০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কান পেতে শুনি...

-

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের ধ্বংসযজ্ঞের কাহিনী সারা বিশে^র অজানা নয়। স্বাধীনতার পরও তাদের বিভিন্ন কুকীর্তির প্রমাণ বেরিয়ে আসে নির্মম ও নৃশংস গণহত্যার কথা। স্বাধীনতার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু গণতহ্যার চিহ্ন তথা বধ্যভূমির খোঁজ পাওয়া যায়। ঢাকা তো বটেই, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বধ্যভূমির একটি হলো মিরপুরের ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি ১৯৭১’।
বধ্যভূমির প্রবেশপথের ফটকের গায়ে লেখাÑ ‘কান পেতে শুনি, কী বলতে চাইছে মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি’। এর আগেও বিভিন্ন বধ্যভূমি ঘুরতে গেলেও এবার যেন কেমন কেমন লাগছে! বধ্যভূমির ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রথমে নজরে আসে একটি মাটির স্মারক। ‘শূন্য হৃদয়’ নামের এই স্মারকটির স্থপতি কবি রবিউল হুসাইন। এর চারপাশ ঘুরে জানা যায় সারা দেশে বিভাগ অনুযায়ী ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৪৭৭টি বধ্যভূমির কথা। এ ছাড়া রয়েছে একটি ফলকচিত্র। গণহত্যার এই প্রতীকী দৃশ্যের শিরোনাম ‘জীবন অবিনশ^র’। এর পাশে রয়েছে একটি ঘর, যেটি সংগ্রহশালা নামে পরিচিত। এটির প্রবেশপথে রয়েছে একটি ঘণ্টা, যেটি বাজিয়ে প্রবেশ করতে হয়। প্রবেশ করে জানা গেল মিরপুরে শহীদদের নামের তালিকা। তালিকা দেখেই আমি চারপাশের স্মৃতিচিহ্নের দিকে তাকাই। কত নির্যাতনের চিহ্ন বহন করে চলেছে এই বধ্যভূমির মাটি। জল্লাদখানা স্মৃতিপীঠের পূর্ব দিকে রয়েছে ‘স্মৃতি টাওয়ার’। এই স্মৃতি টাওয়ার কত স্মৃতি বহন করে চলেছে কে জানে!
দুপুর গড়িয়ে বিকেলের কোলে সূর্য হেলে পড়েছে। স্মৃতি টাওয়ারের নিচে বসে আছি। দেখলাম, তিন সদস্যের একটি ছোট্ট পরিবার এসেছে বধ্যভূমি দেখতে। দেখে মনে হলো, এই বধ্যভূমি তাদের অনেক চেনাজানা! বধ্যভূমির প্রতিটি অন্দর-বন্দর যেন তাদের স্মৃতিতে গাঁথা! তিন সদস্যের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য অর্থাৎ পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশুটির আচরণ আমিসহ অন্যদের বেশ নজরে পড়ল। বধ্যভূমি থেকে বাবা-মায়ের সাথে বের হওয়ার সময় ছোট্ট শিশুটি সামনে যা পাচ্ছে বিশেষ করে ছোট ছোট গাছ, বড় গাছ থেকে নুইয়ে পড়া লতাপাতা আঁকড়ে ধরছে। শিশুটি ধরছে তো ধরেছই, বেশ জোরেশোরে ধরে রাখছে এবং মা-বাবাকে এখান থেকে না যাওয়ার জন্য কান্নামাটি করছে। বিষয়টি কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম! শিশুটি বলছে, ‘আমি নানার কাছে থাকব, নানার কাছে যাবো।’ শিশুটির মা-বাবা যেন শিশুটির এই আবদারের কাছে অসহায়! শিশুটির বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, এই বধ্যভূমিতে তাদের পরিবারের দূরসম্পর্কের এক সদস্য শহীদ হয়েছেন। তারা প্রায়ই শিশুটিকে নিয়ে এই বধ্যভূমিতে আসেন। কিন্তু ফিরে যাওয়ার সময় শিশুটি যেন কান পেতে অনেক কথা শুনে যায়...।


আরো সংবাদ



premium cement