২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আত্মশক্তির বিকাশ ভাবনা

আত্মশক্তির বিকাশ ভাবনা - নয়া দিগন্ত

সেই প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকে এটি উপলব্ধির উপলব্ধিতে আসার অবকাশ মিললেও বর্তমানে এই মুহূর্ত থেকে এটি ভাবার কোনো বিকল্প নেই যে, নিজের ভালো-মন্দ নিজেকে বুঝতে হবে, নিজের ইতিহাস নিজে নির্মাণ, নিজের সম্ভাবনা নিজেকেই লালন, ধারণ ও নিজের সমস্যা নিজেকে নিরসন করতে হলে অর্থাৎ নিজে স্বনির্ভর স্বয়ম্ভর হলেই ভূরাজনীতির ভেল্কিবাজির খপ্পর থেকে নিজের সুরক্ষা মিলবে। চিন্তা-চেতনায়, ভাব-ভাবনায়, নিজের উদ্ভাবন উৎপাদনে টেকসই হতে দেশিক হয়ে নিজে শক্ত সামর্থ্য অর্জন করলে নিজ সৃষ্ট সমস্যায় ঘুরপাক খেতে হয় না, অন্যের ফাঁপর দালালি বা নিজের ব্যাপারে কাউকে নাক গলাতে দেয়ার পথ তৈরি করা লাগে না। আত্মশক্তির বিকাশ ঘটাতে নিজের ওপর নিজের আস্থা তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়। নিজের সমস্যা নিজে চিহ্নিত করে নিজে নিজে তার সমাধানের পথ খুঁজে পেতে চেষ্টা না থাকলে পরনির্ভরতা বাড়বেই। স্বাধীনতা-হীনতায় বাঁচতে চায় কে? আবার সুযোগ পেলে অন্যকে নিজের অধীনে রাখতে চায় না কে? বেশি দামে কেনা স্বাধীনতা কম দামে বিক্রির নজির যে নেই তা তো নয়। স্বাধীনতাহীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না, এটি যেমন ঠিক তেমনি নিজের দুর্বলতায় নিজেকে অন্যের দ্বারা শোষিত হওয়া তথা স্বাধীনতাবঞ্চিত হয়ে পরাধীন হতে চাওয়ার বা বাধ্য হওয়ার মতো আত্মধ্বংসী কৌশলের কাছে মাথা নোয়াতেই হয়। স্বাধীনতার সুরক্ষা ও পরাধীনতার পরাকাষ্ঠা নিয়ে যুগে যুগে অজস্র পথ-পন্থা বেরিয়ে এসেছে, স্বাধীনতা কুক্ষিগত করার এন্তার কৌশলের ভোল পাল্টিয়েছে, কখনো জবরদখলে সামরিক শক্তি প্রয়োগ, কূটনৈতিক কলা-কৌশল, চালাকি ধড়িবাজি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাহিত্য সংস্কৃতি ধ্বংস হতে দেয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরাধীনতার পালাবদল ঘটেছে গোটা বিশ্বে, মনুষ্য সমাজে, সর্বত্র।
স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। কিন্তু এই অধিকার কেউ কাউকে এমনিতে দেয় না কিংবা ছেলের হাতের মোয়ার মতো নয় তা সহজপ্রাপ্যও, তাকে অর্জন করতে হয়, আদায় করে নিতে হয়। আবার অর্জন করার মতো সেই আত্মমর্যাদা রক্ষা করাও কঠিন। কেননা, স্বাধীনতার শত্র“র অভাব নেই। আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের জনগণ শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে, পরাধীনতার নাগপাশ থেকে বেরিয়ে আসার সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে, ইতিহাসের বহু পটপরিবর্তনে চড়াই উতরাই পেরিয়ে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে একাত্তরে পরিপূর্ণভাবে অর্জন করে তাদের আজন্ম লালিত স্বাধীনতার স্বপ্নসাধ। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে অশেষ আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিজয় অর্জন তার যথা বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগের যৌক্তিকতা ভিন্ন অর্থেই পর্যবসিত হতে পারে।

ব্যবসায়-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এ দেশে আগমন ঘটে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ছত্রছায়ায় সাত সমুদ্র তেরো নদী পার থেকে আসা ইংরেজদের। তাদের আগে মগ ও পর্তুগিজরাও অবশ্য এসেছিল এ দেশে। প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনায় এরা পরস্পরের শত্র“ভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। অত্যাচারী মগও পর্তুগিজদের দমনে ব্যর্থ প্রায় সমকালীন শাসকদের সাহায্যে এগিয়ে আসে নৌযুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ইংরেজ বণিক। ক্রমে তারা অনুগ্রহভাজন হয়ে ওঠে সমকালীন বিলাসপ্রিয় উদাসীন শাসকদের আর সেই উদাসীনতার সুযোগেই রাজপ্রাসাদ-প্রান্তরে কূটনৈতিক প্রবেশ লাভ ঘটে ইংরেজদের। প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খাঁকে হাত করে তারা ক্ষমতাচ্যুত করে নবাব সিরাজউদ্দৌলাহকে। পরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে বাংলা বিহার উড়িষ্যার এবং ক্রমে ক্রমে ভারতবর্ষের প্রায় গোটা অঞ্চলের। মীর কাসিম খান, টিপু সুলতান প্রমুখ সমকালীন স্বাধীনচেতা রাজন্যবর্গ স্থানীয়ভাবে তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে চাঙ্গা করেও ব্যর্থ হন। বিদেশ বিভূঁইয়ে এ দেশীয় দোসরদের সাহায্য ও সহানুভূতি পাওয়ার জন্য সম্প্রদায়গত বিভাজন সৃষ্টি করতে আনুকূল্য প্রদর্শনার্থে ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস প্রবর্তন করে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। এই নীতির ফলে এ দেশীয় স্বাধীনতাকামী জনগণের মধ্যে পৃথক পৃথক অঞ্চলে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত হয় এবং ব্রিটিশ শাসকের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে বৃহৎ দু’টি সম্প্রদায়। হিন্দু জমিদাররা ইংরেজদের আনুগত্য পেতে থাকে, পক্ষান্তরে রাজ্য হারিয়ে মনমরা মুসলমান সম্প্র্রদায় (যার অধিকাংশ পরিণত হয় রায়ত কৃষকে) দিন দিন বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যেতে থাকে। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহেও ইংরেজদের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ বেশ কাজ করে, আরো দ্বিধাবিভক্তিতে আচ্ছন্ন হয় উভয় সম্প্রদায়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি লাভার্থে স্যার সৈয়দ আহমদ, নবাব আবদুল লতিফ, সৈয়দ আমির আলী, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী প্রমুখের শিক্ষা ও সমাজসংস্কারবাদী কর্মপ্রচেষ্টার ফলে মুসলমান সম্প্রদায় ধীরে ধীরে আধুনিক শিক্ষার আলোক পেয়ে ক্রমান্বয়ে চাক্ষুষ্মান হতে থাকে। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে হিন্দুদের পরিচালিত ও ভাবাদর্শ নির্মাণকারী এই প্ল্যাটফর্ম স্বসম্প্রদায়ের সত্যই কোনো কল্যাণে আসবে না দেখে ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মুসলিম লীগ’ নামে আরেকটি রাজনৈতিক সংগঠন। বৃহৎ ভারতবর্ষের ব্যাপারে না গিয়ে শুধু এই বাংলাদেশ বিষয়ে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পেছনে যে প্রধান ঘটনা স্থপতি হিসেবে কাজ করেছে তা হলো ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম এমন দ্বিধাবিভক্তির প্রেক্ষাপটে প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব থেকেই ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে পূর্ববাংলার নেতা শেরেবাংলা উপমহাদেশের মুসলমানপ্রধান অঞ্চলসমূহ নিয়ে ‘রাষ্ট্রসমূহ’ গঠনের প্রস্তাব করেন। মুসলমানপ্রধান পূর্ববাংলাবাসী ওই প্রস্তাব মতে একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবিদার।

এতদসত্ত্বেও ১৯৪০ সালের লাহোর অধিবেশনে ‘রাষ্ট্রসমূহ গঠনের প্রস্তাবকে’ উপচিয়ে, বিশ্বাসঘাতকতায়, পূর্ব বঙ্গবাসীদের পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ভারতবর্ষের পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত সহস্রাধিক মাইল ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাথে একীভূত হয় এবং পাকিস্তানের একটি প্রদেশ হিসেবে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এটি যে পূর্ববঙ্গের প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতাপ্রাপ্তি ছিল না; বরং উপনিবেশবাদের হস্তান্তর মাত্র তা পূর্ববঙ্গবাসী ক্রমে ক্রমে উপলব্ধি করতে পারেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়, যখন বোঝা যায় তাদের মাতৃভাষা ও আবহমান সংস্কৃতির ওপর প্রত্যক্ষ আঘাত আসছে। এটি বোঝা গিয়েছিল এর ফলে তাদের আত্মপরিচয় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তারা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং বিভ্রান্তি তাদের কেটে যায়। তারা বুঝতে পারে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষ হয়নি। তারা তাদের সচেতনতার পরিচয় দেয় ১৯৫৪-এর নির্বাচনে, ১৯৬২-এর ছাত্র আন্দোলনে, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে এবং ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে। এত দিনে পশ্চিম পাকিস্তানি সামন্তবাদী চক্রের আসল মুখোশ উন্মোচিত হয়। পূর্বপাকিস্তানকে একসময় তারা ব্যবহার করেছিল ইংরেজ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের স্বার্থে, সেই আন্দোলনের অন্যতম উদগাতা ছিল পূর্বপাকিস্তানিরা। একইভাবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানি বৈষম্যের বিরোধও তেমনি তাদেরকে প্রথমে স্বাধিকার এবং পরে স্বাধীনতার আন্দোলনে উজ্জীবিত করে। একাত্তরের মার্চ মাসে শুরু হয় চূড়ান্ত পর্যায়ের মুক্তিযুদ্ধ। সুদীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর তার বিজয় সুনিশ্চিত হয়। তাই এই বিজয় দিবস ৯ মাসের কিংবা ২৫ বছরের সংগ্রামের বিজয় নয়; পূর্ববঙ্গবাসীর স্বাধীন মনোবৃত্তির, সুদীর্ঘকালের শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষার বিজয়। এটি ছিল ১৯৪০ সালের লাহোর অধিবেশনের ঘোষণা বাস্তবায়ন এবং সুদীর্ঘকালের ‘বিশ্বাসঘাতকতা ও বিভ্রান্তির’ অবসানের পর বিজয়। ক্রমান্বয়ে এটিও স্পষ্ট হচ্ছে যে, একই ধারাবাহিকতায় বিভ্রান্তি জিইয়ে রেখে বিশ্বাসঘাতকতার বিজয় লাভার্থে প্রয়াস প্রচেষ্টা, সঙ্গত কারণে ঘরে-বাইরে বিদ্যমান।

প্রখ্যাত লেখক হুমায়ূন কবীর তার ‘বাংলার কাব্যে’ লিখেছেন, ‘বাংলার পূর্বাঞ্চলের প্রকৃতি ভিন্নধর্মী। পূর্ববাংলার নিসর্গ হৃদয় তাকে ভাবুক করেছে বটে কিন্তু উদাসী করেনি। দিগন্তপ্রসারী প্রান্তরের অভাব সেখানে নেই কিন্তু সে প্রান্তরেও রয়েছে অহরহ বিস্ময়ের চঞ্চললীলা। পদ্মা যমুনা মেঘনার অবিরাম স্রোতধারার নতুন জগতের সৃষ্টি ও পুরাতনের ধ্বংস।’ পূর্ববাংলায় নিসর্গ নন্দনকাননেই শুধু পরিণত করেনি তাদের (বাংলাদেশের জনগণকে) করেছে পরিশ্রমী, সাহসী-শান্ত-সুজন, আত্মবিশ্বাসী, ভাবুক, চিন্তাশীল, আবেগময় ও ঔৎসুক্যপ্রবণ। তাদের রয়েছে নিজস্ব নামে দেশ সৃষ্টির ইতিহাস, ঐতিহ্য, চলন-বলন, শিল্প-সাহিত্য, স্থাপত্য ইত্যাদি। দৈহিক গড়ন-গঠনে আবেগ-অনুভূতিতে, রগে-রক্তে তারা পৃথিবীর অন্যান্য জাতি ও সম্প্রদায় থেকে আলাদা। ভৌগোলিক কারণেও তারা পৃথক ভিন্ন প্রকৃতির। জাতিগত ভাবাদর্শে, রাষ্ট্রীয় আনুগত্য প্রকাশে জাতীয়তাবোধে অন্যান্য রাষ্ট্র ও অঞ্চলে বসবাসকারী স্বধর্মী ও স্বভাষীদের থেকেও তারা স্বতন্ত্র প্রকৃতির। বাংলাদেশের জনগণ শান্তিপ্রিয়। তারা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিজেরাই অর্জন করতে জানে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখায় জনগণের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক সত্যের আত্মপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সচেতনতা জাতিসত্তার মৌলিক পরিচয়ে সমুন্নত রাখার সংগ্রামে এখনো।

স্বাধীনতা লাভে বাঙালির জাতীয় জীবনে যে নবদিগন্তের সূচনা হয় তাতে সীমাহীন শোষণ ও সুদীর্ঘকালের অবজ্ঞায় নিষ্পেষিত ঔপনিবেশিক জীবনযাত্রা থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং নিজেদের নিয়মে চলার, নিজে পায়ে নিজের দাঁড়ানোর, বাঁচার এবং বিকশিত হওয়ার অধিকার পেয়েও, সর্বজনীন অর্থনৈতিক জীবনযাত্রায়, সাংস্কৃতিক সঙ্কীর্ণতায়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়া যেন সুদূর পরাহত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি এখন সময়ের দাবি। নিজেরাই নিজেদের উন্নতি ও অবনতির নিয়ন্তা, সফলতা ও ব্যর্থতার দায়ভার সবারই।

ব্যর্থতার দায়ভারের পাল্লা ভারী হতে পারে নিজের আত্মরক্ষা নিজের শক্তিকে বিকাশে অমনোযোগিতা অপারগতার অবয়বে। জ্ঞান চর্চায়, স্বাস্থ্য সচেতনতায়, নিজের কর্মকুশলতার বিকাশের দ্বারা আত্মশক্তির বিকাশ ঘটানো এখন অন্যতম আরদ্ধ কাজ। সর্বাগ্রে মানসম্মত শিক্ষা, নীতি-নৈতিকতার বলে বলীয়ান হওয়ার মতো জ্ঞান-কাণ্ডজ্ঞানের দ্বারা কর্মোদ্দীপনার চিন্তা-চেতনার চৌহদ্দি না বাড়লে অথর্ব ব্যক্তির ভারে ন্যুব্জ সমাজ স্বাধীনভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবে না। নিজেরা নিজেদের শত্রু হতে থাকলে, অনৈক্যের মাশুল দিতেই বাইরের মদদে বিভাজন বাড়তে দেয়ার অর্থই হলো নিজেদের দুর্বল করা এবং একসময় নিজের সব কিছু তস্করের হাতে তুলে দেয়ার পথ সুগম করে দেয়া।

ভূরাজনীতির ভায়রাভাইদের লক্ষ্য একটিই- দুর্বলকে সবল করার নামে তাকে বিভ্রান্তিতে রাখা, তার ঘরে জায়গা করে নেয়া, আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিপত্তির প্রসার ঘটানো। ব্রিটিশ সরকারের একটি প্রবাদ- ‘চোর তো চুরি করবেই কিন্তু গৃহস্থকে সজাগ থাকতে হবে।’ বাইরের লোকেরা নিজের স্বার্থ দেখবেই-ভেতরের লোকেরা কেন নিজের স্বার্থ দেখবে না? নিজের আত্মরক্ষার কর্মকে শক্তিশালী না করলে অন্যের চতুর্মুখী আক্রমণে টিকে থাকা দায় হয়ে যাবে। ঐকমত্যের ও নিজস্বতায় নিজের শক্তি সঞ্চয় করতে হয়, অনৈক্যের মাশুল দিতে দিতে নিজের বল যাতে ক্ষয় না হয় সেদিকে সজ্ঞান হওয়াই শ্রেয়। সুতরাং শিক্ষার উন্নতির পর দ্বিতীয় কর্মকৌশল হবে নিজেদের মধ্যে শক্তি ধারণ করা, দুর্জনেরে অবশ্যই শায়েস্তায় রেখে আত্মশক্তি বিকাশের প্রতিটি উপায় উপলক্ষকে কাজে লাগানো হবে আবশ্যক। জাতীয় ঐক্য ও সংহতির বর্মই পারবে বাইরের তীব্র (সামরিক, মানসিক, ভাব-ভাবনার বিনাশ সাধন) আক্রমণ ঠেকাতে। প্রতিপক্ষতার পরিবেশ সৃজিত না হলে জাতীয় ঐক্য জ্ঞান, ধ্যান-ধারণারা বলশালী হতে পারবে না-অমনোযোগিতায় আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।
হজরত আলী রা:-এর একটি মহান উক্তি- ‘যখন দেখবে দরিদ্ররা ধৈর্যহারা হয়ে গেছে, ধনীরা কৃপণ হয়ে গেছে, মূর্খরা মঞ্চে বসে আছে, জ্ঞানীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে, শাসকরা মিথ্যা কথা বলছে। তখন বুঝবে একটি দেশ ও সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে।’

লেখক : সাবেক সচিব, এনবিআরের
সাবেক চেয়ারম্যান


আরো সংবাদ



premium cement
দেশ থেকে আইনের শাসন উধাও হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল রুশ অগ্রযাত্রার মধ্যেই ভারী হামলা প্রতিহত করল ইউক্রেন কাতার ছাড়তে হলে হামাসের পরবর্তী গন্তব্য কোথায় বগুড়ায় বসতবাড়িতে পটকা তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণ, আহত ৪ নগরকান্দায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিকাণ্ড মঙ্গলবারও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নাটোরে গণধর্ষণের দায়ে তিন কিশোরকে ১০ বছরের আটকাদেশ ঘাটাইলে সংরক্ষিত বনে দুর্বৃত্তের আগুন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জন্মদিন ও পতাকা অবমাননা মামলার শুনানি ২১ জুলাই ভালুকায় প্রচণ্ড তাপদাহে ২ শিক্ষার্থী অসুস্থ গাজীপুরে অপহরণের পর স্কুলছাত্রকে হত্যার দায়ে সাতজনের যাবজ্জীবন

সকল