দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে দুর্ঘটনার শিকার পঙ্গু শ্রমিকদের সংসার চলে অন্যের কাছে সাহায্য চেয়ে। একসময়ের সক্ষম কর্মঠ শ্রমিক এখন সংসার চালাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্য চেয়ে বেড়াচ্ছেন।
কয়লাখনি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দোকানে দোকানে ও বাস-ট্রাকের চালকের কাছে সাহায্য চাচ্ছেন কয়লাখনির দুর্ঘটনার শিকার পঙ্গু শ্রমিক ইদু সরদার (৪০)। পূর্বপরিচিত হিসেবে কথা বলতে গেলে কেঁদে ফেললেন তিনি। তিনি জানান, ২০০৪ সালের দুর্ঘটনায় তিনি তার বাম পা হারিয়েছেন। পা না থাকায় এখন তার চাকরি নেই, তাই পরিবারের খরচ জোগাতে অন্যের কাছে সাহায্য চাইতে হচ্ছে। একই অবস্থা খনির আরেক শ্রমিক মোহাম্মাদ আলীর। তিনি একেবারে পঙ্গু। তিনি জানান, ২০১১ সালের ১১ মে ভূ-গর্ভের দুর্ঘটনায় তিনি একবারে পঙ্গু হয়ে যান। এখন তার চাকরি নেই বিধায় সাহায্য নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কিছু সাহায্য পাওয়া যায়। তবে বছরের প্রায় ১২ মাসই অন্যের কাছে হাত পেতে জীবিকা নির্বাহ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আর তাদের মতো অসহায়ের সংখ্যা অনেক, তাই সব সময় অন্যের সহানুভূতি পাওয়া সম্ভব হয় না।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত খনিতে কাজ করতে এসে পঙ্গু হয়েছেন ৬০ জনের উপরে। তার মধ্যে ১৭ জনের অবস্থা গুরুতর। আর প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। তাদের পরিবারগুলো এখন অচল হয়ে পড়েছে। পার্বতীপুর উপজেলার বাঁশপুকুর গ্রামের সাবু সরদারের ছেলে ইদু সরদার, একই উপজেলার হোসেনপুর নামাপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে মোহাম্মাদ আলী, শেরপুর গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে জেনারুল ইসলাম, বাঁশপুকুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রহিম, শুকদেবপুর গ্রামের আরিফ উদ্দিনের ছেলে ছামিদুল, রসুলপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে শহিদুল, বাঁশপুকুর গ্রামের তালেব উদ্দিনের ছেলে মাসুদ এখন পঙ্গু জীবন যাপন করছেন।
দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন পার্বতীপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে কামরুজ্জামান, ফুলবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের লক্ষ্মী মার্ড্ডির ছেলে নির্মল মার্ড্ডি, হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাঁড় গ্রামের বদিউজ্জামানের ছেলে ছানোয়ার হোসের, পার্বতীপুর উপজেলার চৌহাটি গ্রামের বেতন চন্দ্রের ছেলে মন্টু চন্দ্র, একই উপজেলার সরদারপাড়া গ্রামের ইস্কেন্দার আলীর ছেলে সুলতান মাহমুদ ও কালিকাপুর গ্রামের কাঞ্চন চন্দ্রের ছেলে রঞ্জিত চন্দ্র। তাদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
খনি কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সবাই বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসিএলের শ্রমিক। দুর্ঘটনার সময় তাদেরকে এককালীন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।
বড়পুকুরিয়া শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা রবিউল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম জানান, খনিতে কাজ করতে এসে তারা পঙ্গু হয়েছেন ও জীবন দিয়েছেন। কিন্তু‘ তাদের কোনো লাভ হয়নি। তাদের পরিবার আজ অসহায়। তাদের দেখার কেউ নেই। অথচ তারাই এই খনিতে শ্রম দিয়ে বড়পুকুিরয়া কয়লাখনিকে পরিণত করেছেন দেশের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে। তাই তাদের অসহায়ত্ব দেখার জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। একই সাথে যাতে আর কোনো শ্রমিককে এই অসহায় জীবন যাপন করতে না হয়, এ জন্য তাদের চাকরি স্থায়ী করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা