২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় উজিরপুরের গোবিন্দ

-

বরিশালের উজিরপুরে জামাতার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে মৃত শ্বশুড়কে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি সেই তালিকা নিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য দেয়া সরকারের সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করার জন্য ওই জামাতা সংশ্লিষ্ট দফতরে দৌড়ঝাপ শুরু করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনাটি উপজেলার পশ্চিম নারায়নপুর গ্রামের। ওই গ্রামের মৃত সারদা কান্ত দাসের ছেলে মৃত গোবিন্দ দাসকে অবৈধভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
ওই এলাকার বৃদ্ধ আজিজ মীরা (৭৫) জানান, কথিত মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ দাস এবং আমার বাড়ী পাশাপাশি। ১৯৭১ সালে গোবিন্দ দাসের বয়স মাত্র ২২ বছর। পেশায় ছিলেন দিনমজুর। সে (গোবিন্দ) তখন সদ্য বিবাহ করে এবং ঘরে তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী। ১৯৭১-এর ১৩ বৈশাখ উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়ায় প্রথম হানা দেয় পাকিস্থানি সেনারা। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে পশ্চিম নারায়নপুর গ্রামে আমার নিজ বাড়িতে পাক সেনারা অবস্থান নেয়।
তখন আমি আমার বাড়ির পুকুর পাড়ে আর গোবিন্দ পুকুর ঘাটে চাল ধোয়ার জন্য আসে। এ সময় পাক সেনারা আমাকে ও গোবিন্দকে আটক করে নিয়ে যায় পাশ্ববর্তী বর্তমান ঝালকাঠি জেলার সীমান্ত এলাকা বেরমহল গ্রামে। খবর পেয়ে গোবিন্দর বাবা সারদা কান্ত দাস সেখানে ছুটে গেলে পাক সেনারা তাকেও আটক করে।
পরে আমিসহ (আজিজ) প্রত্যেককে বিবস্ত্র করে হিন্দ-মুসলিম ধর্মালম্বী সনাক্ত করে সেনারা। আমি মুসলিম হওয়ায় ছেড়ে দেয়। কিন্ত আমার সামনেই গোবিন্দ ও তার বাবা সারদাকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। ওই এলাকার অভিযোগকারী হারুন-অর-রশিদ (৬২), খাদেম হাওলাদার (৭০), আব্দুল খালেক হাওলাদার (৭০), শহিদ হাওলাদার (৮০) ও জাহাঙ্গীর হাওলাদার (৭০) জানান, গোবিন্দ মারা যাওয়ার পরে তার স্ত্রীর একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। ওই সন্তানের নাম বকুল রানী বুলু। এর প্রায় ৫ বছর পরে ওই সন্তান নিয়ে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হয়ে স্থানীয় আমজাদ হাওলাদারকে বিবাহ করেন। পরে মৃত গোবিন্দর মেয়ে বকুল রানী বুলুকে বাবুগঞ্জ উপজেলার মনির তালুকদারের সাথে বিবাহ দেয়া হয়। সেই জামাতা মনির তালুকদার জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশী লাল মুক্তিবার্তা তালিকায় তার মৃত শ্বশুড়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
তারা আরও জানান, মৃত গোবিন্দ দাস বাংলাদেশের কোনো মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প বা ভারতে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেননি। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিনেই সে মারা যায়। অথচ তার নাম বাংলাদেশি লাল মুক্তিবার্তা ও সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যার গেজেট নং- ০৬০১০৩০৭১৬। সম্প্রতি মৃত গোবিন্দর জামাতা মনির ওই সকল ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য বিভিন্ন দফতরে দৌড়ঝাপ করছেন। এ সকল বিষয় অস্বীকার করে অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা গোবিন্দ দাসের জামাতা মনির তালুকদার বলেন, আমার শ্বশুড় একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার নাম সরকারি গেজেটে আছে। জালিয়াতির মাধ্যমে আমি করেছি কিনা তা খুঁজে দেখুন আপনারা। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন-অর-রশিদ জানান, অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে অবহিত করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement