২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাস্তার পাশে ডিম বিক্রি করতে অনার্স ডিগ্রি কী কাজে লাগে?

রাস্তার পাশে ডিমের তৈরি খাবার বিক্রি করছেন অনার্সপড়ুয়া সাগর -

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে ডিমের তৈরি খাবার বিক্রি করছিলেন এক তরুণ। সাগর কুমার নামের এ তরুণ ভারতের উত্তর প্রদেশের নইডাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের একজন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, রাস্তার পাশে ডিম বিক্রি করতে কমার্সে অনার্স ডিগ্রি কোন কাজে আসে বলতে পারেন?


কমার্সের ছাত্র সাগর কুমার ওই খাবার বিক্রি করছিলেন। কিন্তু তাকে খুবই ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল। কারণ ছোট ভাইবোনদের স্কুল ফি ও বাবার কিডনির ডায়ালাইসিসের খরচ মেটাতে কমার্সের ক্লাস করা বাদ দিয়ে রাস্তার পাশে খাবার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছিলেন।


সাগর বলেন, আমি রাতে কিছু পড়াশুনা করতে পারি। আর বাকিটা সময় আমি আমার খাবারের গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যাই এবং খাবার বিক্রি করে দিনে পাঁচশ রুপি আয় করি।


সাগর জানান, তিনি রেলওয়েসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে আবেদন করেছিলেন, যেগুলোতে কলেজের ডিগ্রির কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। কিন্তু তারপরও তার চাকরি হয়নি। এরপর তিনি ব্যবসার জন্য ব্যাংক লোনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেটাও রীতিমত দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। এখানে চাকরি পাওয়া যেমন কঠিন, ছোট ব্যবসার জন্য ঋণ পাওয়া তার চেয়ে কম কঠিন নয়।

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেয়ার ঘোষণা দিলেও সাগরের মতো হাজারো মানুষ সেটিকে ভুল প্রমাণ করছে।

 

সাগরের মতোই অবস্থা দিল্লির তুঘলকাবাদ বস্তির একজন পার্ট টাইম রাধুনি সীমার। তার আশা তিনি অফিসে সেক্রেটারির একটি কাজ পাবেন।


সীমা বলেন, আমার কম্পিউটারে টাইপিং গতি বেশ ভাল এবং আমি অঙ্কের বিষয়গুলোও সামলাতে পারি। আমার পরিবার উত্তর প্রদেশের বাদায়ুন থেকে দিল্লি এসেছে। আমি আশা করেছিলাম, এখানে এসে আমি সরকারি অফিসে একটি কাজ পাবো। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি তাতে সফল হইনি। উপরন্তু নারীদের কাজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তো আছেই।


ভারতে প্রতি বছর এক কোটি ২০ লাখ নতুন কর্মী চাকরিবাজারে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হয়। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পূর্বে নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি প্রতি বছর এক কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন। কিন্তু তিনি তো তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই পারেননি। বরং এ বছর বেকারত্বের হার বিগত ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বলে বিভিন্ন জরিপ-প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।


ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিসের ফাঁস হওয়া এক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জরিপটির সাথে জড়িত কর্মকর্তারা বলেছেন, জরিপের তথ্যগুলো চূড়ান্ত নয়। তারা দাবি করেন, বেকারদের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।


অন্যদিকে সাবেক অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি এ জরিপের পুরোটাই প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটি ছিল ভুল তথ্য। তিনি বলেন, যদি কোনো কর্মসংস্থান তৈরি না-ই হতো তাহলে অবশ্যই এর প্রতিক্রিয়ায় সমাজে ব্যাপক গোলযোগ হতো। কিন্তু গত বছরে এ ইস্যুতে কেউ কোনো আন্দোলন দেখেনি।


ভারতের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান বেকারত্বের পেছনে মোদি সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের বেশ ভূমিকা রয়েছে। ২০১৬ সালে মোদি হঠাৎ করে ব্যাংক নোট ব্যান করলে তার জেরে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থান ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে চাকরির বাজারে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য পিয়নের চাকরির জন্য পিএইচডি ডিগ্রিধারী মানুষও ভীড় করেছে। আবার রেলওয়ের ৬৩ হাজার ক্লিনার ও লাইন মেইনটেইন্স পদের জন্য আবেদন করেছে প্রায় দুই কোটি মানুষ।


সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement