প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে সারা দেশের মানুষ। উত্তরবঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। শীত থেকে একটু বাঁচতে আগুন পোহান, আর আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হচ্ছেন অনেকে। এরই মধ্যে দগ্ধ হয়ে মারাও গেছেন কয়েকজন। শিশু ও বৃদ্ধরা কষ্ট পাচ্ছেন বেশি। শহরে বসবাস আমার, ফ্ল্যাট বাড়ির সব দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখি শুধু রান্নাঘরের জানালা ছাড়া। এক বেলা অজু করলে সেই অজুতে দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। দুই দিন পর অনেকটা বাধ্য হয়ে গোসল সারি পায়ের জ্বালাপোড়া রোগ থেকে বাঁচতে। পারতপক্ষে ঘর থেকে বের হই না। পায়ে মোজা জুতা, মাথায় হেজাব ও ফুলহাতা পোশাক তার উপরে ওম বেশি গরম কাপড়। নাকসহ মুখের যে অংশ বাইরে থাকে বাসা থেকে বের হলে মনে হয় শিশির পড়ে, আর নাকটা ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে সাপের শরীরের মতো। হাতমোজা না পরলেও গরম পোশাকের পকেটে বা শালের ভেতরেই থাকে হাত দুটো। উহ! এই শীত সহ্য করার মতো নয়।
হুডি পরা ছবি ফেসবুকে দিয়ে লিখি, ‘শীত থেকে বাঁচার এই উপায়’ বন্ধু রেজাউল পোস্ট পড়ে কমেন্ট লিখে, ‘কত্ত কথা শহরের বন্ধ ঘরে থেকে’। কমেন্টে লিখেই ইনবক্সে নক করেন, ‘এক বস্তা গরম কাপড় পাঠিয়ে দেও, গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিই।’ কমেন্ট ও ইনবক্সে রেজাউলের এমন কথায় আমার ভেতরটাকে জাগিয়ে তোলে, সত্যিই তো কত্ত আরামে থেকে শীতকে ভয় পাচ্ছি। অথচ গ্রামের অসহায় মানুষগুলো...
যত ব্যস্তই থাকি বেলা ২টা, সন্ধ্যা ৭টার সংবাদ দেখতে বসি টিভির সামনে। মধ্য বয়স্ক থেকেও বেশি বয়সী লোক রিকশা চালাচ্ছেন, নিউজে দেখাচ্ছে তিনি বলছেন, ‘গরম কাপড় নেই, এই শীতেও পেটের দায়ে রিকশা চালাই’। উহ! কি কষ্ট খেটে খাওয়া মানুষের। উঠে গিয়েই নিজের রুমে চুপ হয়ে বসি, ভাবতে থাকি। কিছুই কি করার নেই। মনের ভেতরটা যতটা মুক্ত আমার চারপাশটা অত মুক্ত নয়। গত বছর শীতের সময় দেখেছি তেজগাঁও কলেজের সামনে ৩০-৪০-৫০ টাকা ধরে গরম কাপড় বিক্রি করতে। খুব খারাপ নয়, পরার মতো। যারা একটা গরম কাপড় পায় না পরতে তারা একটু হলেও ওম পেতে পারে এসব গরম কাপড় থেকে।
সন্ধ্যার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যাই তেজগাঁও কলেজের সামনে। দিনের বেলায় হকারদের খুব একটা বসতে দেয়া হয় না এখানে আপাতত। তবে সন্ধ্যার পর পাল্টে যায় এখানকার পরিবেশ। এদিক-ওদিক ঘুরলাম কিন্তু আমার বাজেটের গরম কাপড় পেলাম না। যেগুলো আছে কিনতে পারি কিন্তু পরিমাণে কম কিনতে পারব। ফিরে আসি বাসায়। পরের দিন রাত ৮টার পর মেয়েকে নিয়ে যাই। খুঁজতে খুঁজতে কলেজের ঠিক সামনেই পাই একটা দোকান, যেখানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৫০ টাকায়। মা-মেয়ে বাছাই করে চল্লিশ পিস গরম কাপড় কিনি। রিকশার পথ নেই বাসায় আসার। দোকানের একটা ছেলেকে বলাতে সে দিয়ে যায় অর্ধেক পথ। ওকে কিছু বখশিশ দিয়ে বাকি পথ মেয়েই নিয়ে আসে। খুব আনন্দ হচ্ছে আমার গরম কাপড়গুলো কিনতে পেরে। সুন্দর করে প্যাকেট করি। বাসা থেকে সুন্দরবন কুরিয়ার দূরে তার ওপর রিকশা যাবে না। দারোয়ানের সহযোগিতায় প্যাকেটটা নেয়ার ব্যবস্থা করি। একদিন পরে পৌঁছে যাই দেশের উত্তরবঙ্গে।
গরম কাপড়গুলোর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিই, ‘যদি একটু ওম পৌঁছানো যায় ওদের জন্য’। সাধুবাদ জানায় অনেকে, কেউ কেউ গরম কাপড় দিতে চায় আমার কাছে। জানি না কেন জানি আমার আশপাশের বড়লোকদের আমি এড়িয়ে চলি। আনন্দ বেদনার সঙ্গী হয় অন্যরা। পড়শি এক ভাবীর সাথে এই নিয়ে কথা বলতেই তিনিও পাশে থাকবেন জানালেন। পরিচিত এক গরম কাপড় ব্যবসায়ী জানালেন, তার কাছে কিছু কাপড় আছে, চাইলে আমি আনতে পারি। এমন কথা শুনে ভাবীকে আনতে বলি। তিনি ৩০-৩৫ পিস গরম কাপড় এনে দিলেন। সেগুলো রেডি করে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। এরই মধ্যে দু’তিনজনে গরম কাপড় পাঠাবেন বলেছেন। ভালো লাগছে অন্যদের এই সহযোগিতা।
প্রতি বছর বিভিন্ন সংগঠন অসহায়দের মধ্যে গরম কাপড় বিলি করেন। চেয়েছি নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী তাদের সাথে থাকার। এবার সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে শুরু করলাম অসহায়দের একটু ওম দেয়ার। একবার টিভির সংবাদে শুনেছি আমাদের দেশে যত বড়লোকেরা আছে তারা যদি সত্যিকারের নিয়ম মেনে জাকাত আদায় করেন তাহলে আমাদের দেশে কোনো গরিব লোক আর গরিব থাকবে না। আমরা সবাই নিজের জায়গায় থেকে নিজের সাধ্যমতো অন্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলে কিছু হলেও ওদের দুঃখ-দুর্দশা দূর হবে। এই প্রচণ্ড শীতে একটু হলেও ওম পাবে। ধন্যবাদ জানাই বন্ধু রেজাউলকে, সে এভাবে না বললে হয়তো আমার ভেতরের চেষ্টাটা ঘুমন্তই থেকে যেত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা