১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`
রিফাত হত্যা

মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের তথ্য দিতে আদালতে কাজি

- ছবি : সংগৃহীত

বরগুনার বহুল আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে মঙ্গলবার আরো তিনজন সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।

এদিন মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) আনিচুর রহমান, কামাল ও মিনারা বেগম সাক্ষ্য দেয়। আনিচুর রহমান আদালতে মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্য দেয়ার সময় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ১০জন আসামী আদালতে উপস্থিত ছিল। এ পর্যন্ত ২৮ জনের সাক্ষ্য জেরা সমাপ্ত হল।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টায় বরগুনা জেলা কারাগার হতে পুলিশ পাহারায় আট জন প্রাপ্তবয়স্ক আসামীকে দায়রা আদালতে উপস্থিত করেন। জামিনে থাকা আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিও আদালতে উপস্থিত হয়। আসামী মুছা পলাতক রয়েছে। সাক্ষ্য শেষে আসামীদের আবার কারাগারে পাঠায়।

সকাল সাড়ে নয়টায় আদালত এজলাসে বসেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। আদালতে সাক্ষ্য দেয় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও নয়ন বন্ডের নিকাহ রোজিস্ট্রার (কাজি) আনিচুর রহমান, ঘটনাস্থলের ক্যালিক্স একাডেমির দারোয়ান কামাল ও মিনারা বেগম।

আদালতে সাক্ষ্য শেষে কাজি আনিচুর রহমান বলেন, আমি আদালতে বলেছি। আমি বরগুনা পৌরসভার ৪, ৫,ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি)। ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর শাওন ও মুন্না আমার কাছে এসে বলে, আমাদের বন্ধু নয়ন একটি মেয়েকে ভালবাসে। তাদের বিয়ে পড়াতে হবে। ওরাই আবার বলে তাদের বয়স হয়েছে। শাওন ও মুন্না আমাকে বলে যায় ১৫ অক্টোবর বিয়ে পড়াতে হবে।

ওই তারিখ শাওন, মুন্নাসহ ৪/৫ জন ছেলে এসে আমাকে নয়ন বন্ডের বাসায় নিয়ে যায়। ওখানে নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগমসহ ১৪/১৫জন ছিল। আমি নয়ন বন্ড ও মিন্নির বিয়ে পড়াতে প্রথমে রাজি না হলেও পরে বাধ্য হয়েছি। মিন্নির পরিবার বিয়ে রাজি আছে কিনা জানতে চাইলে মিন্নি বলে তারা রাজি আছে। এ সময় উপস্থিত একজনের ফোন করে মিন্নির মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে দেয় আমাকে।

মিন্নির মা আমাকে বিয়ে পড়াতে বলেন। আমি নয়ন বন্ড ও মিন্নির বিয়ে পড়াই। যার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১৪৫/২০১৮। বিয়ের দেন মোহর ছিল পাচঁ লাখ টাকা। বিয়েতে কাবিন নামায় মিন্নির পক্ষে সাক্ষ্য ছিল জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মুন্না। নয়ন বন্ডের পক্ষে সাক্ষ্য ছিল রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি ও রাজু। বিয়ে পড়ানোর পর আলাপচারিতায় জানতে পারি মিন্নির আপন চাচা সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবু সালেহ। তিনি আমার পূর্ব পরিচিত।

নয়ন বন্ডের বাসা থেকে নেমে সালেহ কাউন্সিলরকে ফোন করে জানাই। সালেহ আমাকে বিয়ের কথা গোপন রাখতে বলেন। একটু পর মিন্নির বাবা কিশোর আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। বেশ কিছুদিন পরে আমি জানতে পারি মিন্নি আবার রিফাত শরীফের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।

মিন্নির বাবা কিশোর আমাকে ফোন করে বলেন, আনিচ আমার মেয়ে মিন্নি ও নয়ন আগামীকাল তোমার কাছে যাবে। তাদের মধ্যে কমিটমেন্ট হয়েছে, তুমি তাদের তালাকের ব্যবস্থা করে দিও। পরের দিন মিন্নি ও নয়ন বন্ড আমার কাছে আসেনি। মিন্নির বাবা পরের দিন আবার আমাকে ফোন করে বলে ওরা কালকে যেতে পারেনি। আজকে যাবে, তুমি তালাকের ব্যবস্থা করে দিও। কিন্তু মিন্নি ও নয়ন বন্ড আমার কাছে আসেনি। রিফাত শরীফ খুন হবার পরে মিন্নির চাচা সালেহ আমাকে ফোন দিয়ে নয়ন বন্ড ও মিন্নির বিয়ের বিষয় কোন তথ্য সাংবাদিকদের দিতে নিষেধ করে। সাংবাদিকরা ও প্রশাসনের লোকজন আমার অফিসে গেলে আমি ভয়ে তাদের কাছে মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কাবিন নামার তথ্য দেই।

কাজি বলেন, একজন মুসলমান মেয়ের এক সঙ্গে দুইজন স্বামী থাকতে পারে না। কাজি আরো বলেন, আমি আদালতে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কাবিননামা দাখিল করে দিয়েছি।

সাক্ষ্য কামাল বলেন, আমার বাড়ী ঝালকাঠি জেলায়। চার হাজার টাকা বেতনে বরগুনা ক্যালিক্স একাডেমিতে দারোয়ানের চাকরী করি। ঘটনার দিন সকাল অনুমান সোয়া ১০টার সময় কয়েকটি ছেলে একটি ছেলেকে কলেজ গেট হতে টেনে আমাদের স্কুলের সামনে এনে কোপায়। অনেকগুলো ছেলে দাড়িয়ে ছিল। ছেলেটি রক্তাক্ত অবস্থায় একটি রিক্সায় উঠে যায়।

পরে জানতে পারি নয়ন বন্ড, রিফাত ফারজি ও রিশান ফরাজি রিফাত শরীফকে কুপিয়েছে। পরের দিন ওইখান থেকে বাবুলের চটপটির দোকানের একটি চামচ জব্দ করে।

সাক্ষ্য মিনারা বেগম বলেন, আমার ছেলে হেলাল সিকদার রিফাত শরীফের বন্ধু। তার কাছে এবং ভিডিও দেখে জানতে পারি ঘটনার দিন ২৬ জুন নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজি, রিশান ফরাজিসহ অনেক ছেলেরা রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আসামী মিন্নির পক্ষের আইনজীবী কমল কান্তি দাস ও মাহবুবুল বারী আসলাম সাক্ষ্যদের জেরা করেন।

আসলাম বলেন, কাজি আনিচুর রহমানকে বিয়ের বিষয় জেরা করেছি। কাবিনটি সঠিক নয়। আমরা কাজিকে বলেছি মিন্নি ও নয়ন বন্ডের সঙ্গে বিয়ে হয়নি। বাদী পক্ষের লোকজনের কথায় ওই কাবিন সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়া কোন সাক্ষ্যই রিফাত হত্যার সঙ্গে মিন্নি জড়িত সে বিষয় কিছু বলেনি।

রাষ্ট্রপক্ষের পিপি ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, মিন্নি ও নয়ন বন্ড আগে যে বিয়ে করেছে তা আদালতে কাজি সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন। সেই বিয়ে বলবত থাকাকালীন রিফাত শরীফকে বিয়ে না করলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতো না। কাজি সেই সাক্ষ্যই আদালতে দিয়েছেন।

শিশু আদালতে ১৪ আসামী বিরুদ্ধে দুইজন সাক্ষ্য প্রদান
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় শিশু আদালতে মঙ্গলবার দুইজনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। ওই আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন আবদুল হাই আল হাদি ও সজল। শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান তাদের সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। তাদেরকে ১০ জন আইনজীবী জেরা করেন।

মঙ্গলবার সকালে নিত্যদিনের মত বরগুনা কারাগার থেকে শিশু আসামী ৯ জন ও জামিনে থাকা ৫ জন আসামী আদালতে উপস্থিত হয়। শিশু আদালতে সাক্ষ্য শেষে আবদুল হাই আল হাদি বলেন, ঘটনার দিন ২৬ জুন সকাল অনুমান ১০-২০ মিনিটের সময় আমি ঘটনাস্থল আমার ভাই লিটনের দোকানে ছিরাম।

ওই সময় আসামী নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজি, রিশান ফরাজি, রায়হান, অলি, চন্দন, নাঈম, তানভির, নাজমুলসহ অনেক ছেলেরা রিফাত শরীফকে কলেজ গেট হতে জামার কলার ধরে কিল ঘুষি মারতে মারতে ক্যালিক্স একাডেমির সামনে নিয়ে আসে।

নয়ন বন্ড, রিফাত ফারাজি ও রশিাণ ফরাজি রিফাত শরীফকে বগি দা দিয়ে কোপায়। ওই আসামীরা পাহারা দেয়। সাক্ষ্য সজল জেরা করেন রিশান ফারাজির আইনজীবী সোহরাফ হোসেন মামুন।

জেরায় সজল বলেন, রিফাত শরীফ আর আমি একই এলাকায় থাকি। ঘটনার দিন ২৬ জুন সকালে রিফাতের বাবা চাচারা তারাহুরা করে বরগুনা আসতে দেখি। আমি তাদের কাছে জানতে চাই আপনারা কোথায় যাইতেছেন। ওই সময় রিফাতের বাবা বলে রিফাতকে নাকি সন্ত্রাসীরা কোপাইছে। এই কথা শোনার পর আমিও তাদের পিছনে পিছনে আসি। বরগুনা হাসাপাতালে এসে দেখি রিফাতের গায়ে রক্ত।

রিফাত তার বাবার কাছে বলে, আমাকে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজি, রিশান ফরাজিসহ অনেক পোলাপান কোপায় এবং কিল ঘুষি মারে।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাক্ষ্যরা যেভাবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাতে সকল আসামীদের সাজা হবার সম্ভাবনা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
কুবিতে‘বেআইনিভাবে' ডিন নিয়োগের প্রতিবাদে সিন্ডিকেট সদস্যের পদত্যাগ জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না : মির্জা ফখরুল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরাইলের নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধাপরাধের শামিল : জাতিসঙ্ঘ সঙ্গীতশিল্পী খালিদকে বাবা-মায়ের পাশে গোপালগঞ্জে দাফন রাণীনগরে টমটম গাড়ির ধাক্কায় নিহত ১ স্লিপিং ট্যাবলেট খে‌লেও সরকা‌রের ঘুম আসে না : গয়েশ্বর জনসাধারণের পারাপারে গোলাম পরওয়ারের খেয়া নৌকা উপহার ভোলায় হঠাৎ অসুস্থ ২৯ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি করোনায় ১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩১ ‘অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব’ নারায়ণগঞ্জের বাজারগুলোতে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নামল

সকল