসুদ আর মিন্টুর সিদ্ধান্তে পাল্টে গেল সব হিসাব

জেনারেল মাসুদ আর মিন্টুর সিদ্ধান্তে পাল্টে গেল সব হিসাব - ছবি : সংগ্রহ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় জাপার প্রার্থী লে. জেনারেল (অব:) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে সহজে মেনে নিতে পারছেন না আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এরই মধ্যে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্য দিকে বিএনপির প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু শেষ মুহূর্তে মনোনয়নপত্র জমা না দেয়ায় এগিয়ে এসেছেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক জেএসডির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। এতে দুই জোটেই অস্থিরতা বিরাজ করছে।

জেলার সমুদ্র উপকূলীয় সোনাগাজী আর দাগনভূঞা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-৩ আসনে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৯৫৬ জন ভোটার রয়েছেন। ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে সোনাগাজী এবং ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে দাগনভূঞা উপজেলা গঠিত। স্বাধীনতা-পরবর্তী ১০টি নির্বাচনের দু’টিতে আওয়ামী লীগ, দুটিতে জাতীয় পার্টি, এরপর টানা ৫টিতে বিএনপি ও ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন। বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্লাহ বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে আসনটি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির রিন্টু আনোয়ারকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ান নৌকার প্রার্থী যুবলীগ নেতা আবুল বাশার। দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা লাঙ্গলের প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করে একজোটে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা হাজী রহিম উল্লাহর পক্ষ নেন। এতে অনেকটা ফাঁকা মাঠে জয় পান হাজী রহিম। এবারো নৌকার মনোনয়ন চেয়ে অন্তত দেড় ডজন নেতা আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত কাউকেই প্রার্থী দেয়া হয়নি। জাতীয় পার্টিতে সদ্য যোগ দেয়া আলোচিত সেনাকর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীই এ আসনে মহাজোটের প্রার্থিতা অনেকটা নিশ্চিত। মনোনয়ন বঞ্চিত গত দু’বারের নৌকার প্রার্থী আবুল বাশার ও সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্লাহ স্বতন্ত্র হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। একই সাথে আবুল বাশারের ছেলে ব্যবসায়ী ইশতিয়াক আহমেদ সৈকতকেও প্রার্থী করা হয়। শোনা যাচ্ছে, দলীয় পদ রক্ষায় হাইকমান্ডের নির্দেশে যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশারকে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়াতে হলেও সৈকতকে নিয়েই তার সমর্থকেরা মাঠে থাকবেন। অন্য দিকে মাসুদ চৌধুরীকে জাপার টিকিট দেয়ায় ক্ষুব্ধ জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন গতবারের মহাজোট প্রার্থী রিন্টু আনোয়ার। তিনি পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ছাড়াও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ছিলেন। প্রথম পর্যায়ে তাকেই এ আসনে দলের প্রার্থী করা হয়েছিল বলে প্রচার রয়েছে।

এ দিকে জেলা ও উপজেলাপর্যায়ের জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মীকে নিয়ে মাঠে রয়েছেন লে. জেনারেল (অব:) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।
যুবলীগ নেতা আবুল বাশার জানান, দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণের অনুরোধেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। দীর্ঘ দিন কাজ করায় তাদের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ভোটাররা কোনো মওসুমি পাখিকে গ্রহণ করবে না।
একই কথা বললেন রিন্টু আনোয়ার। তার মতে, দলকে সংগঠিত করতে দীর্ঘ দিন তিনি এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করেছেন। হঠাৎ কেউ রাতারাতি নেতা হয়ে জনগণের মন জয় করতে পারবেন না।

লে: জেনারেল (অব:) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি কাজ করছেন। মান-অভিমান ভুলে নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করতে হবে।
অন্য দিকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে ঘিরে দুই উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হলেও শেষ মুহূর্তে আশার গুড়েবালি। তিনি মনোনয়নপত্র জমা না দেয়ায় এখানে নতুন সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। মিন্টুর ছোট ভাই দাগনভূঞা উপজেলা সভাপতি আকবর হোসেন ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলেও নেতাকর্মীদের মাঝে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। হেভিওয়েট মাসুদ চৌধুরীর মোকাবেলায় মিন্টুর বিকল্প দেখছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে একধরনের ক্ষোভও রয়েছে। মিন্টুর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন।

তবে এখানে বিএনপির বিশাল ভোট ব্যাংক নিয়ে আশাবাদী আবদুল লতিফ জনি ও আকবর হোসেন। নির্বাচনী মাঠে নতুন হলেও জনি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। অন্য দিকে আকবর হোসেন দাগনভূঞা পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র। তা ছাড়া তিনি ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন।

আবদুল লতিফ জনি নয়া দিগন্তকে জানান, চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলে বিএনপির ঘাঁটি পুনরুদ্ধারে তিনি দৃঢ় আশাবাদী। তার মতে, এ দু’টি উপজেলা এক দিকে যেমন সন্ত্রাসকবলিত অন্য দিকে উন্নয়ন বঞ্চিত। দীর্ঘ এক দশক ধরে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে এখানকার জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। অনুকূল পরিবেশ পেলে ব্যালটের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দেবে।
অন্য দিকে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টু সরে যাওয়ায় এ আসনটি পেতে তৎপর ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডির যুগ্ম সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। তার পৈতৃক বাড়ি দাগনভূঞার জায়লস্কর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে। ছাত্র রাজনীতি থেকেই এলাকার সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে। ফেনী-৩ এর পাশাপাশি তিনি ঢাকা-১৮ আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।

শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন জানান, জেএসডির পক্ষ থেকে এর আগে এ আসনটি দাবি করা হয়েছে। আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রার্থী না হওয়ায় তিনি প্রার্থী হয়ে ঐক্যফ্রন্টকে আসনটি উপহার দিতে চান।


আরো সংবাদ



premium cement