২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একাধিকবার ফেল করেও যেভাবে বিশ্ব সেরা ধনী জ্যাক মা

আলিবাবা
জ্যাক মা ৩০টির মতো চাকরির আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাকে চাকরি দেয়নি। - ছবি : বিবিসি

ই-কমার্স সাম্রাজ্য আলিবাবার প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে যাচ্ছেন জ্যাক মা।

চীনের অন্যতম এই বিত্তশালী জ্যাক মা গত সোমবার ১০ সেপ্টেম্বর যখন ৫৫ বছরে পা দিয়েছেন, তখন তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর পদ ছেড়ে দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে জনহিতকর কাজে মনোনিবেশ করার কথা বলেছেন।

তার এই ঘোষণা সারাবিশ্বে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

তাকে নিয়ে অনেক তথ্যও এখন আলোচনায় আসছে। এরমাধ্যে জ্যাক মা সম্পর্কে পাঁচটি উল্লেখযোগ্য তথ্য নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।

১) জ্যাক মা ছিলেন একজন ইংরেজি শিক্ষক
তিনি চীনের পূর্বাংশে হাংঝৌ শহরে দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৯৬৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর।

স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।

গরিব পরিবারে জন্ম নেয়া জ্যাক মা’র শিক্ষা গ্রহণই ছিল তার সামনে এগুনোর একমাত্র উপায়।

হাইস্কুল শেষ করে কলেজে ভর্তির জন্য তিনি পর পর দুইবার পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেননি।

শেষপর্যন্ত তিনি হাংঝৌ টিচার্স ইন্সটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন।

সেখান থেকে ১৯৮৮ স্নাতক পাশ করার পর চাকরির খোঁজে নেমেছিলেন জ্যাক মা।

কিন্তু ৩০টি প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করে তিনি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন।

যে প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে চাকরি দেয়নি, তার মধ্যে কেএফসিও রয়েছে।

অবশেষে স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন।

৩৩ বছর বয়সে তিনি প্রথম কম্পিউটার ব্যবহার করেন।

তিনি অনলাইনে প্রথম যে শব্দটি লিখে সার্চ দিয়েছিলেন, তা ছিলো ‘বিয়ার’।

কিন্তু সেই সার্চের ফলাফলে চীনা কোনো বিয়ারের নাম ছিল না। সেটি তাকে অবাক করে দেয়।

তখন তিনি চীনের জন্য ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন।

এর আগে কম্পিউটার সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না।

২) তিনি এখন অনেক ধনী
তিনি তার দেশ চীনে ধনীদের তালিকায় তৃতীয় স্থান দখল করে রেখেছেন।

ফোর্বস বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেই তালিকায় তিনি ২০তম স্থানে রয়েছেন।

তিনি ৪০ বিলিয়ন ডলারের ব্যক্তিগত সম্পদের অধিকারি।

আলিবাবার বর্তমান বাজার মূল্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের বেশি।

প্রতিষ্ঠানটিতে জ্যাক মা’র ৯ শতাংশ শেয়ার আছে।

২০১৪ সালে আলিবাবা শেয়ার বাজারে যাত্রা শুরু করে।

প্রাথমিক শেয়ার ছাড়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার কোটি ডলার।

৩) তিনি দিতে চান অনেক অনেক...
তিনি দশ বছর আগে আলিবাবার নির্বাহী পদ থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী এগুতে থাকেন।

আলিবাবা যেহেতু দাঁড়িয়ে গেছে, সেকারণে তিনি এখন সময় দিতে জনহিতকর কাজে।

বিশেষ করে শিক্ষাখাতে তার আগ্রহ বেশি।

তিনি যে জ্যাক মা ফাউন্ডেশন করেছেন।

সেই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি এখন চীনের গ্রামপর্যায়ে শিক্ষার জন্য কাজ করবেন।

তিনি কাজ করে যেতে চান ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফরমে মানুষের কল্যাণে।

তার নাম ছিল মা ইউয়ান।কিন্তু তিনি বিখ্যাত হয়েছেন জ্যাক মা নামে।

এই নামের গল্পটাও ভিন্ন ধরণের।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ১৯৭২ সালে হাংঝৌ এলাকা সফর করেছিলেন। তখন থেকে সেটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে।

সে সময় পর্যটকরা ঐ এলাকায় ভিড় করতো।

কিশোর বয়সে জ্যাক মা শহরের বড় হোটেলটিতে গিয়ে পর্যটকদের শহর ঘুরে দেখানোর প্রস্তাব দিতেন।

আর বিনিময়ে সেই কিশোর ইংরেজি শিখতো।

সেই কিশোর বয়সেই একজন পর্যটক তার নাম জ্যাক।

তখন থেকেই তিনি মা ইউয়ানের পরিবর্তে জ্যাক মা নামে পরিচিত হতে চান।

সেই নামেই তিনি তার কর্ম দিয়ে বিখ্যাত হয়ে যান।

৪) ট্রাম্প জ্যাক মাকে পছন্দ করেন বলেই মনে হয়

গত বছরের জানুয়ারিতে জ্যাক মা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করেছিলেন।

সেই বৈঠকের পর মি. ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘জ্যাক মা পৃথিবীতে বিশাল বিশাল উদ্যোক্তা’।

তখন জ্যাক মাও ট্রাম্পের অনেক প্রশংসা করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো বাণিজ্য যুদ্ধ হওয়ার কথা নয়।

৫) জ্যাক মা নিজেকে আলোচনায় রাখতে পছন্দ করেন
আলিবাবা চালাতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তাতে সফলও হয়েছেন।

প্রতিবছরই এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বেশ ঘটা করে পালন করা হয়।

তিনি নিজেও সেসব অনুষ্ঠানে পুরোদস্তর বিনোদনদাতা হিসেবে পারফরমেন্স করে আলোচনার সৃষ্টি করেন।

আলিবাবার ২০ হাজার কর্মীর সামনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে তিনি পারফরমেন্স করার জন্য পাঙ্ক রকারের মতো সাজ নিয়েছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement