করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকানোর চেষ্টায় ভারত কার্যত গোটা দেশকে অবরুদ্ধ করে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইউরোপ বা যুক্তরাজ্য থেকে ভারতীয় নাগরিকদেরও এখন দেশে ফেরা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, এমনকী দেশের ভেতরেও অনেকগুলো রাজ্য ভারতের অন্য প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের সেখানে ঢুকতে দিচ্ছে না।
ভারতে মঙ্গলবার করোনাভাইরাস সংক্রমণে তৃতীয় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, মোট আক্রান্তের সংখ্যাও সোয়া শ’ ছাড়িয়ে গেছে।
তাজমহলসহ বিভিন্ন পর্যটক আকর্ষণ, বহু টাইগার সাফারিও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ভারতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এখন মহারাষ্ট্রে, সেখানে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সন্দেহভাজন যাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে তাদের বাঁ হাতে স্ট্যাম্প মেরে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হবে।
করোনাভাইরাস ঠেকানোর মরিয়া চেষ্টায় ভারত বিদেশি নাগরিকদের জন্য দেশের সীমান্ত কার্যত সিল করে দিয়েছিল গত সপ্তাহেই।
কিন্তু নতুন নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন বা তুরস্ক থেকে কোনো ভারতীয় নাগরিককে নিয়েও কোনো বিমান ভারতে আসতে পারবে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লাভ আগরওয়াল জানিয়েছেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে দুসপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।’
‘আর মালয়েশিয়া, ফিলিপিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো, তুরস্ক ও ব্রিটেন থেকে কোনো যাত্রীই এদেশে ঢুকতে পারবেন না - যা বলবৎ হবে ১৮ মার্চ থেকে।’
ভ্রমণ বিধিনিষেধে এই কড়াকড়ি যেহেতু ভারতীয়দের জন্যও প্রযোজ্য হবে - তাই এই মুহূর্তে ইউরোপে ও ব্রিটেনে বেড়াতে বা কাজে যাওয়া হাজার হাজার মানুষ এর ফলে মহাবিপদে পড়েছেন।
দেশের ভেতরেও বাতিল করা হয়েছে বহু ট্রেন পরিষেবা, অসংখ্য ফ্লাইট। সিকিম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ বহিরাগতদের ঢুকতেই দিচ্ছে না।
দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটক আকর্ষণ তাজমহল।
ট্যুরিস্ট গাইড তামসিল পারভেজ বলছিলেন, ‘করোনাভাইরাস আতঙ্কে গত কদিন ধরেই তাজমহল খাঁ খাঁ করছে, কেউ আসছেই না। অথচ এটা পিক ট্যুরিস্ট সিজন - কিন্তু এবার কোনো পর্যটকেরই দেখা নেই!’
একইভাবে দেশ জুড়ে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্মারক কিংবা তাডোবা বা কানহার মতো সাফারি পার্কও বন্ধ হয়ে গেছে। সব জায়গাতেই বাতিল হচ্ছে সেমিনার, সভা-সমিতির আয়োজন।
ভুবনেশ্বরে এক নারী আইনজীবী বলছিলেন, ‘করোনাভাইরাস আতঙ্কে আমরা সারা দেশের আইনজীবীদের নিয়ে একটি আলোচনাসভা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি।’
‘তবু যে ভাইরাস সারা পৃথিবীতে এতগুলো প্রাণ কেড়ে নিয়ে এখন ভারতেও আঘাত হেনেছে, তার মোকাবিলায় এই সব অসুবিধা মানুষকে মেনে নিতেই হবে’, বলছিলেন দিল্লিতে একজন তরুণী।
এদিকে, মহারাষ্ট্রে মঙ্গলবার ৬৪ বছর বয়সী একজন পুরুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছেন, ভারতে এটি তৃতীয় মৃত্যুর ঘটনা।
ওই ব্যক্তি দুবাই থেকে গত ৫ মার্চ দেশে ফিরলেও নিজের ভ্রমণ ইতিহাস বিমানবন্দরে জানাননি।
এই ধরনের ঘটনা ঠেকানোর চেষ্টাতেই মহারাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামা সকলের হাতে স্ট্যাম্প মেরে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে।
এর ফলে তারা গৃহবন্দিত্বের শর্ত ভেঙে বাইরে বেরোলেও সহজেই ধরা সম্ভব হবে।
এদিকে, বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী মঙ্গলবার দেশের গোটা পরিস্থিতিকে তুলনা করেছেন আসন্ন এক ‘সুনামি’র সাথে।
‘কোভিড-নাইন্টিন ও অর্থনীতির দুর্দশা আগামী ছ’মাসের মধ্যে ভারতের জন্য অবর্ণনীয় কষ্ট বয়ে আনছে’ বলেও তিনি পূর্বাভাস করেছেন।
এদিকে, ভারতে আরো ব্যাপকভাবে কেন করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না, এই দাবির মুখে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা বেসরকারি ল্যাবগুলোকেও টেস্টিং প্রক্রিয়াতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি