ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছে শীতকাল। আগুনঝরা ফাগুনের আহ্বানে ফুটেছে শিমুল-পলাশ। গ্রামজুড়ে এখন আমের মুকুলের গন্ধ। ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছি। ফুলের গন্ধ মাখা বাতাসে ভর করে ভেসে আসছে কোকিলের কুহুতান। গ্রাম বাংলার সর্বত্র এখন এমনই দৃশ্য। সারা দেশের মতোই মানিকগঞ্জের আম চাষিরাও আমের মুকুলে স্বপ্ন বেঁধেছেন।
ঋতুবৈচিত্র্যে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় সবুজ প্রকৃতির আমেজ এখন অনেকটা আবেগের হয়ে উঠেছে। বসন্তের ফাগুন আর আমের মুকুল যেন একই সুতোয় গাঁথা। সদ্য মুকুল ফোটার দৃশ্য এখন ইট-পাথরের শহর থেকে শুরু করে বিস্তৃত সাটুরিয়ার গ্রামীণ জনপদেও। জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই প্রচুর আমবাগান রয়েছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে আম লাভজনক ফল হওয়ায় প্রতি বছরই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। তবে নতুন গড়ে ওঠা আমবাগানের বেশির ভাগই স্থানীয় জাতের। এ ছাড়াও সাটুরিয়াতে আম্রপালী, বারি ৪, হাঁড়িভাঙা জাতের আম চাষ হচ্ছে। আগে সাটুরিয়াতে আমের মৌসুমে ‘অফ ইয়ার’ এবং ‘অন ইয়ার’ থাকত। এক বছর আমের স্বাভাবিক ফলন হলে পরের বছর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম ফলন হতো। কারণ হিসেবে আমগাছে খাদ্যের অভাবকে দায়ী করা হতো। প্রায় এক যুগের বেশি সময় থেকে সাটুরিয়ার আমচাষিদের অকান্ত পরিশ্রমে এই রেওয়াজ ভেঙেছে। বছরজুড়ে চাষিদের নিয়মিত পরিচর্যার কারণে এখন সাটুরিয়ার সব বাগানেই আমগাছ নিয়মিত খাদ্য পাচ্ছে। এতে প্রতি বছরই আমের আশানুরূপ ফলন বাড়ছে। এবার পৌষের শেষেই আগাম মুকুল এসেছে অনেক আমবাগানে। বুক ভরা আশা নিয়ে প্রতিদিনই পরিচর্যা করে চলছেন চাষিরা। আমগাছের গোড়ায় মাটির বাঁধ দিয়ে দেয়া হচ্ছে পানি সেচ।
মৌমাছির দল গুনগুন করে ভিড়তে শুরু করেছে আম্রমুকুলে। মুকুলের সেই সুমিষ্ট সুবাসে আন্দোলিত হয়ে উঠছে চাষির মনও। উপজেলার বরাইদ, দিঘুলিয়া ও দরগ্রাম এলাকা পর্যবেক্ষণে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
এ দিকে আমের আগাম মুকুলে চাষিরা খুশি হলেও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, পুরোপুরিভাবে শীত বিদায়ের আগেই আমের মুকুল আসা ভালো নয়। হঠাৎ ঘন কুয়াশা পড়লেই আগেভাগে আসা মুকুল তিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও প্রাকৃতিক নিয়মে ফাগুন মাসে ঘন কুয়াশার আশঙ্কা খুবই কম, তার পরও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির বিরূপ আচরণে আমের মুকুল তিগ্রস্ত হতে পারে। ঘন কুয়াশায় ‘পাউডারি মিলডিউ’ রোগে আক্রান্ত হয় মুকুল। এই রোগে আক্রান্ত হলে মুকুলের বেশির ভাগই ঝরে যেতে দেখা যায়। সাটুরিয়ার পাতিলাপাড়া এলাকার আম ব্যবসায়ী আবদুল হাই মিয়া বলেন, বছরের এই আম বিক্রি করেই অনেক চাষি মেয়ের বিয়ে দেন, সারা বছরের খরচ জোগাড় করেন এবং বড় ঋণ পরিশোধ করেন। এ ছাড়াও আম চাষিদের অর্থনৈতিক অনেক বিষয় আমের মৌসুমের সাথে জড়িত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, মাঘের শুরুতে শীতের তীব্রতা ছিল। এরই মধ্যে মুকুল চলে এসেছে অনেক গাছে। এখন কোনো কারণে যদি কুয়াশা পড়ে তাতে আমের মুকুল তিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু আবহাওয়া যদি রৌদ্রোজ্জ্বল হয় এবং তাপমাত্রা একটু একটু করে বাড়ে তবে ফলন ভালো হবে বলে আশা করা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা