ভোরের হাওয়া চারাগল্প
- জোবায়ের রাজু
- ০৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
জাবেদ ভাই ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আজিমপুরে থাকেন সামিহা ভাবীকে নিয়ে। আজসহ জাবেদ ভাইয়ের বাসায় মোট তিনবার এসেছি। না এসে উপায়ও নেই। এতবড় ঢাকা শহরে যে আমার কোনো আত্মীয় নেই। তাই জাবেদ ভাইয়ের বাসাই আমার একমাত্র ভরসা।
জাবেদ ভাই আমাদের গ্রামের চৌকিদার বাড়ির ছেলে। একসময় অভাবের সাথে যুদ্ধ করে জীবন পার করেছেন। তাদের সেসব অভাবের দিনে আমার বাবাই ছিলেন জাবেদ ভাইদের সাহায্যকারী। ঘরের চাল ডাল থেকে শুরু করে টাকা পয়সা দিয়েও বাবা তাদের সহায়তা করেছেন। একসময় তাদের জীবনের ধারাই পাল্টে গেল। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরবাসী হলেন জাবেদ ভাইয়েরা। মাঝে মাঝে গ্রামে এলে আমাদের সাথে দেখা করতেন। পরম ¯েœহে আমাকে বলতেন, ‘ঢাকায় গেলে বাসায় আসিস অবশ্যই।’ জাবেদ ভাই বাসার ঠিকানা দেন।
সেই ঠিকানা ধরে আমি আজসহ মোট তিনবার জাবেদ ভাইয়ের বাসায় এসেছি। বেড়াতে নয়। চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। একটি রাত এখানে থেকে পরদিন সকালে গ্রামে ফিরে আসি। সামিহা ভাবী অতি আধুনিক। সংসারের তুলনায় রূপচর্চায় তার ঝোঁক বেশি। সারা দিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে প্রসাধনী মাখতে তার আপত্তি নেই। আমি এই বাসায় বারবার আসি কেন, এই নিয়ে সামিহা ভাবীর কোনো মাথাব্যথা আছে কিনা কে জানে!
জাবেদ ভাই শীতের মাঝরাত পর্যন্ত আমার সাথে খোশগল্পে বসে থাকলেন। এই শীতে কোথায় কোথায় দুস্থদের শীতবস্ত্র বিতরণ করবেন, কম্বল না সোয়েটার দেবেন, এসব শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য কত টাকা কালেকশনে রেখেছেন, এসব গল্প করতে করতে রাত ১টায় বিছানায় গেলেন। আমি পাশের রুমে। আজ রাতে এত শীত পড়ছে। মাঝরাতে সামিহা ভাবীর একটি কথা আমার কানে এসেছে। সামিহা ভাবী অভিযোগের সুরে জাবেদ ভাইকে বলছেন, ‘গ্রাম থেকে ওই ঝামেলা যেন আমার বাসায় আর না আসে। ঢাকা শহরে কী হোটেলের অভাব! হোটেলে উঠতে পারে না? যত্তসব গেঁয়ো ভূত।’ জাবেদ ভাই চাপা গলায় বললেন, ‘আস্তে বলো, ও শুনতে পাবে।’
সারা রাত আমার ঘুম হয়নি। সামিহা ভাবীর কথাগুলো রাতভর যন্ত্রণার হাতুড়ি হয়ে আমার বুকের দেয়াল ভেঙেছে কেবল। ইচ্ছে করছে এখনই এই বাসা থেকে বের হয়ে চলে যাই। কিন্তু এই শহরে কার কাছে যাবো! কে আছে আমার!
২.
মুয়াজ্জিনের আজানের সুরে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। ব্যালকনিতে ভোরের আলো এসেছে। পাশের রুমে জাবেদ ভাইয়ের নাক ডাকার বিকট শব্দ। সামিহা ভাবী হয়তো তার পাশে অঘোরে ঘুমাচ্ছেন। না, এই বাসায় আর এক মিনিটও থাকা যাবে না। আর কখনো আসব না এখানে।
শীতের নিস্তব্দ ভোর। পুরো শহর কাঁপছে। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম। ভোরের হাওয়া আমাকে ছুঁয়ে গেল। পিচঢালা পথ ধরে হাঁটছি। আমি এখন কমলাপুর যাবো। তারপর ট্রেনে চেপে সোজা গ্রামে। ওই গ্রামই আমার আপন। এই যান্ত্রিক শহর নয়। এই শহরে আর আসব না। আমার কোনো চাকরির দরকার নেই। চাকরির ইন্টারভিউ দিতে আমার মতো গেঁয়ো ভূত এই শহরে আর ভুলেও আসবে না।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা