০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কাশ্মিরের ভেতর থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করছে ভারত!

২০১৯ সালে শ্রীনগরে কারফিউ চলাকালীন সেনা টহল। - ছবি : বিবিসি

ভারতশাসিত কাশ্মিরের সীমান্ত এলাকা ছাড়া বাকি সব জায়গা থেকে সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি সরিয়ে নেয়ার একটি প্রস্তাব ভারত সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ রিপোর্ট করেছে, এই প্রস্তাব রূপায়নের সিদ্ধান্ত ‘প্রায় চূড়ান্ত’ হয়ে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্তরেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তারা জানাচ্ছে।

ভারতীয় সেনা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা জম্মু ও কাশ্মির পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। আবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর অস্বীকার করেও কোনো বিবৃতি আসেনি।

এই মুহূর্তে ভারতশাসিত কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার সদস্য রয়েছে, যার মধ্যে ৮০ হাজারের মতো সেনা পাকিস্তানের সাথে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মোতায়েন।

বাকি প্রায় ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছেন জম্মু ও কাশ্মিরের অভ্যন্তরে বা ‘হিন্টারল্যান্ডে’, যারা মূলত কাশ্মির উপত্যকা বা জম্মুতে ‘কাউন্টার ইনসার্জেন্সি’ বা সন্ত্রাসবাদ দমনের কাজে নিয়োজিত।

সরকারের পরিকল্পনা হলো, এই ৫০ হাজার সেনাকেই ধাপে ধাপে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।

তার জায়গায় তুলনায় অনেক কম সংখ্যায় আনা হবে আধাসামরিক বাহিনী বা সিআরপিএফকে, যারা সন্ত্রাস দমন ও সার্বিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা করবে।

অনন্তনাগ বা কুলগামের মতো উপত্যকার যে জেলাগুলোতে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত, পর্যায়ক্রমিক এই প্রত্যাহারের প্রথম ধাপে সেসব এলাকা থেকেই সেনাদের সরিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে।

এরপর ধীরে ধীরে পুরো জম্মু ও কাশ্মিরের ভেতর থেকেই (অবশ্যই সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা ছাড়া) সেনাদের সরিয়ে আনা হবে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর জম্মু ও কাশ্মিরে সার্বিক সহিংসতার মাত্রা অনেকটা কমেছে বলেই এই সেনা প্রত্যাহারের কথা ভাবা হচ্ছে।

সরকার দাবি করছে, গত সাড়ে তিন বছরে জম্মু ও কাশ্মিরে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা তার আগের সাড়ে তিন বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বা অর্ধেক কমেছে।

কাশ্মিরে বিক্ষুব্ধ জনতা আগে যে কথায় কথায় পাথরে ছুড়ত, গত কয়েক বছরে সেটাও প্রায় হয়নি বললেই চলে।

ওই সূত্রটির কথায়, ‘এই যে কাশ্মিরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি অনেকটাই ফিরেছে বলে আমরা মনে করছি, সেখানে এই ব্যাপক সেনা উপস্থিতি তার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ নয় বলেই ওই সেনা সদস্যদের সরিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে।’

ভারতের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ইতোমধ্যেই এই প্রস্তাবের নানা দিক খতিয়ে দেখে তাতে একরকম সিলমোহর দিয়ে দিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

তবে যেহেতু এটি শেষ পর্যন্ত একটি ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’, তাই নরেন্দ্র মোদি সরকার সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্তরেই এই সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেই সরকারি সূত্রে আভাস দেয়া হচ্ছে।

একইসাথে অবশ্য ভারত সরকার এটাও উপলব্ধি করছে, এই মুহূর্তে রাতারাতি সব সেনা সদস্যকে সরিয়ে নেয়া হলে জম্মু ও কাশ্মির পুলিশ তাদের জায়গা নেয়ার জন্য ও সব দায়িত্ব পালন করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।

সে কারণেই জম্মু ও কাশ্মিরে সেনাবাহিনীর জায়গায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) আধা-সেনাদের নিয়ে আসার কথাও ভাবা হয়েছে।

কাশ্মিরে ন্যাশনাল কনফারেন্স বা পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের মতো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বহুদিন ধরেই উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে।

ফলে এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তাদের সেই দাবি হয়তো পূর্ণ হবে, কিন্তু সামরিক বাহিনীর জায়গায় আধা-সেনারা এলে এই দলগুলো তা কতটা স্বাগত জানাবে তা বলা মুশকিল।

এই সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাবের পেছনে ভারতের আরেকটি ভিন্ন সামরিক উদ্দেশ্যও আছে বলে দেশের একদল নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করছেন।

প্রতিরক্ষা গবেষক প্রভিন সাহনি ও গাজালা ওয়াহাব তাদের ‘ড্রাগন অন আওয়ার ডোরস্টেপ’ বইতে লিখেছেন, কিভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশ যুদ্ধবিদ্যা নয় – বরং ‘কাউন্টার ইনসার্জেন্সি’কেই তাদের পেশাগত উন্নতির সোপান করে তুলেছেন।

এই সেনা কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের প্রায় পুরোটাই কেটেছে কাশ্মিরে এই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করে, এমনকি অবসরের পরও তারা এই খাতের বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিভিন্ন সেমিনার সার্কিটে বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন বলে ওই লেখকরা জানাচ্ছেন।

কিন্তু কাউন্টার ইনসার্জেন্সি যেহেতু কোনো সেনাবাহিনীর প্রধান কাজ হতে পারে না, তাই কাশ্মির থেকে ধাপে ধাপে সেনাদের সরিয়ে নিয়ে এসে ভারতের সামরিক বাহিনীর এই অংশটাকে তাদের ‘কোর বিজনেসে’ ফিরিয়ে আনাটাও সরকারের একটা লক্ষ্য বলে তারা মনে করছেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement