২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘আমাদের ছেলে ও স্বামীকে ফিরিয়ে দেন’

নিখোঁজ জেলেদের ফিরে পেতে স্বজনদের সংবাদ সম্মেলন। - ছবি: নয়া দিগন্ত

গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় সিমেন্টের কাচামালবাহি এমভি ‘নাফিজা জাহান’ নামে একটি বাণিজ্যিক জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া এফবি স্বাধীন-৩ নামের ট্রলারসহ এখনো ৩ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। ডুবে যাওয়া ট্রলারসহ নিখোঁজ জেলে উদ্ধার এবং ক্ষতিপুরণের দাবি করেছেন ট্রলার মালিক মো.মোস্তফা মিয়া। শনিবার (১৫ সেপ্টে¤¦র) বেলা ১১টায় সময় পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি জানান তিনি।

ট্রলার মালিক মোস্তফা মিয়া সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ভাবে জানান, সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোরে শরণখোলা রেঞ্জের জেলে পল্লী দুবলা টহল ফাঁড়ি হতে প্রায় ২০ কি.মি. দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে তার মালিকানা এফবি স্বাধীন-৩ ট্রলারের জেলেরা মাছ ধরার জন্য অবস্থান করেন। এমন সময় পিছন দিক থেকে আসা ‘নাফিজা জাহান’ নামের একটি বাণিজ্যিক বড় জাহাজ বেপরোয়াভাবে ট্রলারটিকে ধাক্কা মারলে সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যায়।

কয়েকঘন্টা পর ১২জন জেলের মধ্যে নৌবাহিনীর বিএনএস তুরাগ নামের একটি জাহাজ ভসমান ৯জনকে উদ্ধার করলেও পাথরঘযাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের মো. বাবুল হাওলাদার, দিপু হালদার, আ. খালেক জোমাদ্দারকে উদ্ধার করতে পারেনি নৌবাহিনী। দীর্ঘ ৬দিন অতিবাহিত হলেও নিখোঁজ ৩ জেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি আরও জানান, গত মঙ্গলবার (১১সেপ্টেম্বর) পাথরঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছি। সংশ্লিষ্ট শরণখোলা থানায় লিখিতভাবে জানালেও এখন পর্যন্ত মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ।

নিখোঁজ জেলে বাবুল হাওলাদারের স্ত্রী শিমলা বেগম কান্নাজরিত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী সাগরে যাবার সময় আমাকেও বলে যায়নি। আমার স্বামী ছারা কেই নেই, স্বামীকে ফিরিয়ে দেন। আমার প্রতিবন্ধি ৮বছরের সিমরান নামের একটি ছেলে আছে, স্বামীর কোন জমিজমা নেই আমি কি নিয়ে বাচব।

নিখোঁজ জেলে দিপু হালদার মা শিখা রানী ও আ. খালেক জোমাদ্দারের স্ত্রী রিজিয়া বেগম বলেন, আমাদের আয় উপার্জন করার মত আর কিছু থাকল না। আমাদের দেখার মত কেউ নেই। আমাদের ছেলে ও স্বামীকে ফিরিয়ে দেন। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।

নিখোঁজ ট্রলারের হলা মাঝি কবির হোসেন জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোর রাত ৪টার দিকে আমরা সাগরে জাল ফেলার সময় হঠাৎ পিছন থেকে আামাদের ট্রলারের উপর নাফিজা জাহান জাহাটি উঠিয়ে দিয়ে চলে যায়। আমার জাহাজটির নিচে চলে গেলে আমাদের ট্রলারের জালে জরিয়ে যাই। পরে পানির নিচ থেকে উঠে দেখতে পাই জাহাটি নাম নাফিজা জাহান।

উল্লেখ্য, গত সোমবার ১০ সেপ্টেম্বর সুন্দরবন কেন্দ্রিক বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়েবয়া এলাকায় ভোরে দিকে সিমেন্টের কাচামালবাহি এমভি ‘নাফিজা জাহান’ নামে একটি বাণিজ্যিক জাহাজের ধাক্কায় এফবি স্বাধীন-৩ নামের ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে গভীর সমুদ্রে টহলরত নৌবাহিনী জাহাজ তুরাগ উদ্ধারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভাসমান অবস্থায় ৯জন জেলেকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলেও ৩ জেলে এখনও নিখোজ রয়েছে


আরো পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ফের ট্রলার ডুবি, ১৯ জেলে নিখোঁজ

পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদদাতা, ২২ জুলাই ২০১৮

বরগুনার পাথরঘাটা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের ফেয়ার বয়ার নিকটে ফের ঝড়ের কবলে পড়ে ১৯ জেলে নিয়ে এফবি অর্ক নামের একটি মাছ ধরা ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে এ ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে।

বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: দুলাল মাঝি ট্রলারডুবির ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।

নিখোঁজ মানিক মিয়া (৩০), মিন্টু মিয়া (৩৫), সোলায়মান (৪০), আইয়ুব আলী (৪০), নাসির (৩২), সিদ্দিকুর রহমান (৩০), দুলাল মিয়া (৫০), রুবেল হোসেন (২৫), রাহাত (২০), মনির (২৫), হাকিম (৩২), কাশেম (৩৮) ও মোতালেব (৪০) জেলের নাম জানা গেছে। নিখোঁজ সবাই বরগুনা সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

ট্রলার মালিক আশুতোষ সরকার জানান, ১৮ জুলাই বরগুনা থেকে গভীর সমুদ্রে ১৯ জন জেলে নিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এফবি অর্ক ট্রলারটি। পরে বঙ্গোপসাগরের চালনা বয়া থেকে বিশ বাম দক্ষিণে মাছ শিকারের জন্য জাল ফেলে। হঠাৎ সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় তীরে ফিরে আসার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে তারা নিখোঁজ হয়। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিষয়টি ট্রলার মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে।

দুলাল মাঝি জানান, বরগুনা সদর উপজেলা আশুতোষ সরকারের মালিকানাধীন এফবি অর্ক ট্রলারটি ১৯ জন জেলে নিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো খোজ পাওয়া যায়নি। পাথরঘাটা থেকে একটি ট্রলার নিয়ে জেলেদের উদ্ধারে সমুদ্রে রওনা হয়েছে।

এর আগে গতকাল শনিবার সকালে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের নারিকেলবাড়িয়া এলাকায় ১৭ জেলেকে নিয়ে এফবি তারেক-১ নামের একটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। পরে অন্য ট্রলারের সহযোগিতায় ডুবে যাওয়া ১৬ জেলেকে উদ্ধার করা হলেও আমির হোসেন নামের এক জেলেকে উদ্ধার করা সম্বব হয়নি। আহতদের পাথরঘাটা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:বঙ্গোপসাগর থেকে ৪ জেলের লাশ উদ্ধার

পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদদাতা, ৩০ জুলাই ২০১৮

বঙ্গোপসাগর থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যার দিকে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের পৃথক স্থান থেকে তিনজনকে উদ্ধার করা হয়। অপর একজনকে উদ্ধার করা হয় পাথরঘাটা থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর থেকে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শনিবার (২১ জুলাই) গভীর সমুদ্রে প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পড়ে মাছ ধরা ট্রলারসহ অনেক জেলে ডুবে যায়।

সোমবার (২৩ জুলাই) ট্রলার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ডুবে যাওয়া জেলেদের অনুসন্ধানের জন্য মো: মতিয়ার রহমান, মো: হারুন ও মো: বাদশা মিয়াসহ তিনটি ট্রলার সাগরে পাঠানো হয়। পাঁচদিন পর শনিবার সন্ধার দিকে এফবি শাহজালাল ট্রলারের জেলে পাথরঘাটা উপজেলার বাদুরতলা গ্রামের তোতা মিয়া, এফবি ভাই ভাই ট্রলারের বরগুনার গুলিশাখালী গ্রামের মো: লিটন ও স্বপনকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে।

পরে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পৃথক তিন জায়গায় মরদেহ ভাসতে দেখে কাছে গিয়ে তিনটি লাশ বিকৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। লাশ বিকৃত হওয়ায় সুন্দরবন সংলগ্ন মান্দারবাড়িয়া, আলোরকোল ও দুবলার চর এলাকায় উদ্ধারকাজে জড়িত প্রায় ৪০ জন তাদের জানাজা শেষে দাফন দেয়।

ধারণা করা হচ্ছে উদ্ধারকৃত লাশগুলো ডুবে যাওয়া ট্রলারের জেলেরা হবে। তবে লাশ বিকৃত থাকায় নাম পরিচয় বলতে পারেনি তারা। জীবিত উদ্ধার তোতা মিয়া, লিটন ও স্বপনকে গতকাল সন্ধ্যায় পাথরঘাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে গত বুধবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে পাথরঘাটা থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এফবি মা-বাবার দোয়া নামের একটি ট্রলার ঝড়ের কবলে ডুবে যায়। কিছুক্ষণ পর পার্শবর্তী এফবি এলাহি ভরসা ট্রলারের জেলেরা ১১জনকে উদ্ধার করলেও মো: শহিদ মিয়া নামের এক জেলে নিখোঁজ হয়।

নিখোঁজের ৪ দিন পর পাথরঘাটা থেকে ৪০ কিলোমিটর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রোববার (২৯জুলাই) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করে। এ সময ওই ট্রলারের মধ্যে জেলে শহিদুলের লাশ পাওয়া যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement