২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আতঙ্কে শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা

- ছবি : সংগৃহীত

শ্রীলঙ্কায় রোববারের ভয়াবহ হামলার পর মাত্র একবারই ঘর থেকে বের হয়েছেন মোহাম্মদ হাসান। ওই দিনের ঘটনার পর থেকেই তার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে, মুসলিম হওয়া তার ওপর হামলা করতে পারে কেউ। ৪১ বছর বয়সী হাসান একটি প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করেন। বাড়ির লোকরাও তাকে বাইরে বের হতে দিচ্ছে না।

হাসান বলেন, ‘তারা আতঙ্কে আছে। ভাবছে বাইরে গেল আমি হয়তো আর জীবিত ফিরতে পারবো না। এদিন অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই স্থানীয় দেমাতাগোডা এলাকার জুমা মসজিদে গিয়েছিলেন নামাজ পড়তে।

শুধু হাসান নয়, পুরো শ্রীলঙ্কাতেই এখন এমনভাবে সময় কাটছে মুসলমানদের। রোববারের ঘটনার সাথে জড়িতা মুসলমান এমন কথা নিয়ে আলোচনা ‍শুরুর পর থেকেই তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। ৬০ বছর বয়সী জরিনা বেগম জানান, আতঙ্কে তিনি রাতে ঘুমাতেই পারেন না। তিনি বলেন, সবাই এখন মুসলমানদের ওপর ক্ষিপ্ত। ওই মসজিদের কাছেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এমনকি মায়ের কোলের শিশুদেরও হত্যা করা হয়েছে। ধারণাও করতে পারি না মনে এত ঘৃণা পুষে রেখেছিল (হামলাকারীরা)।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বাড়িতে গাদাগাদি করে থাকছি। আমরা বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছি।’

শ্রীলঙ্কার ওই ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহত হয়েছে সাড়ে তিন ‘শর বেশি লোক। হামলার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ধরা হচ্ছে মুসলিমদের একটি উগ্রবাদী গ্রুপকে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক উগ্রবাদী গোষ্ঠি আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে। যে কারণে মুসলমানদের ওপর ক্ষোভ থাকতে পারে ধারণা করছেন তার

বৌদ্ধপ্রধান দ্বীপ দেশটিতে জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মুসলমান। সংখ্যার দিক থেকে বৌদ্ধ ও হিন্দুদের পরেই তাদের মুসলমাদের অবস্থান।

২০০৯ সালে তামিলদের সাথে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দেশটিতে মুসলমানদের ওপর বেশ কয়েক দফায় সাম্প্রদায়িক আক্রমণ হয়েছে। ২০১৩ ‍ও ২০১৮ সালে কট্টরপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে মুসলমাদের বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের হামলা হয়েছে। এমন গুজবও ছড়ানো হয়েছে যে, মুসলমানদের দোকান থেকে কেনা অন্তর্বাস পরিধান করলে সিংহলিদের বা মুসলমানদের দোকান থেকে খাবার খেলে তারা বন্ধ্যা হয়ে যাবে।

কাজেই সর্বশেষ এই পরিস্থিতির পর মুসলমানরা নতুন করে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মুসলমাদের প্রায় সবাই এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করছে। এই ঘটনায় তামিল ও সিংহলিদের মতো তারাও ক্ষুব্ধ। তবে তারপরও জুমা মসজিদে সমবেত মুসুল্লিদের মধ্যে দেখা গেছে উদ্বেগ। অনেকে বলছেন, পুলিশ সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এমনটাই তাদের আশা।

মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহমেদ বলেন, এই হামলার পর মুসলমাদের ওপর কেউ প্রতিশোধ নিতে শুরু করে কিনা সেই আতঙ্কে আছে সবাই। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। আমরা সবাইকে বলতে চাই যে, আমরা তোমাদের শত্রু নই। এটি আমাদেরই দেশ। এএফপি ও আল জাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement