২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌদি আরবে এক নারীকে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ

-

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সৌদি আরব গিয়েছিলেন শাবনী গাইন। সেখানে গৃহকর্মীর কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে নিয়ে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়। পরে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরে আসেন শ্রাবনী।

আলসামি সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল এর মাধ্যমে সৌদি আরব যায় এই নারী গৃহকর্মী। সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদ বাংলাদেশে বসে হানিফ চৌধুরী ও জহির নামের দালালদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে দরিদ্র নারীদের সৌদি আরব পাঠায়। ভাল কাজ ও পারিশ্রমিকের লোভ দেখিয়ে তাদেরকে প্ররোচিত করা হয়। কিন্তু সেখানে নিয়ে নারীদেরকে বিক্রি করে দেয়া হ।

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামের সুশান্ত সরকারের স্ত্রী শ্রাবনী গাইন সৌদি আরব থেকে এমনই ভয়াবহ নির্যাতনের বিবরণ দিলেন।


সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা শ্রাবনী গাইন জানান, বাংলাদেশের হানিফ চৌধুরী ও জহির নামের দালালদের মাধ্যমে গত ১লা জুন রাতে সৌদিআরব যান সেখানে হোসাইন নামের এক লোক তাকে বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখেন তার স্ত্রী সাহেদা ও ৮ মাসের শিশু সন্তান খালেদ । দু’দিন ভালোই কাটে তৃতীয় দিন থেকে খারাপ প্রস্তাব দিতে থাকে হোসাইন। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রতিনিয়ত মারধর করতে শুরু করে ও খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেয়। মাঝেমধ্যে দিনে এক বেলা খাবার দিতেন আবার কোন দিন দিতেন না। এভাবে চলে ১৬ জুন পর্যন্ত।

শ্রাবনী গাইন জানান, সৌদিআরবে ঈদের দিন (১৬ জুন) তার বন্ধু-বান্ধব আসবে তাদের সাথে খারাপ কাজ করতে হবে হুমকি দেয়। কিন্তু আমি তাতে রাজি না হওয়ায় আমাকে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে আহত করে এবং বলে তোকে ১২ লাখ রিয়াল দিয়ে কিনেছি। এক সময় চাবুকের মার খেতে খেতে অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরলে আমাকে ওই বাড়ির তৃতীয় তালায় একটা রুমে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে আরও ১৬ জন বাংলাদেশী নারী ছিল।

ওইখানে বসে বাংলাদেশে আমার স্বামী সুশান্ত সরকারকে ফোন করে সব কিছু জানাই। সে আমাকে জানায় যেভাবে হোক ওইখান থেকে পালিয়ে পুলিশের সহায়তা নিয়ে দেশে ফেরার কথা বলে। রাতে তাদের সাথে কথা বলে ১৭ তারিখ ওখানে থাকা রেশমা নামের এক মেয়েকে জানালায় রশি বেধে নিচে নামিয়ে পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার করতে বলি সে রাস্তা দিয়ে পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার করে। আমরাও তৃতীয় তলায় বসে চিৎকার করি। পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
হোসাইন ১৯ তারিখে বিকাল ৩ টার দিকে সৌদি আরবের থানা থেকে আমাকে ছাড়িয়ে রিয়াদে আবু মোহাম্মাদ এর বাসায় দেয়ার কথা বলে রিয়াদের বিমানে উঠিয়ে দেয় সেখানে বাংলাদেশি শাহজাহান নামের এক লোক তাকে বিমান বন্দর থেকে নিয়ে যায়। তার কাছ থেকে আবু আব্দুল্লাহ (রিয়াদ) ও তার স্ত্রী আরবি নামের দু’জন এসে বাংলাদেশের অফিসে নেয়ার কথা মেলাজ নামক জায়গায় তার বাসায় নিয়ে যায়। ওই খানে গিয়েও বিপাকে পরতে হয়।

রিয়াদ নামের ওই লোক প্রতিদিন মারধর করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর চেষ্টা করে। দেহ ব্যবসা না করলে তাকে দশ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে জানায়। এদিকে আমার স্বামী ঢাকায় গিয়ে সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদ ও বাংলাদেশের দালাল হানিফ চৌধুরী ও জহির এর কাছে যায় এবং আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলে।

সৌদিয়ান ও দালালরা আমার স্বামীর কাছে কাছে দুই লক্ষ টাকা দাবি করে। পরে ৯০ হাজার টাকায় তারা রাজি হয়। ২৮ জুন বিকালে ৯০ হাজার টাকা প্রদান করলে ২ জুলাই সকাল ৬টায় সৌদি আরব থেকে বিমানে তুলে দেয়। দুপুর ১টায় এসে ভারতের দিল্লিতে আসি। ওইখানে এক রাত থাকার পরে ৩ জুলাই বিমানে এসে বাংলাদেশ বিমানবন্দর পৌঁছাই।

এব্যাপারে বাংলাদেশী দালাল হানিফ চৌধুরির কাছে (০১৭৮৬৫৪৩৭৮৮৪) ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রাবনীর স্বামীর সাথে সমাধান হয়েছে। তিনি আমাদের ৯০ হাজার টাকা দিয়েছেন আমরা তার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে এনেছি।

আলসামি সার্ভিস ইন্টার ন্যাশনাল এর মালিক সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদ এর কাছে (০১৬১৬১৬০০৭৯) ফোনে জানতে চাইলে তার সহকারী মাসুম বিল্লা জানান, স্যারে অফিসে নাই, কখন আসবে বলা যায় না, এব্যাপারে অফিসে এসে কথা বলেন।

বাংলাদেশী দালাল জহির এর কাছে (০১৭৪৭৭১১৭৩৫) কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নাই।

 


আরো সংবাদ



premium cement