এজিয়ান সাগরের উপকূলে ডুবে যাওয়া অভিবাসী বহনকারী নৌকার এক মুমূর্ষু শিশুকে উদ্ধারের সময় তুরস্কের পুলিশ কর্মকর্তা হারুন কিলিসওগলুর কান্নার দৃশ্য অনলাইনে ভাইরাল হয়ে গেছে। নিষ্পাপ শিশুটির প্রতি পুলিশ সদস্যসের এই মমতা ও আবেগ ছুয়ে গেছে বিশ্বের কোটি কোটি অনলাইন ব্যবহারকারীকে।
মঙ্গলবার এজিয়ান সাগরে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবির খবর শুনে সাথে সাথেই হারুন কিলিসওগলু হাজির হন ঘটনাস্থলে। মুমূর্ষু শিশুটিকে কোলে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে উঠানো, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সবই নিজহাতে করেন কিলিসওগলু। কিন্তু এতকিছুর পরও যখন চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন, তখন আর অশ্রু আটকে রাখতে পারেননি তিনি।
হাসপাতাল থেকে শিশুটির মৃত্যুর খবর শুনে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন হারুন।
গত সোমবার ভোরে তুরস্কের বোডরাম শহরের কাছে অভিবাসী বহনকারী নৌকাটি উল্টে যায়। ডুবে যাওয়া নৌযানের ৩৪ অভিবাসীর মধ্যে কমপক্ষে দু’টি শিশুর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে তুর্কি উপকূল রক্ষীরা। তারা জানায়, এলা নামের ওই নৌকাটি স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৪৭ মিনিটে ডুবে যায়। একটি ফোন কল পেয়ে খানিক পরে সেখানে উপস্থিত হন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন কিলিসওগলু। তিনি ৭ বছরের একটি মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে ১০০ মিটার দূরে রাখা অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ওই মেয়েটিকে কার্ডিয়াক ম্যাসেজ দেয়া হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আনাদোলু এজেন্সিকে হারুন বলেন, যখন চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, ওই শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বাঁচানো যেতে পারে, তখন আমার হৃদয়টি আশায় ভরে গিয়েছিল। এ কথাটি শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম। আমি কামনা করেছিলাম শিশুটি বেঁচে থাকুক, পরের দিন আমি যেন তার হাত ধরতে পারি।
আমি যখন তাকে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন আমার মনে ওই অনুভূতিই বিরাজ করছিল যা একজন স্নেহময় বাবার হয়ে থাকে। আমার নিজেরও দু’টি সন্তান রয়েছে। প্রথমে আমি আমার নিজের সন্তানের কথা চিন্তা করলাম। এরপর আমি ভাবলাম করলাম ওইসব শিশু সম্পর্কে, যারা আমার চারপাশে রয়েছে। আমি তখন কেবল ওই মেয়েটিকে কিভাবে বাঁচানো যায় সে কথাই ভাবছিলাম।
হারুনের স্ত্রী এবং কলিগ গোনুল কিলিসওগলু বলেন, আমি আমার স্বামীকে নিয়ে গর্ব করি। আমাদের সবারই সন্তান রয়েছে। সুতরাং এসব শিশুর ধর্ম, ভাষা ও জাতি কোনোটি, এসব আমাদের কাছে কোনো ব্যাপার নয়, যখন দরকার, তখনই তাদের সাহায্য করাই আমাদের দায়িত্ব। যেসব অভিবাসী ইউরোপে ঢুকতে চায় তাদের কাছে তুরস্ক একটি প্রধান রুট। বিশেষ করে ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই রুট ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
লিবিয়াসহ আফ্রিকার অনেক দেশ থেকে নৌকা যোগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে। এসময় তাদের তুর্কি উপকূল দিয়ে যেতে হয়। তুর্কি উপকূলে গত কয়েক বছরে নৌকা ডুবিতে প্রাণ হারিয়েছে কয়েক হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী। ভূমধ্যসাগরের উত্তাল ঢেউ কেড়ে নিয়েছে তাদের জীবন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা