২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কেমন রাজনীতি দিতে যাচ্ছি পরের প্রজন্মকে

কেমন রাজনীতি দিতে যাচ্ছি পরের প্রজন্মকে - নয়া দিগন্ত

৭ জানুয়ারি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য বহুল আলোচিত ও সমালোচিত নির্বাচনী যাত্রার প্রাক্কালে আমাদের নির্বাচনী পরিবেশের চিত্র মোটা দাগে কয়েকটি শিরোনামে আত্মসমালোচনা করার দাবি রাখে।

রাজনৈতিক ময়দান : আমাদের রাজনৈতিক ময়দান হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধক্ষেত্র। রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার পরিবর্তে হয়ে উঠেছে পরস্পরের শত্রু! কৌশল বা বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিকৌশলের স্থান দখল করে নিয়েছে ক্ষমতা ও শক্তিমত্তা।

প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য কৌশলের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রকাশ্য ও গুপ্ত হত্যা, গুম, সহিংস আক্রমণ, গুপ্ত হামলা, মামলা, জেল ইত্যাদি সব ধরনের শক্তিজাত কৌশল। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বিরোধী দলের বড় বড় সমাবেশ ঠেকানোর জন্য অঘোষিতভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করে সড়ক, নৌ, রেলপথ অবরোধসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। বিএনপির প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচি অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ একই দিনে পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। তারা ‘শান্তি সমাবেশ’ করেছে নেতাকর্মীদের লাঠি-মারণাস্ত্র হাতে যোগদানের মাধ্যমে। এরপর বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিণতির দিকে ধাবমান সর্বশেষ মহাসমাবেশটি পণ্ড হয়ে যেতে দেখা গেল। যেসব অভিযোগে ২৮ অক্টোবরের সেই সমাবেশ পণ্ড করা হয়েছে সে সম্পর্কে দেশে-বিদেশে অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। ঘটনার পর সরকার, ক্ষমতাসীন দল, আইন আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মতৎপরতায় সমালোচকেরা এখন বলতে শুরু করেছে, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার পরিকল্পিত কৌশল হিসেবেই ২৮ অক্টোবরের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সেই ঘটনার সূত্র ধরেই বিএনপির শীর্ষ নেতারা কারাগারে, অন্যান্য নেতাকর্মী বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের বাড়িতে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা হামলা করে ভাঙচুর ও লুটতরাজ করছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে এই মুখশধারীরা কয়েকজন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে গত দুই মাসে এবং আহত করেছে অনেককেই।

দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িঘর এ ধরনের গুপ্ত হামলার শিকার হয়েছে। এরই মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কাজ পুরোদমে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ সময়ে সংঘটিত বেশ কয়েকটি ঘটনা আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বকেই উন্মোচিত করেছে। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের ‘প্রেতাত্মা’ আমাদের বর্তমান রাজনীতিতে ভর করেছে।

অন্য দলের নেতাকর্মী ভাগিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হয়েছে! ইতোমধ্যে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান শাজাহান ওমর বীর উত্তম এবং একজন উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান দলের নীতি ভঙ্গ করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। যে মামলায় বিএনপির অন্যান্য নেতার জামিন হয়নি সেই একই নাশকতার মামলায় শাজাহান ওমর ২৯ নভেম্বর জামিন পেয়ে ৩০ নভেম্বর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের টিকিট পেয়েছেন। এ ছাড়া আরো প্রায় ৩২ জন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন বলে জানা যায়। এক যুগ ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসেনা ‘কল্যাণ পার্টি’র চেয়ারম্যান জেনারেল ইবরাহিম, বীর প্রতীক দেশবাসীকে অবাক করে দিয়ে একটি ইউটার্ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বিরোধীরা বলে লোভ অথবা ভয়ে এসব ডিগবাজি খাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিএনপি নেতা উকিল আব্দুস সাত্তার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এমপি হয়েছিলেন। স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের এভাবে অন্য দল থেকে নেতাকর্মী ভাগিয়ে নিয়ে নির্বাচন করার প্রক্রিয়া দেশের রাজনীতিতে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য বা ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য নিজ দলেরই নেতাদেরকে স্বতন্ত্র হিসেবে ডামি প্রার্থী হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ১৪ দলের শরিক দলের প্রার্থীদের সাথেও আসন ভাগাভাগির প্রক্রিয়া চলমান, যারা নৌকা প্রতীক নিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাচ্ছেন।

আবার ‘জাতীয় পার্টি’ সব আসনে প্রার্থী দিয়েও আওয়ামী লীগের সাথে আসন ভাগাভাগির জন্য দেনদরবার করছে। তাদের কেউ কেউ বিজয় নিশ্চিত করার জন্য নৌকা মার্কাও চাচ্ছেন। সবমিলে আওয়ামী লীগের একক নিয়ন্ত্রণে নির্বাচনকারী দলগুলো মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি একপক্ষীয় নির্বাচনের আয়োজন চলছে বলে সমালোচকেরা মনে করছে। তাহলে কি আওয়ামী লীগের মতো দলটি কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে যাওয়ার সাহস সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলেছে? আওয়ামী লীগের বাইরের অন্যান্য প্রার্থীও নৌকা প্রতীক নেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ তাদের বিশ্বাস নৌকা প্রতীক পাওয়া মানেই নির্বাচিত হওয়ার নিশ্চিত সুযোগ! কাজেই একটি প্রতীকের বিজয় যেখানে সুনিশ্চিত সেখানে নির্বাচনের কেমন উদাহরণ বা সংস্কৃতি আমরা তৈরি করতে যাচ্ছি?

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি : নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত কোথাও নেই। তারা নির্বাচনে নেই, রাজপথে নেই, বাড়িতে নেই, অফিসে নেই। আছে জেলে বা আদালতে অথবা পালিয়ে। কারণ দৃশ্যমান মামলা, গায়েবি মামলা, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন বা গ্রেফতার বাণিজ্য ইত্যাদিতে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা দিশেহারা। পুলিশ ধরছে অথবা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধরে পুলিশে দিচ্ছে, আবার পুলিশই মামলা রুজু করছে এবং তারাই আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছে। এমনকি চার বছরের শিশু নূর জাহানের মা হাফসা আক্তারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে নূরজাহানের বাবা বিএনপি কর্মীকে বাড়িতে না পেয়ে। হাফসা আক্তারকে গ্রেফতার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় ভাঙচুরের মামলায়। পত্রিকার খবরে দেখা গেছে, গ্রেতফার এক যুবদল নেতার হার্ট অ্যাটাক হলে হাসপাতালে ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। ৭০ বছর বয়সী দুই হাত কাটা ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়েছে নাশকতার মামলায়। এর আগে আমরা দেখেছিলাম গ্রেফতার এক যুবদল নেতা ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরে মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন।

জানা যায়, গত তিন মাসে মোট গ্রেফতার হয়েছে ৩১ হাজার, মামলা হয়েছে ১১৬০টি, আসামি ৭৯ হাজার ৭৭৮ জন (নয়া দিগন্ত, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩)। বিএনপির দাবি, ২৮ অক্টোবরের আগে এবং পরে গ্রেফতার হয়েছে ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী (প্রথম আলো, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩)। বিস্ময়কর হলো, গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার একটি মামলার বাদি পুলিশের এসআই সালাহউদ্দীন আসামি আমিন উদ্দিন মোল্লাহকে গত ২৮ অক্টোবর পুলিশের ওপর বোমা মেরে পালিয়ে যেতে দেখেছেন; যিনি গত দুই বছর ১০ মাস আগে ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন (ডেইলি স্টার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩)! হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (ঐজঝঝ) প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় যে, গত ১১ মাসে ৮০৭টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ৮২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় আট হাজার ১৫০ জন। এ সময় আট হাজার ২৬৩ জন রাজনৈতিক নেতা গ্রেফতার হন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৩৩টি মামলায় ১৩ হাজার ৮০৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫৮ হাজার ১৮৯ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে (প্রথম আলো, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩)। ‘ব্যানারনিউজ’ এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর চারজন মৃত ব্যক্তি এবং ছয়জন প্রবাসী অথবা কারাবন্দীকে নাশকতার মামলায় আসামি করা হয়েছে (আহাম্মদ ফয়েজ, ১৪ নভেম্বর ২০২৩)। জানা যায়, এরই মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে পাঁচজন বিএনপির আটক নেতাকর্মী কারাগারে মারা গেছেন।

বিচারাঙ্গন : চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিচারাঙ্গনও আলোচনায় চলে এসেছে। ২৮ অক্টোবরের আগে-পরে হঠাৎ করেই বিচারাঙ্গনকে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে উঠতে দেখা যায়। একটার পর একটা পুরনো মামলার রায় হচ্ছে। শুধু গত নভেম্বরেই ৩৩টি মামলায় ৬১৫ জনের সাজা হয়েছে (প্রথম আলো, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩)। আর গত সাড়ে চার মাসে ৭৩টি মামলায় মোট সাজা পেয়েছেন ১১৪৫ জন নেতাকর্মী (প্রথম আলো, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩)। এর মধ্যে গত ৭ নভেম্বরের পর থেকে ৪৭টি মামলায় ৮৫০ জন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের কারাদণ্ড হয়েছে (ডেইলি স্টার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩)। শাস্তিপ্রাপ্তদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। রায় হওয়া মামলাগুলো অধিকাংশই ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে যথাক্রমে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় করা হয়েছিল। যেগুলোর বেশির ভাগেরই বাদি পুলিশ। অধিকাংশ মামলাই ছিল বেআইনি সমাবেশ, গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেয়া, পুলিশের কাজে বাধা দেয়া ও হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ ইত্যাদি অভিযোগে। এমনকি কোনো একটি রায়ে একজন মৃত ব্যক্তিকেও সাজা দেয়া হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। রায়গুলো অত্যন্ত দ্রুততার সাথে দেয়া হয়েছে। অনেক মামলার বাদি এবং সাক্ষী উভয়ই ছিল পুলিশ। বেশির ভাগ রায়ে কারাদণ্ড হয়েছে দুই থেকে তিন বছর করে। বিধি মোতাবেক দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্বাচনে দাঁড়ানো যায় না। আদালতের রায় শিরোধার্য। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। আইন অন্ধ এবং রোবটিক। কিন্তু যারা এই আইন অনুশীলন করেন তারা নিশ্চয়ই নির্মোহভাবে বিবেক দিয়ে বিচার করে রায় দিয়ে থাকেন। জানা যায়, রাতের বেলায়ও আদালত বসিয়ে আইনের অনুশীলন করা হয়েছে! মামলার বাদি, সাক্ষী, মামলার প্রকৃতি, বিবাদির রাজনৈতিক পরিচয়, মামলা পরিচালনার ক্ষণ, পরিবেশ পরিস্থিতি ইত্যাদি তারা নিশ্চয়ই বিবেচনায় রেখেছেন। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম লিখেছেন, “Law is no longer a source of protection for the citizens, but a source of fear and oppression. Today, anybody can be implicated in any sort of case at any time and under any pretext - the police being the arbiter” (ডেইলি স্টার, ১ ডিসেম্বর ২০২৩)।

পররাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ : আমাদের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশে^র হস্তক্ষেপের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে দেখা গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে চীন ও ভারতের পরোক্ষ হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। কিছু দিন আগে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, তিনি ভারতে গিয়ে অনুরোধ করে এসেছেন তারা যেন বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে যা যা করা দরকার সবই করে। ইতোমধ্যে ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তার প্রভাব ধরে রাখতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা ধরে নেয় যে, বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারলেই চীনবান্ধব বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কাজেই মার্কিনিরা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত তৎপর হয়ে ওঠে। অন্য দিকে মার্কিন বলয় থেকে বাংলাদেশকে দূরে রাখার জন্য চীন ও রাশিয়াও সক্রিয় হয়। চীন বর্তমান সরকারের পাশে থাকার সাহস জোগালেও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কঠোর বক্তব্য দিচ্ছে রাশিয়া। আর ভারত প্রকাশ্যে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের পাশে থেকে তাদেরকে সাহস জোগাচ্ছে। এরই মধ্যে আমাদের পররাষ্ট্রসচিব ভারতে গিয়ে বিশে^র ৯০টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফিং দিয়ে এসেছেন। এটি ছিল এক নজিরবিহীন কূটনৈতিক পদক্ষেপ। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে অন্য দেশগুলোকে এভাবে জানিয়ে আসাটা কতটুকু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সামঞ্জাস্যশীল তা ভাবার বিষয়।

এখন প্রশ্ন হলো, কেমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমরা সৃষ্টি করেছি। আমাদের পরবর্তী বংশধরদের কেমন দেশ ও রাজনীতি আমরা হস্তান্তর করতে যাচ্ছি। আমরা কি শুধু ক্ষমতায় থাকতে বা ক্ষমতায় যেতে, নাকি দেশের জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি করি? তাহলে কেন আমরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যুদ্ধের ময়দানের শত্রুর মতো বিনাশ করতে চাচ্ছি? ক্ষমতা, রাষ্ট্রযন্ত্র, শক্তি সবই কি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা যায়? আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিভিন্ন এজেন্সি, বিচারব্যবস্থা, কূটনৈতিক সুবিধা ইত্যাদি সবই আমরা নির্দ্বিধায় ব্যবহার করছি শুধু নির্বাচনের ফসল ঘরে তোলার জন্য! জনাব মাহফুজ আনাম তাই প্রশ্ন তুলেছেন, “With the lower legal tier compromised, the bureaucracy more loyal than the king, the police looking more like a political party, and every government structure - from top to the lowest tier - politicised, how will we run the country with any semblance of governance”? (ডেইলি স্টার, ১ ডিসেম্বর ২০২৩)।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement