২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আজমিরের পথে

আজমিরের পথে। - ছবি : সংগৃহীত

সূর্যাস্তের আগেই আমরা দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছি। এক সময়কার ‘পালাম’ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বর্তমানে ‘ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নামে পরিচিত। বিমানবন্দরটির সংক্ষিপ্ত নাম ‘আইজিআইএ’। আইজিআইএর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমরা যখন বের হই, তখন সন্ধ্যা পার হয়ে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে। শুধু রাতটুকু দিল্লি কাটাব। ভোর ৭টার বিমানে ওঠার জন্য ভোর ৫টার মধ্যেই আবার আসতে হবে আইজিআইএতে। আইজিআইএতে আগে থেকেই পর্যটনের গাড়ি প্রস্তুত থাকার কথা! তাই আমরা বিমানবন্দরের বাইরে রাস্তার এক পাশে লাগেজপত্র নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় দু’জন লোক এসে আমাদের পরিচয় জানার পর নিজেদের পর্যটনের ড্রাইভার পরিচয় দেয়। আমাদের গাড়িতে ওঠার জন্য ইশারা করে। ‘এক গাড়িতে আমাদের হবে না’ বলতেই পাশে দাঁড়ানো গাইড সহাস্যে অপর গাড়িটি দেখিয়ে দেয়। কিছু লোক সে গাড়িতে ওঠতে শুরু করে।

দুটো গাড়ি জয়পুর হাইওয়ে ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে যাত্রা শুরু করে। রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। রাস্তার দু’পাশে বেশির ভাগ স্থানে ভ‚মি থেকে আড়াই তিন ফুট উঁচু রঙিন তারের নেট দিয়ে ফেন্সি করা হয়েছে। নেটগুলো রাস্তার ‘নিরাপত্তা’ কিংবা ‘সৌন্দর্য বৃদ্ধি’ কি উদ্দেশ্যে টানানো হয়েছে জানতে পারিনি। আমি যে গাড়িতে ওঠেছি সে গাড়ির ড্রাইভার মুসলমান। ড্রাইভারের সামনে ছোট গোল একটি মনোগ্রাম ঝুলছে। মনোগ্রামটার এক পৃষ্ঠে ‘আল্লাহ’ আর অপর পৃষ্ঠে ‘মুহাম্মদ’ নাম ক্যালিওগ্রাফি করা। গাড়িতে বসে কথা হয় ড্রাইভারের সাথে-
-ক্যায়া আপ মুসলমান হ্যায়?
-হ্যা, ম্যায় মুসলমান হুঁ।
-আভি ইন্ডিয়া মে মুসলমান ভাইলোগ কিস হালমে হ্যা?
-আচ্ছা হাল মে হ্যায়।
-ইস দেশমে মুসলমান কিতনা হ্যায়?
-২০ শতাংশ।
-যাব বাবরি মসজিদ তোড় গ্যায়া উস ওয়াক্ত আপ কাহা কিস হালমে থা?
-আপনা ঘর মে থা। লেকিন বহুত জারি হুয়ি থি।
জয়পুর হাইওয়ে ধরে গাড়ি চলছে তো চলছে । যখনই ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করি,
-ভাই আর কতদূর যেতে হবে? তখনই সে উত্তর দেয়- উয়াহা থোরা সামনে।
‘উয়াহা থোরা সামনে’ কথাটি তিন-চার বার বলার পর, সিরিয়াসলি জানতে চাই,
-বিমান বন্দর থেকে হোটেলের দূরত্ব কতটুকু?
-থার্টি ফাইভ কিলোমিটারসে থোরা য্যায়াদা হোগি।

‘থোরা য্যায়াদা হোগি’ বলতে ২০ কিলোমিটারও বোঝায়, আবার ২০ গজও বোঝায়। ওরা সব সময় কথার মধ্যে ফাঁক রাখে।

ধরে নিলাম হোটেলের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। যেখানে পৌঁছতে লাগবে রাত ১০টা। খাওয়া-দাওয়াসহ আপ্যায়ন আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে শুতে পারব ১২টায়। ঘুম থেকে ওঠতে হবে রাত ৩টায়। মাত্র তিন ঘণ্টা শোয়ার বিনিময়ে ২৪ ঘণ্টা হোটেল ভাড়া দেয়া প্রথম বোকামি।

দ্বিতীয় বোকামি- দিল্লি থেকে জয়পুরের দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার। বিমানবন্দর থেকে আমাদের হোটেলে আসা-যাওয়া প্রায় ১০০ কিলোমিটার। ১০০ কিলোমিটার বাদ দিলে বাকি থাকে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার। মোটরগাড়ি ১৬০ কিলোমিটার পৌঁছাতে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা লাগবে। এমতাবস্থায় আমরা যদি তিন ঘণ্টা হোটেলে না ওঠে একটু কষ্ট করে গাড়িতে বসে থাকি, তবে সকালের দিকে জয়পুর পৌঁছতে পারতাম। তাতে সামান্য অসুবিধা, অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকা, আর সুবিধা, ১৫ জনের বিমান ভাড়া ও হোটেল খরচ থেকে রক্ষা পাওয়া- যার পরিমাণ প্রায় সোয়া লাখ টাকা।

এ কথায় কাউন্টার জবাব হলো- আজকাল ডাক্তাররা রোগী দেখার সময় রোগ নির্ণয় করতে নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান, সেখানে রোগী যে টাকা পরিশোধ করে, কমিশন হিসেবে এর একটি অংশ ডাক্তাররাও পেয়ে থাকেন, যা রোগীর ভিজিটের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়; বরং অনেক বেশি। ট্রাভেলস প্রতিষ্ঠানগুলোও সেভাবে ট্যুরিস্টদের কাছ থেকে ট্যুর-বিষয়ক খরচাপাতি ছাড়াও হোটেল ও এয়ারলাইন থেকে কমিশন পেয়ে থাকে। যার পরিমাণ হেলাফেলার মতো নয়। ট্যুরিস্টদের অতিরিক্ত ব্যয়ের ১০ শতাংশ পেলেও যথেষ্ট।

২৫ টাকা অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া লাগিয়ে যদি পাঁচ টাকা কমিশন বেশি পাওয়া যায়, তবে তারা সেটিও করবে। ট্যুরিস্ট রাতে ক’ঘণ্টা ঘুমাল সেটি হিসাব নয়- হিসাব হলো একজন ট্যুরিস্টকে হোটেলে পিঠ লাগানোসহ সময়মতো জয়পুরের বিমান ধরাতে পারল কি না।

রাত সাড়ে ১০টায় আমরা হোটেল হেরিটেজ ভিলেজে পৌঁছি। হোটেল হেরিটেজ ভিলেজকে দূর থেকে একটি শ্বেতবর্ণের সুরম্য মসজিদের মতো মনে হয়। দ্বিতল মসজিদ আকৃতির হোটেলের ওপরে ছোট-বড় ডজনখানেক গম্বুজ রয়েছে। হোটেলের নামটিও সুরম্য। ‘ঐবৎরঃধমব ঠরষষধমব’ চারটি দ্বিতল ভবন। নাম মহল। একাধিক বেডযুক্ত ৮২ কক্ষবিশিষ্ট চারটি মহল চারদিকে অবস্থিত। এখানে আউটডোর গেমস যেমন- বেডমিন্টন, টেনিস, বাস্কেট বল, ক্রিকেট ও ইনডোর গেমস যেমন- বিলিয়ার্ড, মিউজিক, পার্টি গেমসের ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়াও শিশুদের জন্য আছে পৃথক খেলার মাঠ। যে দিকে চোখ যায় সেদিকে সবুজ, সাদা, লাল আর হলুদের সমারোহ। সবুজ ঘন পাতাযুক্ত গাছের পাতা ছেঁটে নানান আকারে রূপান্তর করা হয়েছে। নানা বর্ণের ফুলের মধ্যে গাঁদা ফুলের পরিমাণই বেশি। অনুমান ৫০ একর এলাকাজুড়ে ভিলেজটির মাঝখানে রয়েছে প্রকাণ্ড এক সুইমিংপুল। আমাদের সঙ্গীয় ক্ষুদে ট্যুরিস্টদের ধরে রাখতে পারি না, রাতেই তারা নেমে পড়তে চায় সুইমিংপুলে।

শরীর ধোয়ামোছা করে সাড়ে ১২টায় শুতে যাওয়ার পর ৩টা বাজতে না বাজতেই ইন্টারকম বাজতে শুরু করে। আড়াই ঘণ্টার সুখনিদ্রা ছেড়ে ঝিমুতে ঝিমুতে ওঠে আসি রিসিপশন কক্ষে। রিসিপশনে এসে দেখি ১৫-২০ জন লোক। প্রত্যেকের সাথে লাগেজপত্র। গলায় গাঁদা ফুলের মালা। আমরা যেসব রুম ছেড়ে দিয়ে এসেছি- সেসব রুমেই তারা এখন ঢুকবে। এখানেও বড় রকমের একটি শুভঙ্করের ফাঁক রয়েছে। সে ফাঁক দিয়ে আমাদের ছেড়ে আসা সাতটি কক্ষ অনায়াসে ১৪ কক্ষে রূপান্তর হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমাদের ভাড়াকৃত সময়ের মধ্যেই অন্য লোক অবস্থান করে গেল। ঘুম থেকে ডেকে তোলার কারণে ত্যক্ত-বিরক্ত বাচ্চাগুলোও বলতে শুরু করে- এ ক’ঘণ্টা গাড়িতে কাটানোই ভালো ছিল, ঘুমুতে ঘুমুতে জয়পুর পৌঁছাতে পারতাম।
ভোর সাড়ে ৫টায় ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে পৌঁছি। ভাবলাম বিচ্ছিন্নতাবাদী বাছাই করতে আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে- চলবে দেড় দু’ঘণ্টা। কিন্তু না, একমাত্র শরীর ও সঙ্গীয় ব্যাগ ছাড়া আর কোনো পরীক্ষাই করা হলো না। ডমেস্টিক বিমানে পাসপোর্ট ও ইম্বারকেশন কার্ড পরীক্ষা প্রযোজ্য নয়। গাড়ি করে জেট এয়ারওয়েজের বিমানে পৌঁছার সময় সূর্যোদয় শুরু হয়েছে। জেট এয়ারওয়েজের ছোট-বড় ৪০টির মতো বিমানবন্দরের একপাশে দাঁড়ানো দেখলাম।

উড্ডয়নকালীন সিটবেল্ট লাগিয়ে সোজা হতে না হতে অবতরণকালীন সিটবেল্ট লাগিয়ে নেয়ার জন্য ঘোষণা শুরু হয়ে যায়। মাত্র ৩৫ মিনিটে আমরা দিল্লি থেকে জয়পুর পৌঁছি। এর মধ্যেই কয়েক প্রকারের চকলেটসহ ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়েছি।

আমার ধারণা ছিল, জয়পুরের কাছেই আজমির। টেক্সির ভাড়া শুনে ধারণা বদলে গেল। ছয় আসনবিশিষ্ট গাড়ি প্রতিটি আড়াই হাজার টাকা এবং ১০ আসনবিশিষ্ট সুমুকার সাড়ে তিন হাজার টাকা। কয়েকজন বুদ্ধি দিলো- এখান থেকে স্টেশনে গিয়ে গাড়ি ভাড়া করলে আরো কম টাকায় পাওয়া যাবে। আমরা তাই করি। ৩০০ টাকা দিয়ে দুটো গাড়ি নিয়ে স্টেশনে চলে যাই। সেখানে গিয়েও বড় বেশি লাভ হয়নি। ছয় আসনবিশিষ্ট দু’টি গাড়ি নিয়ে রওনা হই আজমিরের উদ্দেশে। জয়পুর থেকে ১৩৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে আজমির। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর। আর হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কাছে পবিত্র স্থান আজমির। রাজস্থানের আয়তন তিন লাখ ৪২ হাজার ২৩৯ বর্গকিলোমিটার। দু’টি বাংলাদেশের আয়তনের চেয়েও বেশি।

রাজস্থান রাজপুত জাতির দেশ। বলা হয় রাজপুতরা রামায়ণ ও মহাভারতের পৌরাণিক যুগের সূর্য ও চন্দ্রবংশের বংশধর। শৌর্যবীর্যের প্রতীক রাজপুত। ওদের গোষ্ঠী প্রধানরা ভিন্ন ভিন্ন অংশে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করত। অষ্টম শতকের দিকে কিছু কিছু অঞ্চল মুসলিম দখলে যায়। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য রাজস্থান। রাজস্থানের ভাঙাগড়া ইতিহাসের মতো এর প্রকৃতিতেও নানারূপ বৈচিত্র্য। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে রয়েছে থর মরুভ‚মি। আর মধ্য অঞ্চলে আরাবল্লি পর্বতমালা। এই দুয়ের মাঝখানে উঁচু-নিচু পার্বত্য মালভ‚মি ও অসমতল অঞ্চল নিয়ে রাজস্থান। পর্যটকরা একদিকে মরুভ‚মি, রাজপুত জাতির বীরত্ব চিহ্ন, অপরদিকে দুর্গনগরী দেখার জন্য এখানে ভিড় করে ।

জয়পুরের অপর নাম পিংসিটি। পিংসিটির অর্থ গোলাপি প্রাসাদ। আরাবল্লি পর্বতের অসমতলে তিন দিক ধূসর পাহাড়ঘেরা নগরী জয়পুর। ১৭২৭ সালে মহারাজ সোয়াই জয়সিংহ এ নগর নির্মাণ করেন। রাজা নিজেই এর স্থপতি। তার সাথে ছিলেন বাঙালি স্থপতি বিদ্যাধর ভট্টাচার্য। পুরোনো রাজধানী, নগরীর চারদিক প্রাচীরে ঘেরা। নগরের আট দিকে আটটি বিশাল তোরণ। ভেতরে প্রশস্ত সোজা রাস্তা, বাগিচা ও রাজপ্রাসাদ। নিপুণ পরিকল্পনা রাজা জয়সিংহ ও বিদ্যাধরের। নগরের নামও হয়েছে রাজার নামে আর নগরীর অভ্যন্তরে গোলাপি পাথরের বাড়িঘর ছবির মতো সুন্দর। এর রূপে মুগ্ধ হয়ে ইংরেজরা নাম দিয়েছে পিংসিটি। আজো পিংসিটি নামেই পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য। পিংসিটির ‘হাওয়া মহল’ দেখার জন্য ট্যুরিস্টদের ক্ষণিক থামতে হয়।

সামনে মরুভূমি। এর আলামত হিসেবে রাস্তার ধারে ও আশপাশে মরুজাহাজ উট দেখা যায়। মরুজাহাজের পাশাপাশি আর যেটি চোখে পড়ার মতো তা হলো- মেয়েরা সমানে হোন্ডা ও সাইকেল চালাচ্ছে। তুলনা করতে গেলে পুরুষদের চেয়ে মেয়ে আরোহীর সংখ্যা বেশি বৈ কম হবে না। ৪০ মিনিট পার হতে না হতে শুরু হয় মরুভ‚মি। বামদিকে যতদূর চোখ যায় মরু আর মরু। ডানদিকে মাঝে মধ্যে পাহাড় আর মরু। তেঁতুল পাতার মতো কিচিকিচি পাতাযুক্ত লম্বা কাঁটাবিশিষ্ট এক প্রকার গাছ, এর নাম কারো মতে মরুবৃক্ষ, আবার কারো মতে বাবলকাঁটা। নেপালের পাহাড়ের সাথে থর মরুপাহাড়ের পার্থক্য রয়েছে। নেপালের কোথাও প্রাণহীন পাহাড় নেই আর থর মরু এলাকায় সজীব কোনো পাহাড় নেই। সবুজ বৃক্ষপূর্ণ ও ঝরনাযুক্ত পাহাড়কে সজীব পাহাড় বলে। প্রাণহীন ধূসর বর্ণের পাহাড় দেখলেই মন রুক্ষ ও বিষণ্ন হয়ে ওঠে। পরিচ্ছন্ন ও সুপ্রশস্ত রাস্তা। রাস্তার দু’পাশে লোহার তার দিয়ে তৈরি নেটের বেষ্টনী। রাস্তার মাঝখানে মজবুত ডিভাইডার। কতক্ষণ পর পর টোলপ্লাজা। ১০-১৫ কিলোমিটার পরপর পেট্রোলপাম্প। পাম্পের পাশেই খাবারের দোকান টি-স্টল। এ ছাড়া জনবসতি তেমন একটা নেই বললেই চলে।

সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাথরের মার্কেট। জয়পুর থেকে আজমিরের পথে আছে বেশ কয়েকটি পাথরের মার্কেট। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকাণ্ড পাথরগুলো কাটাকাটি করে পছন্দমতো আকার-আকৃতিতে রূপান্তর করা হচ্ছে। শ্বেত, মর্মর পাথর, কৃষ্ণপাথর, নীলা পাথর, গোমেদ পাথর প্রভৃতি শত প্রকারের পাথর পাওয়া যায় এখানে। দোকানের পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে শত টন ওজনের পাথর থেকে এক কেজি ওজনের পাথর পর্যন্ত। কাঠের দোকানে গিয়ে ফরমায়েশ দিলে যেমন ইচ্ছামতো সাইজের কাঠ পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি পাথরের দোকানে এসে ফরমায়েশ দিয়ে ইচ্ছামতো আকারের পাথর পাওয়া যায়। অধিকাংশ বাড়ি ও বাউন্ডারি দেয়াল পাথর দিয়ে তৈরি। পিংসিটি থেকে শুরু করে আজমির পর্যন্ত প্রতিটি বাড়ির ফ্লোরই পাথর বিছানো। যেসব পাথর ভাঙবে না, ফাটবে না, হাজার বছরে ক্ষয় হবে না এবং রঙও বদলাবে না সামান্যতম। এসব পাথর বেশি পাওয়া যায় রাজস্থানে।

দুপুরের আগেই আমরা আজমির পৌঁছি। আজমির পৌঁছে দেখা দেয় নতুন সমস্যা। সমস্যা হলো- ভালো হোটেল না পাওয়া। মাজারের আশপাশের অধিকাংশ হোটেলই, ‘উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট’। দরগার কাছেই একটি বড় হোটেল নাম ‘শুভ তাজ’। বাইরের সাইনবোর্ড লেখা রয়েছে গড়ফবৎহ ধহফ ধরৎ পড়হফরঃরড়হ হোটেলে পাঁচ রুমের বেশি খালি নেই। আমাদের কমপক্ষে ছয়টি রুম দরকার। একটি রুমে অতিরিক্ত দু’টি বেড ফেলে দেয়ার শর্তে দু’রাতের জন্য হোটেল শুভ তাজেই লাগেজপত্র নামাতে শুরু করি। হোটেল কক্ষে ঢুকে এর অব্যবস্থা দেখে বুঝতে পারলাম, এলাকাটিই সাইনবোর্ডসর্বস্ব ব্যবসায় ।

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
E-mail : adv.zainulabedin@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement