মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, দুই বছর সময়ের মধ্যে আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি একটি পরামর্শ ছিল, কিন্তু আমরা বিষয়টি চূড়ান্ত করিনি। প্রয়োজনে এটি আরো বিস্তৃত হতে পারে। দায়িত্ব হস্তান্তর আগেও হতে পারে, এমনকি পরেও হতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত মালয়েশিয়ার দৈনিক সিনার হারিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মাহাথির বলেন, প্রথম দুই বছর আমার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের বিষয়টি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তা লিখিত কোনো বিষয় ছিল না। আনোয়ারকে উত্তরাধিকারী বানাতে খুব দ্রুতই আমি অবসরে যাওয়ার আশা করছি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে দেশের সম্পদ ফিরিয়ে আনা এবং আমাদের অর্থনীতিকে আরো টেকসই করতে প্রদক্ষেপ নেয়া।’
মাহাথির বলেন, ‘বর্তমানে আমরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি তা অতি অল্প সময়ের মধ্যে অতিক্রম করতে চাই। যদি আমি সফল হই, তবে অর্থ কোনো সমস্যা হবে না। মূল বিষয়টি হচ্ছে আমাদের কাজের ফলাফল।’
মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য পাকাতান হারাপান আনোয়ার ইব্রাহিমকে বাছাই করেছিল। গত ১৬ মে আনোয়ার পূর্ণ রাজকীয় ক্ষমা লাভ করেন।
উভয় নেতার মধ্যে অতীতের বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের কারণে ড. মাহাথির আনোয়ারের পক্ষে কাজ করবেন কিনা তা নিয়ে অনেকের কাছে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল।
আনোয়ার ছিলেন ড. মাহাথিরের সহযোদ্ধা এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয় এবং সমকামিতা ও দুর্নীতির দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
সাক্ষাত্কারে ড. মাহাথির আনোয়ারের কারারুদ্ধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করেন।
মাহাথির বলেন, ‘আনোয়ারের মামলাটি আমার কাজ ছিল না। পুলিশ বললো, ওহ, একজন উপ-প্রধানমন্ত্রী এমন হতে পারেন না। তিনি যা করেছেন, তা আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। আমরা যদি আইনের শাসন অনুসরণ করতে চাই, তবে আইনকে অবশ্যই তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।’
মাহাথির ও আনোয়ারের মধ্যে কোনো বিবাদ নেই: আজিজাহ
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ ও পিকেআর পার্টির নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যে সম্পর্কের চিড় ধরেছে বলে যে জল্পনা চলছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন আনোয়ারের স্ত্রী ড. ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল।
এই দুই মিত্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে বলে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘স্ট্রেইট টাইমস’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়।
এ বিষয়ে উপ-প্রধানমন্ত্রী আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল বলেন, তাদের উভয়ের মধ্যেই সবকিছু ভালভাবেই চলছে।
শনিবার সন্ধ্যায় কুয়ালালামপুরে একটি ইফতার অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের আজিজাহ বলেন, ‘তাদের মধ্যে কোনো ভুল বুঝাবুঝি নেই। এখানে কোনো বিবাদ আছে বলে আমি মনে করি না। আমি আগেই বলেছি, আমরা একই শিবিরে রয়েছি।’
সিঙ্গাপুরের ওই দৈনিকটির রিপোর্টে বলা হয়, পিকেআর পার্টির উপ-প্রধান আজমিন আলীকে অর্থনীতি বিষয় মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি দলের কার্যনির্বাহী নেতা আনোয়ারের সমর্থকদের আতঙ্কিত করেছে।
অজ্ঞাত একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিকটি জানায়, মন্ত্রিপরিষদে আজমিনের অবস্থানকে মাহাথির শক্তি খেলার হিসাবে দেখছে পিকেআর পার্টি। পাকতান হারপানে নিজের আধিপত্য দৃঢ় করার পাশাপাশি পিকেআর পার্টিতে আজমিনের অবস্থান শক্তিশালী করতেই মাহাথির এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে বলা হয়।
বিশিষ্ঠ ব্যক্তিদের কাউন্সিলের মুখপাত্র হিসেবে সাংবাদিক কাদির জেসিনের পদত্যাগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে আজিজ বলেন, বাক স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও কথা বলার ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই সংবেদনশীল থাকা উচিত।
পিকেআর পার্টির প্রধান বলেন, ‘আমি মনে করি কেউ কেউ কাদিরে মন্তব্যে সংবেদনশীলতা পেতে পারেন। যাইহোক, আমাদের সবারই বাক স্বাধীনতা আছে। তা সত্ত্বেও, আপনাকে অন্যদের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে।’
এই ইফতার অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার অতিথির মাঝে একটি শিশুকে কোলে নিয়ে বসে থাকা একজন সিরীয় শরণার্থী মাকে দেখতে পান আজিজা। ইফতারের পর ওয়ান আজিজা ওই নারীর খোঁজ-খবর নেন। এসময় তিনি মা ও শিশুকে মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য তার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
আজিজা বলেন, ‘শিশুটি একজন সিরীয় শরণার্থী এবং তার মা আমাকে তাদের দুঃখজনক কাহিনী বলেছে। সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। তিনি তার নিজের এবং বাচ্চার নাগরিকত্বের জন্য অনুরোধ করেন। আমি তাদের এই অনুরোধ বিবেচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে জানাবো।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা