২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিয়ের আগ মুহূর্তে বর-কনে ও কাজিসহ ৯ জনের জেল

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ভোলায় বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পৃথক দু’টি বাল্যবিবাহ পড়ানোর অপরাধে বর-কনে, অভিভাবক ও কাজিসহ ৯ জনের জেল-জরিমানা প্রদান করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। এদের মধ্যে তিনজনকে ৬ মাস করে কারাদণ্ড, ৪ জনকে ১০ হাজার টাকা করে ও ২ জনকে ৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুর ২টার দিকে ভোলা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাওছার হোসেন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ এর ৮ ধারা অনুযায়ী এ দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন কাজী মো. ইকবাল হোসেন, তার সহকারী মো. হাসান ও বর মো. সজিব। এদের মধ্যে কাজী মো. ইকবাল হোসেন সদর উপজেলার পরানগঞ্জ বাজার এলাকার সৈয়দ আহম্মদ এর ছেলে। তার সহকারী মো. হাসান একই উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মো. আব্দুল মতিনের ছেলে এবং বর মো. সজিব বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের মুলাইপত্তন গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে।

অর্থদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলার মুলাইপত্তন গ্রামের প্রবাসী মো. মফিজুল ইসলাম ফরাজীর স্ত্রী নাসিমা আক্তার, তার নবম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে কনে মোসা. ফাতেমা আক্তার মিতু, সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের মো. সবুজ, মজিব উদ্দিন, মাইনুদ্দিন ও নাজিম উদ্দিন।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুর ১২টার দিকে বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক এম শাহরিয়ার জিলনের কাছে শহরের সামসুদ্দিন মার্কেটে অবস্থিত কাজি অফিসে বিয়ের প্রস্তুতি চলছে এমন খবর আসে। তিনি বিষয়টি কমিটির সভাপতি এ্যাডঃ সাহাদাত হোসেন শাহিন ও যুগ্ম সম্পাদক এম মইনুল এহসানকে জানালে তারা কাজী অফিসে পৌঁছান। এসময় খবর পেয়ে ইয়ুথ পাওয়ার ইন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আদিল হোসেন তপু ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

তারা বিষয়টি জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও প্রশাসনকে অবহিত করেন। পরে ইয়ুথ পাওয়ার ইন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আদিল হোসেন তপু ও বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এম মইনুল এহসান এসিল্যান্ড মোঃ কাওছার হোসেনকে বিষয়টি জানান।

পরে এসিল্যান্ড পুলিশের একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিয়ে পড়ানো অবস্থায় কাজি মো. ইকবাল হোসেন, তার সহকারী মো. হাসান ও বোরহানউদ্দিনের মো. সজিব (১৯), একই এলাকার নবম শ্রেণি পড়ুয়া মোসা. ফাতেমা আক্তার মিতু ও তার মা নাসিমা আক্তারকে আটক করে। পরে তাদেরকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কাজি, তার সহকারী ও বরকে ৬ মাস করে কারাদণ্ড প্রদান করেন। কনে ও তার মাকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।

এদিকে, ভোলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চেউয়াখালী গ্রামে বাবার অছিয়ত রক্ষা করতে বাল্যবিয়ে করতে আসে বর মোঃ সবুজ। কিন্তু এই বাল্যবিয়েতে মেয়ের বাবা বাদে অন্য কেউ রাজি ছিলেন না। তারা বিষয়টি ১০৯৮ ও সমন্বিত শিশু বিবাহ প্রকল্পের কর্মকর্তা আদিল হোসেন তপুকে জানায়।

পরে বিষয়টি আদিল হোসেন তপু এসিল্যান্ড কাওছার হোসেনকে জানালে তিনি বুধবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাল্য বিবাহ পড়ানোর সময় বর, মেয়ের বাবা ও চাচাসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে বর মো. সবুজ, মেয়ের বাবা মো. মজিব উদ্দিন, চাচা মাইনুদ্দিন ও নাজিম উদ্দিনকে ভ্রম্যমান আদালতের মাধ্যমে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। এসময় মেয়ের বাবা বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত কন্যাকে বিবাহ দিবে না মর্মে মুচলেকা দেন।

ভোলা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাওছার হোসেন বলেন, বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও সমন্বিত শিশু বিবাহ প্রতিরোধ প্রকল্পের কর্মীরা তথ্য পেয়ে আমাকে জানায়। পরে আমি পুলিশের সহায়তায় ভোলা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাজি অফিস থেকে কাজিসহ ৫ জন ও সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়ন থেকে বর ও মেয়ের বাবাসহ ৪ জনকে আটক করি। এদের মধ্যে তিন জনকে ৬ মাস করে কারাদণ্ড ও বাকি ৬ জনকে সর্বমোট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট সাহাদাত শাহিন বলেন, বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে আমরা শামসুদ্দিন মার্কেটে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে পড়ানোর দৃশ্য দেখতে পাই। তাৎক্ষণিক বিষয়টি জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসিল্যান্ড মহোদয়কে জানাই। খবর পেয়ে এসিল্যান্ড কাউছার আহমেদ কাজী অফিসে এসে কাজীসহ বর-কনে ও কনের মাকে হাতে নাতে আটক করে। তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়। আমরা এসিল্যান্ড কাউছার হোসেনকে কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি আত্মপ্রকাশের পর থেকে বাল্যবিয়ে, শিশু নির্যাতন সহ শিশুদের অধিকার আদায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রশাসন ও সকলের সহযোগীতায় আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement