২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীবনের বাম পাশটা : চারাগল্প

-

গাজী মুগনিউল হুদা, নামের মধ্যে ফুটে আছে আভিজাত্যের ছাপ। জমিদার বাবা বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে তার নাম রাখার আয়োজন করেছিলেন। যদিও শিল্পপতি, তবু গাজী মুগনিউল হুদা তার বাবার পরিচয় একজন জমিদার হিসেবে উপস্থাপন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। শিল্পপতিতে তার ঘোর আপত্তি আছে। কী তা? এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
তার বাবা তার নামে কী পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তি রেখে গেছেন তার হিসাব নেই। ব্যস্ততা অথবা এসব নিয়ে ভাবতে তার একদমই ইচ্ছে করে না। জীবনের প্রতি অনীহা এসেছে কী? আসতেও তো পারে! তবু তিনি অটল। এই তো সে দিনও পত্রিকায় তার কবিতা এসেছে। এক সময় অন্য কিছু থাকলেও এখন তার জীবনে কবিতাই একমাত্র আনন্দের উৎস।
বরান্দায় বসে আকাশ দেখছিলেন আর এসব ভাবছিলেন গাজী মুগনিউল হুদা। একা হলেই জীবনের হিসাব মেলাতে মেলাতে সময় কাটান। বিধবা হয়ে যাওয়া একমাত্র মেয়ের দুটো ছেলে। ক্লাস থ্রি ও ফোরে পড়ে দু’জন। পাশের রুম থেকে স্ত্রী হাঁক ছাড়লেনÑ সারা দিন এভাবে উদাসীন হয়ে বসে না থেকে নাতি দুটোকে অঙ্ক-টঙ্ক দেখালেও তো পারো। আমার হয়েছে যত জ্বালা। একজন পঙ্গু হয়ে ঘরবন্দী। একমাত্র মেয়েটাও ঘাড়ে চেপে বসেছে। শত অনুরোধ সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিয়ের জন্য মন গলাতে পারছি না।
গাজী মুগনিউল হুদা চুপ করে থাকেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে মুখ আটকে যায় তার। কত না ভাবনা এসে কিলবিল করে মাথায়। আড্ডা, সোসাইটি আর চাকরি সূত্রে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সময়ে স্ত্রীর ঘোরতর অভিযোগÑ বাইরে সময় কাটাবে তো বিয়ে করেছিলে কেন? আর এখন দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করে ঘরকুনো প্রাণীর মতো সেই স্ত্রীর দু’চোখের বিষ হয়ে গেলেন তিনি।
স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে এলেন। রিকশায় চড়ে লাইব্রেরির দিকে যাবেন বলে স্থির করলেন।
কিশোরগঞ্জ


আরো সংবাদ



premium cement