গৌরীপুরে ট্রেনে তিল ধারণের ঠাঁই নেই : কর্মস্থলে ফেরাদের দুর্ভোগ

ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন হয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকার রেলপথে বন্যার মতো ছুটছে মানুষ। প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে তারা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ঈদের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও মোহনগঞ্জ-ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে ট্রেনের ভেতরে ও ছাদে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। কোথাও তিল ধারনের ঠাঁই নেই। এ দিকে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গৌরীপুর জংশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে।
রোববার সকাল ১০টার দিকে গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী শতশত যাত্রী আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। ট্রেনটি সাঠিক সময় সকাল ১০টা ১০মিনিটে গৌরীপুর স্টেশন ত্যাগ করা কথা। কিন্তু অবশেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেনটি গৌরীপুর স্টেশনে প্রবেশ করে। বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে ট্রেনে দায়িত্বর কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, বারবার ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে তাই ট্রেনের ধীরগতি এবং যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ। ট্রেনের ইঞ্জিন সমস্যার কারণে গৌরীপুর স্টেশনে এসেও ট্রেনটি ২০ মিনিট বিলম্ব করে। এ সময় দেখা যায় ট্রেনের ভেতর, ছাদে সব জায়গায় মানুষের উপচেপড়া ভিড় একজন অপরজনকে টেনে তুলেছেন ট্রেনের ছাদে। স্টেশনে ভিড়ের মধ্যে ট্রেনে ভেতর ও ছাদে উঠতে না পেরে অনেকেই হতাশ হয়ে থাকেন। আর যারা ভিড় ঠেলে ট্রেনে উঠতে পেরেছেন তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছেন। অনেক নারী পুরুষ ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করে সুযোগ না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠছেন। এ দিকে হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি ময়মনসিংহ স্টেশনে প্রবেশের আগেই আউটার সিগনাল্যার কাছে আসতেই পুনরায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এসময় প্রচণ্ড রোদে ট্রেনের ভেতর ও ছাদের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। পরে ইঞ্জিন মেরামত করে বিলম্বে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা য়ায়, মোহনগঞ্জ-ঢাকা রেলপথে প্রতিদিন গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন হয়ে হাওড় এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন, মহুয়া কমিউটার ট্রেন এবং জারিয়া-ঢাকা রেলপথে বলাকা কমিউটার ট্রেন এবং ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রেলপথে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিয়মিত যাতায়াত করছে। এ ছাড়াও ময়মনসিংহ-ভৈরব, মোহনগঞ্জ ও জারিয়া রেলপথে কয়েকটি লোকাল ট্রেন চলাচল করছে। প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীদের ভিড় লক্ষণীয়।
ট্রেনে হুড়োহুড়ি করে উঠতে গিয়ে অনেক সময় যাত্রীদের মধ্যে হাতাহাতি ও বাগি¦তণ্ডার ঘটনা ঘটছে। শনিবার আন্তঃনগর হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রী উঠাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন যাত্রী আহত হন। অপর দিকে, শনিবার রাতে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনেও যাত্রী উঠাকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রতিবছরের মতো এবারো টিকিট কালোবাজারীদের দখলে। দ্বিগুণ, তিন গুণ দিয়ে নিতে হচ্ছে টিকিট। এক টিকিট কালোবাজারীকে আটক করে মুচলেখা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
এ দিকে শুক্রবার রাতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেসে অনুরূপ ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের হাতে নৌবাহিনীর কাপ্তাইয়ে কর্মরত নাবিক (সাদা পোশাকে থাকা) তাহমিদ আহমেদ লাঞ্চিত হন। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ট্রেনের ‘ট’ নম্বর বগির দরজা ভেতর দিক থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। যাত্রীরা টিকিট নিয়ে উঠার জন্য ডাকচিৎকার ও অনুরোধ করলেও দরজা খোলা হয়নি। একপর্যায়ে যাত্রীরা জানালা দিয়ে উঠার চেষ্টা চালায়। এতেও ব্যর্থ হওয়ায় ট্রেনের স্টুয়ার্ডম্যান, কর্তব্যরত আনসারদের অনুরোধেও দরজা খোলা হয়নি। এ নিয়েওই বগিতে থাকা সেনাবাহিনীর সৈনিক ও নৌ বাহিনীর নাবিকদের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
এ ঘটনায় নৌবাহিনীর নাবিক টাঙ্গাইল জেলার তাহমিদ আহমেদ গৌরীপুর রেলওয়ে ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ওই বগিতে ছুটিতে আসা পোশাকবিহীন নৌবাহিনীর পাঁচজন নাবিক ও সেনাবাহিনীর পাঁচজন সৈনিক ছিলেন। যাত্রীদের উঠতে তিনি বাঁধা দেননি। ভেতর দিক থেকে কে লক করে দিয়েছিল তিনি তা জানেন না। এ নিয়েই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গৌরীপুর রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ কার্ত্তিক চন্দ্র রায় ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।