২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ডিজিটাল বই কেন

ডিজিটাল বই কেন - ফাইল ছবি

অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন প্রকাশকদের শুধু কাগজে প্রকাশক হলে চলবে না ডিজিটাল প্রকাশক হতে হবে। তাহলে আমরা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারব। বিদেশেও পৌঁছাতে পারব। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রকাশককে ডিজিটাল হতে হবে। যারা যুগের সাথে বদলাতে পারে না, যুগ তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়। তাই যুগের সাথে বদলাতে অনেকেই কাগজ, বাঁধাই ও ছাপাখানার সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেক দেশে পত্র-পত্রিকাসহ কাগজের বই উঠে যাচ্ছে।
এখন আমার মোট গ্রন্থের সংখ্যা ৪০টির মতো। বই বাড়ছে জ্যামিতিক হারে পাঠক বাড়ছে গাণিতিক হারে। এক প্রকাশক স্থানাভাবে তার প্রকাশিত অনেক বই আমার বাসায় এনে রাখেন। বাসায় বইয়ের তাক, ড্রয়িংরুম, শোফা, চেয়ার, টেবিলসহ সর্বত্র শুধু বই। প্রথমদিকে প্রকাশিত বেশ কিছু বই চলে গেছে দৃষ্টির অন্তরালে। হয়তো চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার পথে।

সন্তান ধারণ থেকে প্রসবকাল পর্যন্ত মা-ই জানে মাতৃত্ব কতটা কষ্টের। বই লেখকের সন্তানের মতো। তাই হারিয়ে যাওয়া বইগুলো সংগ্রহসহ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের কথা ভাবি। তখনই মনে পড়ে ডিজিটাল বইয়ের কথা। ডিজিটাল বই কম্পিউটার, মোবাইল বা অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রে পড়া যায়। আমাদের দৃশ্য জগতের বাইরে রয়েছে এক অদৃশ্য ডিজিটাল জগৎ। যে জগতের আকার-আয়তন বিশাল। সেখানে লক্ষ-কোটি ডিজিটাল বই সংরক্ষণ করলেও নষ্ট হবে না স্থানও দখল করবে না। নেটে বইয়ের নাম লিখে ক্লিক করলেই প্রার্থিত বই সামনে এসে হাজির।

৩২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে প্রথম লিখিত ভাষার উদ্ভব হয়েছিল। চিত্রলিপি সমৃদ্ধ সুমেরীয় সভ্যতার কিশ ট্যাবলেট। ট্যাবলেটের আকারের প্রস্তর খণ্ডের ওপর খোদাইকৃত চিত্র বা রেখাই ছিল এক একটি বই। ৫০০০ বছর আগের ট্যাবলেটের আকারের বইই এখন আমাদের ঘর দখল করে আছে। ক্রমবর্ধমান বইয়ের কোথায় ঠাঁই হবে? ডিজিটাল বই ছাড়া বিকল্প পদ্ধতি নেই। তা ছাড়া হু হু করে বাড়ছে কাগজের দাম। তাই দিন দিন পত্র-পত্রিকাও হয়ে উঠছে অনলাইন (ই-পেপার)।


শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ ইচ্ছে করলেই ডিজিটাল বই পাঠ করতে পারবেন। পাঠ করতে পারবেন প্রায় বিনে পয়সায়।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যেতে নাহি দিব’ কবিতার সারমর্মের মতো প্রত্যেক স্রষ্টার কাছে তার সৃষ্টি মূল্যবান। একজন লেখক কি শুধুই, বিনোদন, নিজকে প্রচার আর অর্থ উপার্জনের জন্য লেখেন? মোটেও তা নয়। ক্ষুদ্র তৃণকে যে কারণে মাতা বসুমতী বক্ষে বেঁধে রাখতে চায় সে কারণে একজন লেখকও তার সৃষ্টির মাধ্যমে তার মতামত প্রকাশ করতে চায়।

আজকের অস্থির বিশ্বে প্রচলিত বইয়ের স্থায়িত্ব কতটা হবে তা নিশ্চিত নয়। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললে প্রথমেই চোখে পড়ে রক্তপাত, অশান্তি আর নানা দুঃসংবাদ। শান্তির বাণী আজ ব্যর্থ পরিহাস। যুদ্ধ উন্মাদনায় রয়েছে পৃথিবী, চলছে চারটি যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধসহ অসংখ্য সঙ্ঘাত।

এসব যুদ্ধের শঙ্কা বন্ধ হয়ে বিশ্বে সহসা শান্তি আসার কোনো সম্ভাবনা কম। বিশ্বখ্যাত এমআইটির নিউরোসায়েন্টিস্ট প্রফেসার স্মিথের ভাষায়, ‘মানুষ যদি আবিষ্কার করতে পারে কেন সে অনন্য, তা হলে হয়তো সে নিজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে না, বরং এখনকার চেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করবে।’

কিন্তু মানুষ কেন অনন্য তা তারা কবে উপলব্ধি বা আবিষ্কার করবে তারও তো গ্যারান্টি নেই। তাই নিজের লেখালেখি এমন একটি মাধ্যমে রূপান্তর করা জরুরি যে রূপটি কখনো ধ্বংস হবে না। সেটিই ডিজিটাল বই। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও ভার্চুয়াল জগতে আপনার বইটি থেকে যাবে। ধ্বংস থেকে বেঁচে যাওয়া ভবিষ্যতের মানুষ একদিন না একদিন খুঁজে বের করবে আপনার লেখা। জানতে পারবে আপনার সময়, আপনার চিন্তা-ভাবনা। সে দিনের সূচনা হয়েছে। আমাদের এখন ডিজিটাল যুগের দিকে যাওয়ার বিকল্প নেই।

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক


আরো সংবাদ



premium cement

সকল