১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঘুষে ফেঁসে কারাবাসে নাজিব রাজাক, কাজে আসছে না ধন-রত্ন-ক্ষমতা

ঘুষে ফেঁসে কারাবাসে নাজিব রাজাক - সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে আবারও দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার কুয়ালালামপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে নেওয়া হবে।

ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ (১এমডিবি) ফান্ডের ৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলার নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মালয়েশিয়ার দুর্নীতিবিরোধী কমিশন (এমএসিসি) জানিয়েছে, আগামীকাল আদালতে তোলার আগে নাজিবের বক্তব্য নেওয়া হবে। এ কাজে তারা পুলিশের সহায়তা নেবে।

নাজিব এর আগে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমাকৃত ৬২ কোটি ৮০ ডলারের উৎস সম্পর্কে বলেছেন, এসব অর্থ সৌদি আরব তাকে দিয়েছে। এ সংক্রান্ত কিছু দলিলপ্রমাণও তিনি তুলে ধরেছেন। সৌদি আরব কেন তাকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

কোনো কোনো সূত্র বলছে, সৌদি রাজপরিবারের স্বার্থ নিশ্চিত করতে রাজাককে বিপুল অংকের অর্থ ঘুষ হিসেবে দিয়েছে তারা।

এর আগে গত ৩ জুলাই দুর্নীতির অভিযোগে কুয়ালালামপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে গ্রেফতারের একদিন পরই এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জামিনে মুক্তি দেয় দেশটির আদালত।

 

এত ধন-রত্ন নাজিব রাজাকের বাসায়!

 ১৯ মে ২০১৮

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সংশ্লিষ্ট তিনটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, গয়না এবং দামি হ্যান্ডব্যাগ জব্দ করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, অভিযানে তারা ২৮৪টি বাক্সভর্তি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মহিলাদের ব্যবহৃত দামি হ্যান্ডব্যাগ, ৭২ ব্যাগ ভর্তি গয়না ও দামি ঘড়ি এবং বিপুল রিংগিত ও মার্কিন ডলার জব্দ করেছে।

বুধবার রাতে নাজিবের অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান শুরু করে পুলিশ। শুক্রবার সকালেও যা চলছিলো। এ সময় তারা খুজে পায় বিপুল এই ধন-সম্পত্তি। যার মূল্য হতে পারে ৮০ কোটি মার্কিন ডলার।

পরে এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন পুলিশের প্রধান অমর সিং বলেন, ‘ঠিক কী পরিমাণ গয়না উদ্ধার করা হয়েছে তা আমি এখনই বলতে পারছি না। কারণ আমরা বাক্সেভরা গয়না জব্দ করেছি। তবে এটা বলতে পারি, পরিমাণ অনেক বেশি।’

এদিকে, কোনো ধরনের পরোয়ানা ছাড়া নাজিব পরিবারকে হেনেস্তা করতে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তার আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘যেসব জিনিস জব্দ করা হচ্ছে সেগুলো হয়তো তেমন মূল্যবান কিছু না। কিন্তু যেভাবে সেটা প্রচার করা হচ্ছে তাতে সবার মনে আমার মক্কেলকে নিয়ে নেতিবাচক ছবি তৈরি হচ্ছে।’

জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়ের এক সপ্তাহ পর গত বুধবার রাত থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুত্রজায়ায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন এবং নাজিব পরিবারের মালিকানায় থাকা চারটি আবাসিক ভবনে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ এবং দেশের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করতে গড়া বিনিয়োগ তহবিল ‘ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বরহাদ’ (ওয়ানএমডিবি) থেকে নাজিব ৭০ কোটি ডলার নিজের পকেটে পুরেছেন, ২০১৫ সালে এমন অভিযোগ ওঠার পর তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।

যদিও পরে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ নাজিবকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্তত ছয়টি দেশে তার বিরুদ্ধে এখনো দুর্নীতি তদন্ত চলছে। মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নাজিবের বিরুদ্ধে ফের দুর্নীতি তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেন। যদিও কোনো দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাজিব।

ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে পড়ার পর নাজিবকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন মাহাথির। কিন্তু নাজিব সরে না দাঁড়ানোয় তাকে ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামাতেই ১৫ বছর পর রাজনীতিতে ফেরেন মাহাথির। এক সময়ের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে জোট বেঁধে নির্বাচনে জিতে ৯২ বছর বয়সে আবারো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। নির্বাচনে হারের পর ছুটি কাটানোর কথা বলে স্ত্রীসহ দেশত্যাগের উদ্যোগ নিয়েছিলেন নাজিব। কিন্তু গত শনিবার তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

বিবিসি ও আলজাজিরা

তিন দিন লেগেছে নাজিব রাজাকের জব্দকৃত অর্থ গুণতে!
দ্য স্টার, মালয়েশিয়া ২৩ মে ২০১৮

মালয়েশিয়ার সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ও প্রতিষ্ঠান থেকে লাগেজ ভর্তি যে নগদ অর্থ উদ্ধার করেছে দেশটির পুলিশ, সেগুলো গণনা শেষ হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, জব্দকৃত নগদ অর্থের পরিমাণ ১২ কোটি মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। গত সপ্তাহে নাজিব রাজাকের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে একযোগে অভিযান চালায় পুলিশ।

তিনটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, গয়না এবং দামি হ্যান্ডব্যাগ জব্দ করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, অভিযানে তারা ২৮৪টি বাক্সভর্তি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মহিলাদের ব্যবহৃত দামি হ্যান্ডব্যাগ, ৭২ ব্যাগ ভর্তি গয়না ও দামি ঘড়ি এবং বিপুল রিংগিত ও মার্কিন ডলার জব্দ করেছে। প্রাথমিকভাবে নাজিব রাজাকের জব্দকৃত অর্থ ও ধন-রত্নের আনুমানিক মূল্য ৮০ কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে বলে ধারণা করেছিলো পুলিশ।

বুধবার দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, তার ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় লাগেজ ও ব্যাগ ভর্তি নগদ অর্থ গোনা শেষ করেছে। কমার্শিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের(সিসিআইডি) একজন কর্মকর্তা জানান, সোমবার অর্থ গণনা শুরু হয়, যা বুধবার শেষ হয়েছে। কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করা নিশ্চিত করতে তদন্ত কর্মকর্তারা পর্যাপ্ত সময় নিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কেন্দ্রিয় ব্যাংক ও পুলিশের কর্মকর্তারা মিলে প্রায় ত্রিশ ব্যাগ নগদ অর্থ গোনা শেষ করেছে। সব মিলে হয়েছে ১২ কোটি রিঙ্গিত।’ তবে জব্দকৃত গহণা ও অন্যান্য ধন-রত্নের পরিমাণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানানো হয়নি মালয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

পুলিশ অভিযানে এই বিপুল ধন-রত্ন খুঁজে পাওয়ার পর নাজিব রাজাক বলেছিলেন, নির্বাচনের সময় তার জোট বারিসন ন্যাশনালের তহবিলে বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তার অর্থ এগুলো। তবে সেই যুক্তি পক্ষে তিনি কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। নির্বাচনের পরেই নাজিবের দেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে নতুন সরকার। তার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে দুর্নীতির তদন্তও।


আরো সংবাদ



premium cement